Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

আগুন লাগলেও বাজেনি অ্যালার্ম, পুড়ে ছাই ৬৪

শপিং মলের আগুন ইতিমধ্যেই কেড়ে নিয়েছে ৬৪টি প্রাণ। মৃত-জখমদের মধ্যে শিশুদের মুখই বেশি। ১০ জনের এখনও কোনও খোঁজ নেই।

আগ্রাসী: শপিং মল ঢেকেছে ধোঁয়ায়। সাইবেরিয়ার কেমেরোভো শহরে। রয়টার্স

আগ্রাসী: শপিং মল ঢেকেছে ধোঁয়ায়। সাইবেরিয়ার কেমেরোভো শহরে। রয়টার্স

সংবাদ সংস্থা
মস্কো শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৮ ০৩:১৪
Share: Save:

ছুটির মরসুম। বাচ্চাদের নিয়ে সদলবলে অনেকে পৌঁছে গিয়েছিলেন সাইবেরিয়ার কয়লা খনির শহর কেমেরোভোর শপিং মলটিতে। সেখানে গিয়ে যে প্রিয়জনকে হারাতে হবে, ভাবেননি কেউই। শপিং মলের আগুন ইতিমধ্যেই কেড়ে নিয়েছে ৬৪টি প্রাণ। মৃত-জখমদের মধ্যে শিশুদের মুখই বেশি। ১০ জনের এখনও কোনও খোঁজ নেই।

প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ‘উইন্টার চেরি মল’-এর উপর তলায় যখন আগুন লাগে, না বেজেছে ফায়ার অ্যালার্ম। না সেখানে হাজির হয়েছেন ওই বিপণির কোনও কর্মী। মস্কো থেকে হাজার তিনেক কিলোমিটারে পূর্বে কেমেরোভো শহরের মল-এর মাল্টিপ্লেক্স, দোকান, খেলার জায়গা— কোনও অংশই তখন ফাঁকা ছিল না। তার মধ্যে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে গিয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়। প্রত্যক্ষদর্শী আনা জারেখনেভা বলেছেন, ‘‘সিনেমা হল-এর মধ্যে হঠাৎই এক মহিলা চেঁচাতে শুরু করেন, ‘আগুন! আগুন!’ হুড়োহুড়ি পড়ে যায়, সবাই ছুটতে থাকে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘ওই হুড়োহুড়ির মধ্যে কোনও আলো পর্যন্ত আমাদের দেখানো হয়নি। কোনও ফায়ার অ্যালার্মও বাজেনি। দোতলায় পৌঁছনোর পরে অ্যালার্ম শোনা যায়।’’

রুশ তদন্তকারী কমিটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, দু’টি সিনেমা হল-এর মাথায় ছাদ ভেঙে পড়ে।’ ফেসবুক-টুইটারে পোস্ট করা ভিডিওয় দেখা গিয়েছে, কী ভাবে প্রাণ বাঁচাতে লোকজন জানলা থেকে ঝাঁপ দিচ্ছেন। এগারো বছরের এক কিশোরের বাবা-মা ভাই আগুনে ছাই হয়ে গিয়েছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভেরোনিকা বলেছেন, পাঁচ তলা থেকে লাফ দিয়েছিল কিশোরটি। বহু জায়গায় চোট নিয়ে এখন হাসপাতালে সে।

ঠিক কী ভাবে আগুন লাগল, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। মল কর্তৃপক্ষ তদন্ত শুরু করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার জনকে আটক করা হয়েছে। মল-এর প্রধান অফিসারকেও আটক করে জেরা করা হচ্ছে। আটক হয়েছেন উইন্টার চেরি-র মালিকও। রবিবার স্থানীয় সময় বিকেল পাঁচটা নাগাদ আগুন লেগেছিল বলে জানান তদন্তকারীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নামাতে হয়েছে আপৎকালীন বিভাগের ৬৬০ জন কর্মীকে। সোমবারও ওই মল থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখেছেন উদ্ধারকারীরা। মলের যে সব অংশ পুড়ে খাক হয়ে ভেঙে পড়ার মুখে, সেগুলো থেকে এখনও ধোঁয়া বেরোচ্ছে। ধ্বংসস্তূপ থেকে এখনও উদ্ধার করা হচ্ছে অগ্নিদগ্ধ দেহ। বেরোতে না পেরে মাল্টিপ্লেক্স-এর মধ্যে থেকে দমবন্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন অনেকে।

কেমেরোভোর ডেপুটি মেয়র ভ্লাদিমির চের্নভ বলেছেন, ‘‘সম্ভবত বাচ্চাদের খেলাঘর থেকেই আগুন ছ়ড়িয়েছে। কোনও বাচ্চার হাতে লাইটার থেকে ফোম-রাবার জ্বলে ওঠে। তার পর বিদ্যুৎ গতিতে ছড়িয়ে পড়ে আগুন।’’ তবে ঘটনাস্থল ঘুরে স্থানীয় এক টিভি চ্যানেলের আবার দাবি, কোনও বৈদ্যুতিক ত্রুটির জেরে আগুন ছড়িয়েছে। শিশু অধিকার রক্ষার রুশ কমিশনার আনা কুজনেৎসোভা গোটা ঘটনায় শপিং মল কর্তৃপক্ষের গাফিলতিকেই দুষেছেন। তাঁর দাবি, বাকি মলগুলোর আপৎকালীন ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা দরকার। উইন্টার চেরির একটি অংশে পোষ্যপ্রাণীদের রাখার জায়গা ছিল। মারা গিয়েছে সব প্রাণীই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE