সেই সব অনাথ শিশু।- ফাইল চিত্র।
বাবাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তারা তার বিন্দুবিসর্গও জানে না। জানে না, মা, বাবার সঙ্গে তাদের আর কোনও দিন দেখা হবে কি না। সব আত্মীয়-পরিজন হারিয়ে তারা কার্যত একা একাই পড়ে রয়েছে একটি শিবিরে। চার পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে হাজার হাজার শিশু, কিশোর। যাদের কেউই একে অন্যকে চেনে না।
এই শিশুরা মেক্সিকো সহ মধ্য আমেরিকার দেশগুলি থেকে সীমান্ত পেরিয়ে তাদের মা, বাবার হাত ধরে আসতে গিয়েছিল মার্কিন মুলুকে। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতির ফাঁসে আটকে যায় ওই শিশুদের পরিবার। পরিবার, পরিজন থেকে শিশুদের আলাদা করে নিয়ে তাদের মা, বাবাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় মার্কিন কাস্টমস দফতর। সেই থেকেই শিবিরে কার্যত অনাথ অবস্থায় দিন-রাত কাটাচ্ছে ওই শিশুরা।
এই শিশুদের জীবনযন্ত্রণার কথা এত দিন বাইরে আসেনি, ট্রাম্প প্রশাসন এত দিন প্রচারমাধ্যমের নজর থেকে তাদের দূরে সরিয়ে রেখেছিল বলে।
শিবিরে ঢুকে গোপনে সেই শিশুদের কথা রেকর্ড করে অলাভজনক সাংবাদিক সংস্থা ‘প্রোপাবলিকা’। সেই গোপন রেকর্ডিং সোমবার প্রকাশ পেতেই মার্কিন সীমান্তে ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অভিবাসন নীতি নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করেছে। যার শরিক হয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টির অনেক নেতাও।
আরও পড়ুন- ‘আপনার সঙ্গে বসতে পেরে সম্মানিত’, পুতিনকে বললেন ডোনাল্ড ট্রাম্প
আরও পড়ুন- কোনও প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এতটা দুর্ব্যবহার করেনি মিডিয়া! আক্ষেপ ট্রাম্পের
ওই রেকর্ডেড অডিওয় শোনা যাচ্ছে, শিশুদের আর্ত চিৎকার। কান্নাকাটি। স্প্যানিশ ভাষায় ‘মাম্মি, মাম্মি’, ‘ড্যাডি, ড্যাডি’ বলে কাঁদতে শোনা যাচ্ছে শিশুদের।
ট্রাম্প প্রশাসনের ওই কঠোর অভিবাসন নীতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে প্রায় আড়াই হাজার শিশু আটক রয়েছে আমেরিকা ও মধ্য আমেরিকার দেশগুলির সীমান্ত এলাকাগুলিতে।
‘প্রোপাবলিকা’র প্রকাশ করা রেকর্ডেড অডিওয় ৪ থেকে ১০ বছর বয়সী ১০টি শিশুর কণ্ঠস্বর শোনা গিয়েছে। গত সপ্তাহেই সীমান্ত পেরিয়ে আমেরিকায় ঢোকার সময় যাদের মা, বাবাদের গ্রেফতার করা হয়। আর মা, বাবার থেকে ওই শিশুদের আলাদা করে নিয়ে অন্য একটি জায়গায় আটকে রাখা হয়।
শিবিরে শিশুদের সেই কান্নাকাটি শুনে এক সীমান্তরক্ষী বলেছেন, ‘‘যেন অর্কেস্টা হচ্ছে। শুধু সেই অর্কেস্ট্রার কোনও পরিচালক নেই।’’
এল সালভাদরের একটি ৬ বছরের মেয়েকে কাঁদতে কাঁদতে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘যাওয়ার সময় মা বলে গিয়েছিল, পিসি এসে আমাকে নিয়ে যাবে। পিসি আসবে কবে?’’
গোপনে রেকর্ড করা ‘প্রোপাবলিকা’র সেই অডিও সংবাদমাধ্যমের হাতে এল কী ভাবে?
খবরটি যিনি প্রথম করেছিলেন, সেই পুলিৎজার পুরস্কার জয়ী সাংবাদিক, দৈনিক ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এর মেক্সিকো সিটির পূর্বতন চিফ অফ ব্যুরো জিঙ্গার থম্পসন জানিয়েছেন, মানবাধিকার রক্ষা সংক্রান্ত বিশিষ্ট আইনজীবী জেনিফার হারবারি তাঁকে ওই রেকর্ডেড অডিও দিয়েছেন।
আমেরিকার হোমল্যান্ড সিকিওরিটি দফতর অবশ্য ওই অডিও সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy