Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কুয়েতে চাকরি খোয়ানোর ভয়ে বাঙালি ইঞ্জিনিয়াররা

সম্প্রতি কুয়েতে নিয়ম হয়েছে, বিদেশি ইঞ্জিনিয়ারদের বসবাস এবং কাজ করতে হলে সে দেশের ‘সোসাইটি অব ইঞ্জিনিয়ার্স’-এর থেকে ছাড়পত্র লাগবে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:৩১
Share: Save:

সিকি শতক ধরে কুয়েতেই বাস চন্দন চট্টোপাধ্যায়ের। কিন্তু এখন নিয়মের গেরোয় বিপাকে পড়েছেন এই বাঙালি কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। চাকরি খুইয়ে, পাততাড়ি গুটিয়ে দেশে ফিরতে হবে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র চন্দনবাবু। কুয়েতবাসী এ রাজ্যের প্রায় আড়াইশো ইঞ্জিনিয়ারের একই হাল। দেশের নিরিখে হিসেব করলে সংখ্যাটা আরও অনেক বেশি হবে।

সম্প্রতি কুয়েতে নিয়ম হয়েছে, বিদেশি ইঞ্জিনিয়ারদের বসবাস এবং কাজ করতে হলে সে দেশের ‘সোসাইটি অব ইঞ্জিনিয়ার্স’-এর থেকে ছাড়পত্র লাগবে। ওই সংস্থা আবার জানিয়েছে, ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারদের ক্ষেত্রে এ দেশের ‘ন্যাশনাল বোর্ড অব অ্যাক্রিডিটেশন’-এর (এনবিএ) শংসাপত্র পাওয়া কলেজের ডিগ্রি থাকতে হবে। না হলে কুয়েতে বসবাস এবং কাজের ছাড়পত্র তারা দেবে না। এতেই সঙ্কটে ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারেরা।

বস্তুত, কুয়েতের বেশির ভাগ ইঞ্জিনিয়ারই ভারতীয়। কিন্তু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়, আন্না বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন আইআইটি-র এখনও এনবিএ শংসাপত্র নেই। ইন্ডিয়া কাউন্সিল অব টেকনিক্যাল এডুকেশন (এআইসিটিই) ১৯৯৪ সালে এনবিএ তৈরি করে। দেশের প্রযুক্তি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির কোর্সের মান যাচাইয়ের জন্যই এটি তৈরি করা হয়। কিন্তু এই সংস্থার অনুমোদনকে প্রথম সারির প্রতিষ্ঠানগুলি গুরুত্ব দেয় না। শিক্ষা জগতের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই বলছেন, এটি এআইসিটিই-র অঙ্গ। তাই আলাদা গুরুত্ব পায় না। আবার এই অনুমোদন নিতে গেলে প্রচুর টাকাও দিতে হয়।

আচমকা নিয়ম জারি হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে কুয়েতবাসী এক বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার বলছেন, ‘‘ছেলেমেয়েরা কুয়েতে পড়ছে। হঠাৎ দেশে ফিরতে হলে ওদের ভবিষ্যৎ কী হবে?’’

কুয়েতে কর্মরত ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারেরা ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বিষয়টি জানিয়েছেন। দিল্লিতে বৈঠক হয়েছে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী প্রকাশ জাভরেকরের সঙ্গে। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এবং বিদেশপ্রতিমন্ত্রী বিজয়কুমার সিংহকেও জানানো হয়েছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী সমিতি শুক্রবার টুইটারে এই পরিস্থিতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়ের গোচরেও এনেছে।

যাদবপুরের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ডিন এবং ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য শনিবার জানান, যাদবপুরের ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সগুলি (এআইসিটিই) অনুমোদিত। মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের র‌্যাঙ্কিংয়ে (এনআইআরএফ) দেশের প্রাদেশিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এখন দ্বিতীয় স্থানে যাদবপুর। নাকের মূল্যায়নে যাদবপুর পেয়েছে ৩.৬৮। দেশের ২০টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র ‘ইনস্টিটিউটস অব এমিনেন্স’ হিসেবে গড়ে তুলতে চাইছে। সেই প্রক্রিয়ায় প্রাথমিক তালিকায় রয়েছে যাদবপুর। ‘‘সেই যাদবপুরের পড়ুয়াদের যদি বিদেশে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় সেটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের,’’ মন্তব্য চিরঞ্জীববাবুর। তবে তিনি এ-ও বলেন, ‘‘২০১৯ সালে এনবিএ-র মূল্যায়নে যাদবপুর অংশ নেবে। তার প্রস্তুতি আমরা শুরু করে দিয়েছি ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kuwait Employment Engineers কুয়েত
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE