Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

এফবিআইয়ের ক্লিনচিট, ভোটের মুখে স্বস্তিতে হিলারি

ভোটের প্রচার তো নয়, যেন একটা সাইক্লোন! ই-মেল ফাঁস থেকে যৌন হেনস্থার অভিযোগ— কী দেখেনি এ বারের নির্বাচন! একেবারে শেষ লগ্নে এসে অবশ্য খানিকটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারছেন হিলারি ক্লিন্টন। না, একেবারে জয়ের আগাম আশায় হয়তো নয়।

থাম্বস আপ। পিটসবার্গে একটি জনসভার পর। ছবি: রয়টার্স।

থাম্বস আপ। পিটসবার্গে একটি জনসভার পর। ছবি: রয়টার্স।

চন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়
নিউ ইয়র্ক শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:২৭
Share: Save:

ভোটের প্রচার তো নয়, যেন একটা সাইক্লোন! ই-মেল ফাঁস থেকে যৌন হেনস্থার অভিযোগ— কী দেখেনি এ বারের নির্বাচন! একেবারে শেষ লগ্নে এসে অবশ্য খানিকটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারছেন হিলারি ক্লিন্টন। না, একেবারে জয়ের আগাম আশায় হয়তো নয়। তবে ই-মেল কেলেঙ্কারির অভিযোগ তুলে ট্রাম্প শিবির যে ভাবে তাঁকে বেকায়দায় ফেলেছিল, তার থেকে অন্তত কিছুটা অব্যাহতি মিলল।

আমেরিকার সঙ্গে ভারতীয় সময়ের তফাৎ প্রায় সাড়ে বারো ঘণ্টা। সুতরাং আপনাদের ঘড়ি অনুযায়ী মঙ্গলবার রাত থেকে ভোট দেওয়া শুরু। সরকারি ভাবে নভেম্বর মাসের প্রথম সোমবারের পরের দিন মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। কিন্তু এ দেশে ‘আর্লি ভোট’ বলে একটা ব্যাপার আছে। এবং প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ ইতিমধ্যেই সেই পদ্ধতিতে ভোট দিয়ে দিয়েছেন। ফল ঘোষণা হতে হতে বুধবার, অর্থাৎ ৯ তারিখ।

তার আগে সোমবারটা ডেমোক্র্যাটদের কিছুটা অক্সিজেন দিয়ে গেল। কারণ এফবিআই বলল, হিলারির বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ তাঁরা পাননি। হিলারির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, বিদেশসচিব থাকাকালীন তিনি নাকি তাঁর ব্যক্তিগত ই-মেলে দেশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত গোপন তথ্য চালাচালি করেছেন। তাই নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প এত দিন গলা ফাটিয়ে হিলারিকে দেশের পক্ষে বিপজ্জনক বলে প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লেগেছিলেন। জুলাই মাসে এফবিআই বলে যে, হিলারির তরফে কিছুটা অসতর্কতা হয়েছে। তবে দেশের স্বার্থ বিঘ্নিত করার মতো কিছু করেননি তিনি। ফলে তাঁকে অপরাধী বলা যায় না। তাতে পরিস্থিতি অনেকটা সামলেছিল। কিন্তু গত মাসে আবার এক প্রস্ত ই-মেল সামনে আসে। এফবিআই সেগুলো খতিয়ে দেখে আজ বলল, তারা সিদ্ধান্ত বদলাচ্ছে না। হিলারি অপরাধী নন। তবে ট্রাম্প এত সহজে চুপ করছেন না। সবটাই রাজনীতির খেলা বলে এখনও তর্জন করে চলেছেন তিনি।

বাস্তবিক। চড়া সুরের ভোট আগেও দেখেছে আমেরিকা। কিন্তু হিলারি আর ট্রাম্প, তাঁদের লড়াইকে এ বার বিচিত্র অশালীন স্তরে নিয়ে গিয়েছেন। প্রায় একই রকম অশালীন লড়াই সমানে চলেছে রাস্তাতেও। দু’দলের সমর্থকদের মধ্যে।

ম্যানহাটনের ইউনিয়ন স্কোয়্যারে যেমন কিছু দিন আগে ট্রাম্পের একটা মূর্তি প্রায় মাটি ফুঁড়ে গজিয়েছিল। রঁদ্যার ভাস্কর্যের ক্যারিকেচার, নগ্ন ট্রাম্প গভীর চিন্তায় মগ্ন। সে দৃশ্যের অভিঘাত সহজে যাওয়ার নয়। একই মূর্তি দেখা গিয়েছিল লস অ্যাঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ক্লিভল্যান্ড আর সিয়াটেলেও। তার ঠিক ক’দিন পরেই নিউ ইয়র্কের রাস্তায় আবার অন্য এক মূর্তি নিয়ে হইচই। এ বার হিলারি ক্লিন্টন বা বলা ভাল, হিলারির অশালীন ক্যারিকেচার। তবে এই মূর্তিটি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। তাকে ঘিরে জমে ওঠা ভিড়ের মধ্যেই এক মহিলা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন সেটিকে।

শুধু মূর্তিই নয়, বাজার ছেয়ে গিয়েছিল ট্রাম্প আর হিলারির ছবি দেওয়া মুখোশ-টুপি-টি-শার্টে। ৩১ অক্টোবর, হ্যালোউইন ডে ছিল। তার প্যারেডে রাস্তায় অনেক হিলারি ক্লিন্টন আর অনেক ট্রাম্পকে হাঁটতে দেখা গেল। ওয়াশিংটন ডিসি-র পানশালায় এখন আপনি নির্বাচনের প্রার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করা ককটেলে চুমুক দিতে পারবেন, শিকাগোর রেস্তোরাঁয় খাবার অর্ডার দেওয়ার মধ্যে দিয়েই নিজের রাজনৈতিক পছন্দটা জানিয়ে দিতে পারবেন। নিউ ইয়র্কের ১৮০ বছরের পুরনো ডেলমোনিকোস-এ এই সপ্তাহ জুড়ে পাওয়া যাচ্ছে হোয়াইট হাউসের মেনু। টেডি রুজভেল্টের মনপসন্দ ‘ক্র্যাব আ-লা নিউবার্গ’ বা জন এফ কেনেডির প্রিয় ‘টার্কি আ-লা কিং’— চাইলেই মিলছে।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলেকজান্দ্রিয়া মারজানো লেসনেভিচ বললেন, ‘‘দেশটা কেমন হওয়া উচিত, সে বিষয়ে দুই প্রার্থীর মতামত একদম আলাদা। কাজেই এই দফায় মানুষ নিজেদের পছন্দের কথাটা প্রকাশ্যেই জানান দিতে চান। তাই এত টি-শার্টের বিক্রি, মুখোশের হিড়িক, হ্যালোউইনের পোশাক।’’

কথাটার প্রমাণ মিলল বন্দুক-বিরোধী আন্দোলনের কর্মী ও লেখক কারা ওয়েইট-কে দেখে। কারা হিলারির ছবি দেওয়া টি-শার্ট পরে ঘুরছেন, যাতে লেখা, ‘দিজ ন্যাস্টি উওম্যান ভোটস’। কেন? উত্তর এল, ‘‘শুধু যে ট্রাম্পই হিলারিকে ‘ন্যাস্টি ওম্যান’ বলেছেন, তা তো নয়। আমাকেও সারা জীবন অজস্র পুরুষের মুখে কথাটা শুনতে হয়েছে। ট্রাম্পের মতো বর্ণবিদ্বেষী, নারীবিদ্বেষী পুরুষরা যে নীরবতার ভরসায় টিকে থাকেন, সেটাকে ভাঙার জন্য ‘নচ্ছার’ মেয়েদেরই প্রয়োজন।’’

কারা-র কাছে ওই টি-শার্ট শুধু টি-শার্ট নয়। শুধু হিলারির প্রচার নয়। তার চেয়েও কিছু বেশি। কী সেটা? স্পষ্ট করে বললেন আলেকজান্দ্রিয়া। ‘‘বহু প্রজন্ম ধরে আমেরিকা যতটা এগিয়েছে, ট্রাম্প তার অনেকটাই নষ্ট করে দিতে চান। প্রকাশ্যে হিলারিকে সমর্থন করা মানে বলা, আমি ট্রাম্পের আমেরিকাকে সমর্থন করি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hillary Clinton Donald Trump
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE