আউং সান সু চি। রয়টার্সের তোলা ফাইল চিত্র।
তাঁর নীরবতা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল এক সময়ে। তখন বলেছিলেন, অশান্তির আঁচ ছড়াতে চান না। রোহিঙ্গাদের উপর হওয়া অত্যাচার নিয়ে এত দিন পরে সাংবাদিকদের কাছে মুখ খুললেন মায়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা আউং সান সু চি। জানালেন, সম্প্রতি রোহিঙ্গা মৃত্যু নিয়ে দেশের সেনা যা স্বীকার করেছে তা গোটা দেশের জন্য আক্ষরিক অর্থে এক সদর্থক পদক্ষেপ।
মায়ানমার সেনা গত বুধবার কবুল করেছে, গত বছর সেপ্টেম্বরের ২ তারিখ সেনা বাহিনীর কিছু সদস্য আর বৌদ্ধ গ্রামবাসীরা মিলে উত্তর রাখাইন প্রদেশের ইন ডিন গ্রামে বন্দি করে রাখা ১০ জন রোহিঙ্গা মুসলিমকে মেরে ফেলেছিল। চটজলদি কবর খুঁড়ে সেই মৃতদেহগুলিকে চাপা দেওয়া হয়। সেনাবাহিনী আশ্বাস দেয়, বাহিনীর যে সদস্যরা ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে সেনার দাবি, গত বছর অগস্টে এরাই বাহিনীর উপরে হামলা চালিয়েছিল। ওই দশ জনই ছিল মুসলিম জঙ্গি গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)-র সদস্য। অভিযোগ, রোহিঙ্গা জঙ্গিদের ওই হামলার ঠিক পরপরই সেনারা রাখাইনে তাণ্ডব শুরু করে। প্রাণভয়ে প্রায় সাড়ে ছ’লক্ষের বেশি রোহিঙ্গা পড়শি দেশ বাংলাদেশে ও ভারতে আশ্রয় নেন।
গত কাল রাজধানী নেপিদওয়ে জাপানের বিদেশমন্ত্রী টারো কানোর সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করছিলেন সু চি। তখনই সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে সু চি বলেন, ‘‘মায়ানমার সেনার এই স্বীকারোক্তিকে সদর্থক পদক্ষেপ হিসেবেই ধরা উচিত।’’ পরে ফেসবুকে সু চি লেখেন, ‘‘এটা আমাদের দেশের এক নয়া পদক্ষেপ। আইনের শাসন বজায় রাখার দায়িত্ব রয়েছে রাষ্ট্রের। সেই দায়িত্ব নেওয়ারই প্রথম সদর্থক পদক্ষেপ এটি।’’
আরসা জঙ্গি গোষ্ঠী মায়ানমার সেনার স্বীকারোক্তিকে স্বাগত জানালেও টুইটারে এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, যে ১০ জন রোহিঙ্গাকে সে দিন সেনা মেরেছে বলে স্বীকার করেছে, তাঁরা আসলে নিরীহ মানুষ। জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁদের কোনও দিনই সম্পর্ক ছিল না।
গত সেপ্টেম্বর থেকে রোহিঙ্গাদের উপর মায়ানমার সেনার অত্যাচার শুরু হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন বলতে শুরু করেছিল, সু চি-র দলকে সরিয়ে মায়ানমারে কার্যত ফের সেনা শাসন কায়েম হয়েয়েছে। সু চি-র কাছে প্রশ্ন ছিল, দেশে ফের সেনা শাসন শুরু হলে এত লক্ষ রোহিঙ্গা পরিবার দেশে ফিরে নিজেদের সুরক্ষিত মনে করবে কী করে? সু চি জানিয়েছেন, ওই রোহিঙ্গাদের ভয়ের কোনও কারণ নেই। তাঁর কথায়, ‘‘এখন তো দেশে আর এই ধরনের ঘটনা ঘটছে না। যা যা নিয়ে কথা হচ্ছে, সে সব তদন্তের অংশ মাত্র। অতীতে যা হয়েছে, তা যাতে আর না ঘটে সে জন্যই তো তদন্ত চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy