Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

আমি শুধুই আমেরিকান, ভোটযুদ্ধে নেমে গর্জন জিন্দলের

গলি থেকে রাজপথ। দীর্ঘ ৪৪ বছর আগে পঞ্জাবের অজ গাঁ ছেড়ে প্রায় নিঃসম্বল অবস্থায় মার্কিন মুলুকে পাড়ি দিয়েছিলেন এক অল্পবয়সী দম্পতি। তাঁদেরই ছেলে আজ লড়তে চলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে। লুইজিয়ানার রিপাবলিকান গভর্নর ববি জিন্দল। ৪৪ বছর বয়সী জিন্দলই প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত, যিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়বেন।

 ববি জিন্দল

ববি জিন্দল

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৫ ০৩:২৫
Share: Save:

গলি থেকে রাজপথ।

দীর্ঘ ৪৪ বছর আগে পঞ্জাবের অজ গাঁ ছেড়ে প্রায় নিঃসম্বল অবস্থায় মার্কিন মুলুকে পাড়ি দিয়েছিলেন এক অল্পবয়সী দম্পতি। তাঁদেরই ছেলে আজ লড়তে চলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে। লুইজিয়ানার রিপাবলিকান গভর্নর ববি জিন্দল।

৪৪ বছর বয়সী জিন্দলই প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত, যিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়বেন। জিতে গেলে তিনি হবেন ওবামার উত্তরসূরী। এ অবস্থায় বারবারই প্রশ্ন উঠছে জন্মসূত্রে আমেরিকান হলেও, তিনি তো বিদেশি! এক জন বিদেশি কী করে প্রেসিডেন্টের গদিতে বসতে পারেন? এই বিতর্ক গায়ে মেখেই ২০০৭ সালে লুইজিয়ানার গভর্নর হয়েছিলেন তিনি। নয়া যুদ্ধেও জয় অব্যাহত রাখতে প্রচারের প্রথম দিনেই তাই বাজি রাখলেন নিজের গায়ে লেগে থাকা ‘হাইফেনেটেড আমেরিকান’ তকমা।

বিদেশি ‘কলঙ্ক’ ঘোচাতে ভোট-যুদ্ধে নেমেই ঘোষণা করলেন, ‘‘আমি হাইফেনেটেড আমেরিকান নই।’’ বললেন, ‘‘এই হাইফেনেটেড আমেরিকান কথাটা শুনে শুনে বিরক্ত লেগে যাচ্ছে। আমরা ইন্ডিয়ান-আমেরিকান নই, আফ্রিকান-আমেরিকান নই, আইরিশ-আমেরিকান নই, ধনী আমেরিকান নই বা গরিব আমেরিকানও নই। আমরা সবাই শুধুই আমেরিকান।’’ কথাটা শেষ হতে না হতেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ল সভা। সমর্থকদের হাততালির আওয়াজে তখন কান পাতা দায়।

একই সঙ্গে জিন্দল হাতিয়ার করেছেন নিজের দুর্বলতাকেই। বলেছেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তো চিরকাল ভেদাভেদের রাজনীতিই করে এসেছেন..., লিঙ্গ ভেদ, জাতি ভেদ, ধর্ম ভেদ, কোথাকার মানুষ, তা নিয়েও আলাদা করেছেন তিনি।’’ যা থেকে খানিক পরিষ্কার, সংখ্যালঘু ও বৈষম্যের রাজনীতিকে ভোটে অস্ত্র করবেন না জিন্দল।

এর পর নিজেই শোনালেন, তাঁর ‘বিদেশি’ যোগসূত্রের কথা। তাঁর ভারতীয় বাবা-মায়ের ভিন্‌ দেশে আসার ইতিহাস। ‘‘বাবাদের পঞ্জাবের বাড়িতে বিদ্যুৎ ছিল না। পানীয় জলও ছিল না। বাবা পড়াশোনা করেছিলেন পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। অবশ্য তাঁদের পরিবারে ওই গণ্ডিটুকু পেরনোরও নজির ছিল না।’’

জিন্দল জানালেন, এ অবস্থায় সামান্য টাকাপয়সা সম্বল করে পৃথিবীর অন্য প্রান্তে আমেরিকা নামে একটা দেশে পাড়ি দেন অমর ও রাজ। সেই প্রথম তাঁদের প্লেনে চড়া। তখন কিন্তু ইন্টারনেট ছিল না সেখানে। ওঁরা শুধু শুনেছিলেন, ‘ও দেশে সব ভাল। কেউ প্রশ্ন করবে না, তোমার নাম কী, কোথাকার মানুষ, গায়ের রং কেমন। সাদা না কালো, তা নিয়েও কেউ মাথা ঘামাবে না। পরিশ্রম করলেই তার ফল মিলবে। আর সে ভাবেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’

জিন্দল বললেন, ‘‘বাবা-মায়ের সেই বিশ্বাস কিন্তু সত্যি হয়েছিল। লুইজিয়ানার মানুষ আপন করে নিয়েছিল তাঁদের।’’ ফাইভ পাশ বাবার ছেলে হাই স্কুল পাশ করেছিল শীর্ষ স্থান পেয়ে। পরে এত ভাল ফল করেছিলেন ববি, যে একই সঙ্গে হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুল ও ইয়েল ল স্কুল, দু’জায়গাতেই পড়ার সুযোগ পান। তিনি বেছে নিয়েছিলেন নিউ কলেজ, অক্সফোর্ড। সেখান থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এম লিট ডিগ্রি পান। তাঁর বিষয় ছিল হেল্‌থ পলিসি। ‘ওবামাকেয়ার’কে টক্কর দিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও জিন্দলের অন্যতম এজেন্ডা ‘স্বাস্থ্য’।

লুইজিয়ানা তাঁকে দু’হাত ভরে দিয়েছে। এ বার গোটা আমেরিকাকেও কি পাশে পাবেন জিন্দল? বলে দেবে ২০১৬।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE