শর্মিষ্ঠা বসু
আপাতত শান্ত সব। কিন্তু সবটাই আর পাঁচটা শনিবারের মতো নয়।
ক্রাইস্টচার্চ শহরটা এমনিতে নির্ঝঞ্ঝাট, কেউ কারও সাতে-পাঁচে থাকে না। ছুটিছাটায় পরিবার আর বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা, মজা।
কিন্তু মাঝ-মার্চের সপ্তাহান্তের ছুটির মেজাজ শহরটা এখনও ফিরে পায়নি। আমি যে হোটেলে কাজ করি, সেখান থেকে মসজিদটা সরাসরি দেখা যায় না। বড়-বড় বাড়ির আড়ালে। শুধু টানা গুলির শব্দেই বুকে কাঁপন ধরে গিয়েছিল শুক্রবার দুপুরে। গোটা একটা দিন পেরিয়ে গেলেও সেই শব্দ যেন মাথার মধ্যে বেজেই চলেছে।
গুলি চলা বন্ধ হওয়ার অনেক পরে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেছিলাম আমরা। আমার স্বামী কৌশিক রেস্তোরাঁর ম্যানেজার। ক্লাস সিক্সে পড়া ছেলেকে ক্রাইস্টচার্চ ইস্ট স্কুল থেকে ফিরিয়ে বাড়িতে রেখে এসে ও আমায় হোটেল থেকে নিয়ে গিয়েছিল। ফেরার পথে দেখেছিলাম, চারদিকে পুলিশে ছয়লাপ। এ দিন সকালেও তা-ই।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এ দেশে আমরা সুরক্ষিত। সরকার সংবেদনশীল। কিন্তু কী জানি কেন, কাল ঠিক মতো ঘুমোতে পারিনি। যে লোকটা গুলি চালিয়েছে, সে আমাদের মতো অভিবাসীদের ঘৃণা করে। হয়তো সামনে পেলে আমাদেরও সে গুলি করে মারত— এই চিন্তাটা মাথা থেকে সরাতে পারছি না।
বিছানায় এ পাশ-ও পাশ করে রাত যা-ও কাটল, ব্রেকফাস্টের টেবিলেও স্বাভাবিক হতে পারছিলাম না কেউ। শনিবার ছেলের স্কুল ছুটি। তাই কিছুটা রক্ষে। সকালে ওকে আর বাড়ির বাইরে খেলতে যেতে দিইনি। আমাদের স্বামী-স্ত্রীর অবশ্য ছুটি ছিল না। রাস্তায় বেরোতে কোনও বাধা নেই। তবে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছিল, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ যেন পথে না বেরোয়। দোকানপাট সব খোলা, কিন্তু অন্য দিনের মতো লোকজন নেই। কাল যে সব জায়গায় হামলা হয়েছে, সর্বত্র পুলিশ পোস্টিং। গোটা রাস্তায় নজরদারি চলছে।
কৌশিকের সঙ্গেই আমি হোটেলে গেলাম। তবে সেখানেও কাজের চাপ কম। অন্য দিন সাত-আট ঘণ্টা কাটে, আজ পাঁচ ঘণ্টার মধ্যেই কাজ শেষ। সব জায়গায় শুধু কালকের ঘটনা নিয়ে আলোচনা। কেউ বিশ্বাসই করতে পারছে না, শান্ত শহরে এমন ঘটনা কী করে ঘটল? তবে নিউজ়িল্যান্ড সরকার খুব দ্রুত পরিস্থিতি সামলে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মনে করিয়ে দিয়েছেন যে এটা এই দেশের সংস্কৃতি নয়। এই দেশ কখনও বর্ণবিদ্বেষকে প্রশ্রয় দেয়নি। সেটাই আমাদের মতো ভারতীয়দের বেশি আশ্বস্ত করেছে।
সারা দিনই দেশের আত্মীয়বন্ধুরা ফোন করে খোঁজ নিয়েছেন। নদিয়ার বীরনগরে আমার বাবার সঙ্গেও কথা হয়েছে। সকলকেই বলেছি— আমরা নিরাপদে আছি। ভাল আছি। চিন্তা কোরো না।
(অনুলিখন: সুদীপ ভট্টাচার্য)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy