Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
International News

ভারতের সার্বভৌমত্বের প্রতি চিন শ্রদ্ধাশীল, নাম না করে বার্তা দিল বেজিং

চিনের ডাকা ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরাম’-এর শীর্ষ সম্মেলন বয়কট করেছে ভারত। বেজিং শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভারতকে এই সম্মেলনে পাওয়ার চেষ্টা চালালেও, নয়াদিল্লি সে ডাকে সাড়া দেয়নি। তা সত্ত্বেও ভারতের প্রতি সদর্থক বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করলেন চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং।

বেজিং-এ বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরামের সম্মেলনে উদ্বোধনী ভাষণ চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং-এর। ছবি: এএফপি।

বেজিং-এ বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরামের সম্মেলনে উদ্বোধনী ভাষণ চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং-এর। ছবি: এএফপি।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৭ ১৫:১৮
Share: Save:

চিনের ডাকা ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরাম’-এর শীর্ষ সম্মেলন বয়কট করেছে ভারত। বেজিং শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভারতকে এই সম্মেলনে পাওয়ার চেষ্টা চালালেও, নয়াদিল্লি সে ডাকে সাড়া দেয়নি। তা সত্ত্বেও ভারতের প্রতি সদর্থক বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করলেন চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং। ভারতের নাম চিনা প্রেসিডেন্ট নেননি। কিন্তু তাঁর মন্তব্য— প্রত্যেক দেশেরই উচিত পরস্পরের ‘সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক সংহতি’কে সম্মান করা। চিনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড কর্মসূচির অধীনে তৈরি চিন-পাক অর্থনৈতিক করিডর (সিপিইসি) ভারতের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক সংহতিতে আঘাত হানছে— এ কথা বলেই কিন্তু বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরাম বয়কট করেছে নয়াদিল্লি।

ঠিক কী বলেছেন প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং? তিনি বলেছেন, ‘‘সব দেশেরই উচিত পরস্পরের সার্বভৌমত্ব, সম্মান এবং আঞ্চলিক সংহতির প্রতি শ্রদ্ধা রাখা, পরস্পরের বিকাশের পথ সামাজিক ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধা রাখা এবং পরস্পরের স্বার্থ ও উদ্বেগের খেয়াল রাখা।’’

পাক অধিকৃত কাশ্মীর হয়ে যাওয়া এই তথাকথিত চিন-পাক অর্থনৈতিক করিডরই ওবিওআর-এ ভারতকে সামিল করার পথে চিনের সামনে প্রধান বাধা। —ফাইল চিত্র।

বেজিং-এ অন্তত ৩০টি দেশকে নিয়ে বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরামের শীর্ষ সম্মেলন আজ, রবিবারই শুরু হয়েছে। দু’দিনের এই সম্মেলনের প্রথম দিনেই চিনা প্রেসিডেন্ট যে বার্তা দিয়েছেন, তা আসলে ভারতকে লক্ষ্য করেই দেওয়া হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদদের মত। যে ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ বা ওবিওআর কর্মসূচি রূপায়ণের জন্য বেজিং-এ বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরামের শিখর সম্মেলন আয়োজিত হয়েছে, সেই ওবিওআর-এর সম্ভাব্য সাফল্যের সবচেয়ে বড় প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে সিপিইসি-কে। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্যে দিয়ে যাওয়া সিপিইসি যে ওবিওআর উদ্যোগের ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প, সেই ওবিওআর-এ ভারত কী ভাবে সামিল হতে পারে? এই প্রশ্ন তুলেই বেজিং-এর সম্মেলনটি থেকে দূরে সরে গিয়েছে ভারত। ‘‘ওবিওআর-এর ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প যে তথাকথিত চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর, পাক অধিকৃত কাশ্মীর হয়ে যাওয়া সেই করিডর সম্পর্কে ভারতের অবস্থান কী, তা আন্তর্জাতিক মহল ভাল ভাবেই জানে’’, ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র গোপাল বাগলে গত সন্ধ্যায় এক কড়া বিবৃতি দিয়ে এই মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, ‘‘কোনও দেশই এমন কোনও প্রকল্পকে মেনে নিতে পারে না, যে প্রকল্প সেই দেশটির সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক সংহতি সংক্রান্ত মূল উদ্বেগকে অবজ্ঞা করে।’’ অর্থাৎ, বেজিং-এ বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরামের সম্মেলন শুরু হওয়ার আগের সন্ধ্যাতেই ভারত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, পাক অধিকৃত কাশ্মীর হয়ে যাওয়া সিপিইসি যে হেতু ওবিওআর-এর অঙ্গ, সে হেতু ভারত ওবিওআর-এ যোগ দিতে পারে না।

আরও পড়ুন: ‘ওবর’ প্রকল্প আসলে কী? চিনের লাভ কতটা?

শনিবার সন্ধ্যায় ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের তরফ থেকে এমন কড়া বিবৃতির পর রবিবার চিনা প্রেসিডেন্ট নিজের ভাষণে সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক সংহতি সংক্রান্ত উদ্বেগকে যে ভাবে গুরুত্ব দিলেন, তা আসলে ভারতের প্রতিই বার্তা, বলছে ওয়াকিবহাল মহল।

আরও পড়ুন: চিন-পাকিস্তান নির্মীয়মান সড়কে জঙ্গি হানায় হত ১০ শ্রমিক

চিনে আয়োজিত এই সম্মেলনে পাকিস্তান তো যোগ দিয়েইছে। নেপাল এবং শ্রীলঙ্কাও ওবিওআর-এ সামিল হওয়ার বিষয়ে চিনকে সম্মতি দিয়েছে। কিন্তু ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড কর্মসূচিতে যত ক্ষণ না ভারত যোগ দিচ্ছে, তত ক্ষণ যে এই প্রকল্পের সাফল্য নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে, তা বেজিং-এর কর্তারা ভালই জানেন। সেই কারণেই ভারতের নাম না করেও প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং বার্তা দিতে চেয়েছেন যে সার্বভৌমত্ব সংক্রান্ত যে উদ্বেগের কথা ভারত জানিয়েছে, চিন সে উদ্বেগের প্রতি সংবেদনশীল। বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE