ঘাতক বাসটির মধ্যে ঢুকছেন পুলিশকর্মীরা। ছবি: রয়টার্স।
বার্লিনে কোনও দুর্ঘটনা নয়, বরং জঙ্গি হামলাই হয়েছে। মঙ্গলবার এমনটাই জানিয়ে দিলেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেল। যদিও পুলিশ-প্রশাসন এখনও নিশ্চিত নয়, তারা ঠিক লোককে গ্রেফতার করেছে কি না।
পুলিশের দাবি, বড়দিনের ভরা বাজারে ইচ্ছাকৃত ভাবেই ঢুকে পড়েছিল ট্রাকটি। ১২ জনের প্রাণ নেওয়ার পাশাপাশি ৪৮ জনকে আহত করে সেটি। ঘটনার পর এক জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তের পর জানানো হয়, সেই সময়ে তিনি ট্রাকটি চালাচ্ছিলেন। জার্মানিতে শরণার্থী হিসাবে আসা পাকিস্তানের ওই নাগরিক আদৌ গাড়ি চালাচ্ছিলেন কি না, তা নিয়ে এখন ধন্দে বার্লিন পুলিশ। বার্লিনের মুখ্য পুলিশ কর্তা এ দিন বিকেলে বলেন, ‘‘ওই যুবকই যে ঘটনার সময় ট্রাকটি চালাচ্ছিলেন তা এখনও স্পষ্ট নয়। আমরা এখনও এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারিনি।’’
তবে, বার্লিলের একটি দৈনিক এ দিন বিকেলে অন্য এক পুলিশ কর্তাকে উদ্ধৃত করে লিখেছে, ‘‘আমরা ভুল লোককে গ্রেফতার করেছি। পরিস্থিতি এখন নতুন দিকে মোড় নিয়েছে। প্রকৃত অপরাধী এখনও পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তার কাছে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্রও রয়েছে। আরও বড় কোনও ক্ষতি সে যে কোনও সময়েই করতে পারে।’’
ওই সময় বাজারে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের কেউ যদি ছবি বা ভিডিও তুলে থাকেন ঘটনার পুনর্নির্মাণ করতে পুলিশ তাও চেয়ে পাঠিয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের কোনও যোগ আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরাও দুর্ঘটনার তত্ত্ব উড়িয়ে দিচ্ছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, যে ভাবে ট্রাকটি ভীষণ গতিতে ভিড়ের মধ্যে ঢুকে পড়ে নির্দিষ্ট কোনও উদ্দেশ্য ছাড়া তা হতে পারে না। এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, ‘‘বাজারের ঠিক মাঝখান দিয়ে প্রায় ৪০ কিলোমিটার বেগে ঢুকে পড়ে ট্রাকটি। গতি কমানোর কোনও লক্ষণও ছিল না। মানুষ বাঁচাতে কোনও হেলদোলও দেখা যায়নি চালকের মধ্যে।’’ ওই সময় সিরিয়ার
আরও পড়ুন: ঘাতক ট্রাক পিষে মারল ১২ জনকে, বার্লিনে ফিরল নিস সন্ত্রাসের আতঙ্ক
শরণার্থী এক দম্পতি বাজারে ছিলেন। তাঁরা বলেন, ‘‘হঠাত্ কাচ ভাঙার মতো জোরাল আওয়াজ শুনলাম। তার পরেই প্রচুর মানুষের চিত্কার। এ দিক ও দিক ছিটকে রয়েছেন রক্তাক্ত মানুষ।’’
এ দিন সকালে পুলিশ জানিয়েছিল, ট্রাকের ক্যাবের মধ্যে এক জনের দেহ উদ্ধার হয়। তিনি পোল্যান্ডের নাগরিক। পুলিশ তার নাম জানায়নি। তাদের দাবি, ওই সময় তিনি গাড়ি চালাচ্ছিলেন না। ক্যাবে অন্য এক জন ছিলেন। তিনিই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনার পরেই ক্যাব থেকে পালিয়ে যান তিনি। পরে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই যুবক সম্পর্কে বিস্তারিত কোনও তথ্যই সামনে আনেনি পুলিশ। তবে, বিকেলে পুলিশ কর্তার নতুন বয়ানে তদন্তের গতিপ্রকৃতি যে অন্য খাতে বইছে তা বোঝা গিয়েছে। জার্মানির অভ্যন্তরীণমন্ত্রী জানিয়েছেন, গত ডিসেম্বরে শরণার্থী হিসাবে জার্মানিতে আসেন ওই যুবক। আদতে পাকিস্তানে নাগরিক তিনি। ফেব্রুয়ারিতে বার্লিন আসেন। এবং আশ্রয়ের জন্য প্রসাসনের কাছে আবেদন জানান।
ট্রাকটির মালিকানা সংস্থা আগেই জানিয়েছিল, স্টিল বিম নিয়ে ট্রাকটি বার্লিন গিয়েছিল। ওই চালক গত ১৫ বছর ধরে গাড়ি চালাচ্ছেন। আগে কখনও এমনটা হয়নি। তাদের আরও দাবি, ওই দিন দুপুরে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। তখনও অস্বাভাবিক কিছু মনে হয়নি। পুলিশ বলছে, জিপিএস ডেটা অনুযায়ী ওই দিন বিকেল ৩টে ৪৪, ৪টে ৫২ এবং ৫টা ৩৭-এ ট্রাকটির ইঞ্জিন স্ট্রার্ট হয়। এবং শেষ বার বিকেল ৫টা ৩৪-এ স্টার্ট করে রাত আটটা নাগাদ ভরা বাজারে ঢুকে পড়ে ১২ জনের প্রাণ নেয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy