Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Census

হিন্দিকে পেছনে ফেলল বাংলা, শেষ সাত বছরে আমেরিকায় বাঙালির সংখ্যা বাড়ল ৫৭ শতাংশ

২০১০ থেকে ২০১৭, এই সাত বছরে আমেরিকায় বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ল প্রায় ৫৭ শতাংশ। ২০১০ সালে আমেরিকায় বাংলাভাষী জনসংখ্যা ছিল দুই লক্ষ তেইশ হাজার। আর ২০১৭ সালে এই জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছেপ্রায় সাড়ে তিন লক্ষ।

গ্রাফিক- তিয়াসা দাস।

গ্রাফিক- তিয়াসা দাস।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৮ ১১:৩০
Share: Save:

২০১০ থেকে ২০১৭, এই সাত বছরে আমেরিকায় বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ল প্রায় ৫৭ শতাংশ। ২০১০ সালে আমেরিকায় বাংলাভাষী জনসংখ্যা ছিল দুই লক্ষ তেইশ হাজার। আর ২০১৭ সালে এই জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ। ইংরেজি ছাড়া অন্যান্য ভাষাগোষ্ঠীর জনসংখ্যার বৃদ্ধির নিরিখে তেলুগু-র ঠিক পরেই আছে বাংলা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হিসেবে বাংলা বা তেলুগুবাসী জনগোষ্ঠীর ধারে কাছে নেই মান্দারিন (চিনা) ও স্প্যানিশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ইমিগ্রেশন স্টাডিজের প্রকাশিত রিপোর্টে সামনে এল এই তথ্য।

শুধু বাংলা বা তেলুগু নয়, আমেরিকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরে ইংরেজি ছাড়া অন্যান্য ভাষাগোষ্ঠীর জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে। ২০১৭ সালের জনগণনার তথ্য অনুযায়ী, আমেরিকার প্রায় সাড়ে ছয় কোটি মানুষ বাড়িতে ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষায় কথা বলেন। সংখ্যার হিসেবে যা দেশের মোট জনসংখ্যার (৩২.৫ কোটি) প্রায় ২২ শতাংশ। ১৯৮০ সালে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ১১ শতাংশ।

মার্কিন জনগণনার রিপোর্ট থেকে পরিষ্কার, সারা দুনিয়ার এক বিপুল সংখ্যক মানুষ স্বাচ্ছন্দ্য ও জীবিকার খোঁজে পাড়ি জমাচ্ছেন উত্তর আমেরিকার এই দেশে। ভাষার হিসেব বিশ্লেষণ করলে অবশ্য দেখা যাচ্ছে, যে নতুন মানুষেরা আমেরিকায় ঠাঁই নিচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে শীর্ষে ভারতীয়রাই। জনসংখ্যার শতাংশ বৃদ্ধির নিরিখে প্রথম ছ’টি ভাষাগোষ্ঠীর মধ্যেই আছেন ভারতীয়রা। তালিকার প্রথম ছ’টি ভাষাগোষ্ঠী হল তেলুগু, বাংলা, তামিল, আরবি, হিন্দি এবং উর্দু। এর মধ্যে আরবি ছাড়া সব ক’টিই ভারতীয় ভাষা। তবে বাঙালিদের মধ্যে আছেন বাংলাদেশের বাঙালিরাও। একই রকম ভাবে উর্দুভাষীদের মধ্যে আছেন পাকিস্তানিরাও।যদিও বাঙালিদের মধ্যে কত শতাংশ বাংলাদেশি বা উর্দুভাষীদের মধ্যে কত শতাংশ পাকিস্তানি সেই তথ্য পাওয়া যায়নি মার্কিন রিপোর্টে।

তথ্যসূত্র: সেন্টার ফর ইমিগ্রেশন স্টাডিজ, মার্কিন জনগণনা

শতাংশের হিসেব বাদ দিয়ে মোট জনসংখ্যা বৃদ্ধির নিরিখেও সাত নম্বরে আছে বাংলা। এই তালিকায় চিনা, আরবি, হিন্দি, তেলুগু, তাগালোগ এবং হাইতিয়ানের পরই আছে বাংলা। সাত বছরে বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১.৩ লক্ষ। সেখানে তালিকায় শীর্ষে থাকা মান্দারিন বা চিনা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় সাড়ে ছয় লক্ষ।

যদিও শতাংশের হিসেবে তেলুগু ভাষাগোষ্ঠীর বৃদ্ধির ধারে কাছে নেই অন্য কেউ। ২০১০ থেকে ২০১৭, এই সাত বছরে তেলুগুভাষী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৮৬ শতাংশ। দেখা যাচ্ছে, গত কয়েক দশকে হায়দরাবাদ থেকে বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রী মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পড়তে যাচ্ছেন। পড়তে গিয়ে আমেরিকাতেই থেকে যাচ্ছেন এই ভাষাগোষ্ঠীর সদস্যরা। তেলুগুভাষী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে এটিই মূল কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। এই যোগাযোগের কারণেই শেষ কয়েক দশকে হায়দরাবাদ ও অন্ধ্রপ্রদেশে প্রচুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ তৈরি হয়েছে। হায়দরাবাদ এবং অন্ধ্রপ্রদেশ মেলালে মোট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সংখ্যা এই মুহূর্তে ৮০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে।

সামগ্রিক ভাবে গোটা আমেরিকা জুড়েই বাড়ছে বিদেশি ভাষাগোষ্ঠীর জনসংখ্যা। আমেরিকার সব থেকে বড় পাঁচটি শহরেই ৪৮ শতাংশ মানুষ বাড়িতে ইংরেজি ছাড়াও অন্য ভাষায় কথা বলেন। নিউইয়র্ক এবং হাউস্টনে এই সংখ্যা প্রায় ৪৯ শতাংশ, লস এঞ্জেলেস শহরে ৫৯ শতাংশ, শিকাগোতে ৩৬ শতাংশ এবং ফিনিক্সে ৩৮ শতাংশ।

তথ্যসূত্র: সেন্টার ফর ইমিগ্রেশন স্টাডিজ, মার্কিন জনগণনা

মার্কিন জনগণনার হিসেবে, বিদেশি ভাষাগোষ্ঠীর বৃদ্ধি শুধুমাত্র শহরেই। আমেরিকান গ্রামগুলিতে ইংরেজি ছাড়া অন্যান্য ভাষায় কথা বলেন মাত্র আট শতাংশ মানুষ।

শেষ কয়েক দশকে আমেরিকায় বিভিন্ন ভারতীয় ভাষার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বিপুল হারে বৃদ্ধি পেলেও মোট জনসংখ্যার হিসেবে অবশ্য ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষাগোষ্ঠীর তালিকায় প্রথম দশে নেই কোনও ভারতীয় ভাষা। ইংরেজি ছাড়া সেখানে প্রথমেই আছে স্প্যানিশ। তার পরেই আছে জার্মান, ফ্রেঞ্চ, ইতালিয়ান সহ অন্যান্য ইউরোপিয় ভাষার জনগোষ্ঠীরা। যদিও তাঁরা শুধু আজ নয়, ঐতিহাসিক ভাবেই দীর্ঘদিন ধরে উপস্থিত আমেরিকায়। আর শেষ কয়েক দশকের হিসেব অনুযায়ী আমেরিকায় পাড়ি জমানো মানুষদের মধ্যে সিংহভাগই ভারতীয়রা।

গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ

(সব গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের আন্তর্জাতিক বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE