ককপিটে পাইলট ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী। —নিজস্ব চিত্র
আকাশে ইতিহাস তৈরির মুহূর্তে ভেসে উঠল এক বঙ্গসন্তানের নাম।
সিঙ্গাপুর থেকে নিউ ইয়র্ক— যে দীর্ঘতম উড়ানের সূচনা করল সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স, তাকে উড়িয়ে নিয়ে গেলেন চিফ পাইলট এস এল লিয়ং। আর নিউ ইয়র্ক থেকে ফিরতি পথে ককপিটের কম্যান্ডারের আসনে ক্যাপ্টেন ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী!
এই বঙ্গসন্তান মাত্র ৯ বছর বয়সে বাবার হাত ধরে সিঙ্গাপুরে চলে যান। দীর্ঘকাল প্রবাসে থাকলেও এখনও আদ্যন্ত বাঙালি। কলকাতায় তাঁর অসংখ্য আত্মীয়-বন্ধু। বিয়ে বা পার্টিতে দিব্যি ধুতি পরে নেমে পড়েন আসরে। পাইলট প্রশিক্ষণ নিয়ে ইন্দ্রনীল যোগ দেন সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে। বিশ্বের বৃহত্তম বিমান ‘এয়ারবাস ৩৮০’ চালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। এ বারে দীর্ঘতম উড়ানের পালক ইন্দ্রনীলের টুপিতে।
কেমন লাগল অভিজ্ঞতা?
পঞ্চমীর সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুর থেকে ভেসে এল উত্তেজিত কণ্ঠ— ‘‘বলতে পারেন স্বপ্ন সফল হল। শুধু তো দীর্ঘতম উড়ান নয়, উত্তর মেরুর ওপর দিয়ে উড়ে আসা। ভাষায় প্রকাশ করা যায় না এই অভিজ্ঞতা।’’ যদিও এর আগেও উত্তর মেরু দিয়ে উড়ে এসেছেন তিনি। ‘এয়ারবাস ৩৫০-৯০০ আলট্রা লং রেঞ্জ’ বিমানে ইন্দ্রনীল হাত পাকিয়েছেন গত কয়েক বছর ধরে। সেই কারণে, মাস কয়েক আগে যখন ফ্রান্সের তুলুসে প্রথম এয়ারবাস ৩৫০-৯০০ বিমানটি হাতে পেল সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স, সেটি উড়িয়ে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব তাঁর কাঁধেই পড়েছিল।
এ বারে ঠিক হয়েছিল, লিয়ং বিমান নিয়ে যাবেন। ফিরিয়ে আনবেন ইন্দ্রনীল। ১৭ ঘণ্টা ২২ মিনিটের সেই ফিরতি উড়ানে তিনিই প্রধান পাইলট। সঙ্গে আরও দুই কো-পাইলট এবং এক কম্যান্ডার। ইন্দ্রনীল ও তাঁর কো-পাইলট যখন বিশ্রাম নেবেন, তখন ককপিটে থাকবেন বাকি দু’জন। ইন্দ্রনীলের কথায়, ‘‘এটাই রীতি। দূরপাল্লার উড়ানে দু’সেট করে পাইলট থাকে। বিমানসেবিকাদেরও দু’টি দল থাকে। এক দল যখন বিশ্রাম নেন, অন্য দল কাজ করেন। এক টানা এত ক্ষণ কাজ করা তো সম্ভব নয়।’’
নিউ ইয়র্ক থেকে ১২ অক্টোবর তিনি দীর্ঘতম উড়ান নিয়ে রওনা হবেন বলে তার তিন দিন আগে থেকেই দলবল নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন নিউ ইয়র্কে। সেখানে দু’দিন বিশ্রাম নিয়ে ১২ তারিখ শুরু হয় যাত্রা। আমেরিকা, কানাডা়, আইসল্যান্ড-এর পরে উত্তর মেরু টপকে রাশিয়ার সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, চিন, লাওস, তাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া হয়ে শনিবার রাতে পৌঁছেছেন সিঙ্গাপুরে। তাঁর কথায়, ‘‘রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। প্রতিটি দেশের আকাশ দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময়ে সেই দেশের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) আমাদের অভিনন্দন জানিয়েছে।’’
এক টানা ১৬,৫৭৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ক্লান্ত লাগছে না?
ফোনের ও পার থেকে ভেসে এল হাসি— ‘‘আমাদের যে ধরনের প্রশিক্ষণ হয়, তাতে ক্লান্তির জায়গা নেই। একটু বেলায় ঘুম থেকে উঠেছি, এইটুকুই। সোমবার থেকে আবার রুটিন মেনে কাজ শুরু হয়ে যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy