বাবা ওটোর কোলে আনে ফ্রাঙ্ক।
অভিবাসী আইনের জটিলতা এবং প্রতিকূল পরিস্থিতি— এই দুইয়ের সাঁড়াশি চাপে আমেরিকায় যাওয়া হয়ে ওঠেনি ওটো ফ্রাঙ্কের। দু’বার ব্যর্থ চেষ্টার পরে, আর কোনও উপায় না-দেখে, পরিবারকে নিয়ে গা ঢাকা দেন গোপন কুঠুরিতে। যে চোরা কুঠুরিতে থাকার সময়ে দু’বছর ধরে ডায়েরি লিখত ওটোর কিশোরী কন্যা— আনে। সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে এই তথ্য।
৭৬ বছর আগের কথা। ১৯৪২ সালের ৬ জুলাই নাৎসি বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে আমস্টারডামে এক বন্ধুর বাড়িতে লুকিয়ে পড়েন ওটোরা। তার এক বছর আগে, ১৯৪১ সালে বন্ধু নেথান স্ট্রাউসকে চিঠিতে ওটো লিখেছিলেন, ‘‘দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ভাবতে হচ্ছে আমাদের। এবং আমি যা দেখছি, আমাদের সামনে একমাত্র রাস্তা— আমেরিকা।’’
১৯৩৮ সালে নাৎসি জার্মানি থার্ড রাইখের অধীনে নিয়ে আসে চেকোস্লোভাকিয়া এবং অস্ট্রিয়াকে। সে বছরই ৯ নভেম্বর জার্মানি জুড়ে ব্যাপক হারে ইহুদি-ধরপাকড় করে হিটলার বাহিনী। ইতিহাসে সেই দিনটি ‘ভাঙা কাচের রাত’ বলে কুখ্যাত। সে দিন রক্ষা পেলেও ওটো বুঝতে পারেন, এ দেশে তাঁরা আর নিরাপদ নন। কিছু দিন বাদে নেদারল্যান্ডসের রটারডামের মার্কিন দূতাবাসে ভিসার আবেদন জমা দেন তিনি।
প্রথম দফায় ওটোদের আবেদন মঞ্জুর করেনি আমেরিকা। তাঁদের নাম ওঠে ‘ওয়েটিং লিস্টে’। হয়তো কয়েক মাস বাদে নাম উঠত। কিন্তু ১৯৪০-এর ১৪ মে বোমা ফেলে উড়িয়ে দেয় রটারডামের মার্কিন দূতাবাস জার্মানরা। ওটোদের আবেদনপত্রের সঙ্গে ছাই হয়ে যায় সেখানকার সব কাগজপত্র। বন্ধুকে লেখা চিঠিতে সেই কথা উল্লেখ করেছেন ওটো।
তবে গবেষকেরা বলছেন, মার্কিন দূতাবাসে বোমা না পড়লেও হয়তো মার্কিন ভিসা পাওয়া ওটোদের পরিবারের পক্ষে সহজ হত না। কারণ, ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পরই ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ মার্কিন ভিসার জন্য আবেদন করতে শুরু করেন। কিন্তু কোনও বছরই ত্রিশ হাজারের বেশি ভিসার অনুমোদন দিত না আমেরিকা। ফলে ওটোদের ভিসা পাওয়ার কোনও নিশ্চয়তা ছিল না।
১৯৪১ সালে ফের মার্কিন ভিসার জন্য আবেদন করার কথা ভাবতে শুরু করে ফ্রাঙ্ক পরিবার। কিন্তু তত দিনে ইউরোপের বিভিন্ন জার্মানি-অধিকৃত দেশে মার্কিন দূতাবাস বন্ধ করে দিয়েছে নাৎসিরা। ফলে ভিসা আবেদনের প্রক্রিয়া আর সম্পূর্ণ হয়নি। এই সময়ে কিউবায় যাওয়ার জন্যও ভিসার আবেদন করেছিলেন ওটোরা। কিন্তু সেই আবেদনও গ্রাহ্য হয়নি।
১৯৪২ সালে আমস্টারডামে এক বন্ধুর বাড়িতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে লুকোন ওটো। দু’বছর ছিলেন সেখানেই। ১৯৪৪-এর ৪ অগস্ট নাৎসি বাহিনী তাঁদের খুঁজে পেয়ে আউশভিৎস কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে চালান করে দেন। ওটো ছাড়া পরিবারের সকলেই মারা যান নাৎসিদের হাতে। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে আমস্টারডামে ফিরে আনের ডায়েরি খুঁজে পান বাবা। প্রকাশের পরে যেটি পৃথিবীর সব থেকে বেশি বিক্রি হওয়া বইয়ের অন্যতম।
মার্কিন ভিসা পেলে হলোকস্টের সেই দিনলিপি লিখতে হতো না কিশোরী আনেকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy