পাকিস্তানের সামরিক আদালতে কুলভূষণ যাদবকে যখন মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হল, জানতাম এই রায়ে ন্যায়বিচার হয়নি। আশা ছিল, আন্তর্জাতিক আদালতের রায় ভারতের পক্ষেই যাবে। বুধবার শেষ পর্যন্ত তা-ই হল।
এই রায় সব দিক থেকেই ভারতের জয়। কুলভূষণের জয়। আমাদের মতো প্রত্যেক ভারতবাসীর জয়, যাঁরা কখনও না কখনও পাকিস্তানের ভ্রান্ত নীতির জন্য প্রিয়জনকে হারিয়েছেন।
পাকিস্তানে যখন কুলভূষণের সঙ্গে ওঁর স্ত্রী এবং মা দেখা করতে গিয়েছিলেন, তখন তাঁদের যথেষ্ট হেনস্থা করা হয়েছিল। আমার ভাই সর্বজিতের সঙ্গে দেখা করতে আমি যখন পাকিস্তানে গিয়েছিলাম,
একই রকম ব্যবহার করা হয়েছিল আমাদের সঙ্গেও।
আন্তর্জাতিক আদালতে ভারত দৃঢ়তার সঙ্গে সওয়াল করেছে বলেই কুলভূষণ নিজের বিচারের অধিকার আদায় করে নিতে পারলেন। বার বার মনে হয়, তৎকালীন ভারত সরকার আমার পাশে দাঁড়ালে ভাইকে
ফেরাতে পারতাম। আমি যখন সর্বজিতের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলাম, বলা হয়েছিল, চাইলে পরিবারের পক্ষ থেকে সেখানে যেতে পারি। কিন্তু সরকার কিছু করতে পারবে না। আমার সেই ক্ষমতা ছিল না। টাকা নেই, লোকবল নেই, উচ্চ মহলে যোগাযোগ নেই, কী করে ওখানে যাব? দ্য হেগের আদালতে যেতে না পারার এই আফশোস কখনও যাবে না। কুলভূষণের নৈতিক জয়ে যে আনন্দ করছি আমরা, সর্বজিৎকে ফেরাতে পারলে সে আনন্দ দ্বিগুণ হতে পারত!
বুধবার শুনলাম, এবার কুলভূষণ পাকিস্তানে মামলার বিচার চলাকালীন নিজের দেশের দূতাবাসকে পাশে পাবেন। নিজস্ব আইনজীবী পাবেন। খুব ভাল। অন্তত আত্মপক্ষ রাখার সুযোগটুকু মানুষটি পাচ্ছেন। যে কোনও বিচার প্রক্রিয়ায় যা খুবই জরুরি ধাপ। আমার ভাইয়ের সময়ে সেটা সম্ভব হয়নি।
বুধবারের রায়ের পর পাকিস্তান সরকারের উপর চাপ তৈরি হবে নিঃসন্দেহে। আন্তর্জাতিক আদালতের রায় অমান্য করে কোনও অনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ থাকবে না তাদের। কারণ, তা হলে অনেক প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে। তাই পাকিস্তান খুব বুঝেশুনে কাজ করবে বলে আমার অন্তত এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে। কুলভূষণ নিরপরাধী প্রমাণিত হবেন কি না বা দেশে কবে ফিরতে পারবেন, সে সব এখনই বলা না গেলেও একটি বিষয়ে আমি নিশ্চিত। সর্বজিৎকে জেলে পিটিয়ে মেরে ফেলার মতো ঘটনা আর ঘটবে না।
কুলভূষণের পরিবারকে অভিনন্দন। অভিনন্দন জানাব এই সরকার এবং প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে।
আমি আমার ভাইটার মুখটা আর কখনও দেখতে পাব না জানি। তবে কুলভূষণের ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করব।
(অনুলিখন: চৈতালি বিশ্বাস)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy