মৃত্যুর ক্লাস। সোশ্যাল মিডিয়া
এই আমার ইচ্ছাপত্র লিখছি আমি। নতুন পোশাক পরিয়ে আমার ছবি তোলা হল ‘শেষ’ বার। আমি ঢুকছি লম্বা কাঠের বাক্সটায়। নেমে আসছে ডালা। এখন শুয়ে থাকার পালা। শুধু আমার নয়, আমার ডাইনে-বাঁয়ে আরও যারা শবাধারে ঢুকছে, তাদেরও।
দশ মিনিট পরে কফিন খুলবে। মৃত্যু ছুঁয়ে আমি ফিরব জীবনে। হয়তো নিজের শেষ মুহূর্তগুলো দেখার পরে জীবনের গুরুত্ব অনেক বেড়ে যাবে আমার কাছে। জীবন যে অনন্ত নয়!
দক্ষিণ কোরিয়ার সোলে হিয়োওয়ান হিলিং সেন্টারে এ ভাবেই নিজেদের মৃত্যু দেখেন আঠাশ থেকে আশি। ২০১২ থেকে ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষ মৃত্যুর মহড়া দিয়েছেন সেখানে। ইচ্ছাপত্র, ছবি, কফিন— প্রতিটা ধাপ পেরিয়েছেন। পেরোচ্ছেন আরও অনেকে। বাঁচার আশায়।
সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘হেমলক সোসাইটি’ মনে পড়ে? সেই ছবিতে আত্মহত্যা শেখানোর স্কুলটার স্লোগান ছিল, ‘মরবে মরো, ছড়িয়ো না’। সোলের এই কেন্দ্রের স্লোগান, ‘ভাল ভাবে মৃত্যু’। সৃজিতের ছবিতে
আনন্দ কর আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষদের নিয়ে আসতেন তাঁর ‘স্কুলে’। বলতেন, নিজেকে খুন করতে গেলে পদ্ধতিগুলো শিখে করাটাই ভাল। কিন্তু ক্রমাগত মৃত্যুর ‘ক্লাস’ করতে করতে মানুষটা এক সময়ে ভালবাসতে শুরু করত জীবনকে, প্রেমেও পড়ে যেত।
সোলের ‘আনন্দ’ হলেন জিয়ং ইয়ং-মুন। হিলিং সেন্টারের প্রধান জানালেন, তাঁদের লক্ষ্য মানুষকে জীবনের মর্ম বোঝানো, ক্ষমাশীল হতে শেখানো, পরিবার আর বন্ধুদের কাছে নতুন করে ফিরিয়ে দেওয়া। আত্মহত্যার কথা ভাবতে থাকা বেশ কিছু মানুষ সিদ্ধান্ত বদলেছেন তাঁর ‘ক্লাস’ করে। জিয়ং বলছিলেন, ‘‘কোনও শেষকৃত্যে আপনজনেদের পুনর্মিলন দেখে মনে হত, বড্ড দেরি হয়ে গেল। ক্ষমা চেয়ে, সব কিছু মিটমাট করে বাকি জীবনটা তো আনন্দে কাটানোই যায়।’’
বেহাল অর্থনীতি আর বেকারত্ব দক্ষিণ কোরিয়ার যুব সম্প্রদায়ের সামনে বড় বাধা। ছাত্র চো জিন-কিউয়ের দুশ্চিন্তা ছিল চাকরি নিয়ে। কিন্তু মিনিট দশেক কফিনে শুয়ে ঠিক করেছেন, চুলোয় যাক চাকরি। ব্যবসা করবেন। ২৮ বছরের জিন-কিউয়ের ‘সহপাঠী’ ৭৫ বছরের চো-জায়ে-হি। তিনিও বলছেন, ‘‘মৃত্যুকে অনুভব করলে জীবন-দর্শনটাই বদলে যায়।’’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৬ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি ১ লক্ষ নাগরিকের মধ্যে আত্মহত্যার হার ছিল ২০.২% — সারা বিশ্বের নিরিখে (১০.৫৩%) প্রায় দ্বিগুণ। ওই পরিসংখ্যানটাই জিয়ংয়ের চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, ‘‘আমি চলে গেলে কেউ তো কাঁদবে। আনন্দটাই সত্যি। আর কিছু নয়।’’
তাই সহজ মন্ত্র তাঁর। ‘‘মরো। মরা প্র্যাকটিস করো।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy