Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

রোদ্দুর গায়ে মাখার সেই চেনা ভিড় উধাও

জার্মানির অন্য শহরগুলির তুলনায় বেশ কয়েক দিন পরে হামবুর্গে আক্রান্তের খবর আসে।

ওম: বাড়ির জানলাতেই রোদ পোহাচ্ছেন শহরবাসী। হামবুর্গে। রয়টার্স

ওম: বাড়ির জানলাতেই রোদ পোহাচ্ছেন শহরবাসী। হামবুর্গে। রয়টার্স

নীরমেঘা মিশ্র হামবুর্গ (জার্মানি)
শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২০ ০৫:২৯
Share: Save:

উত্তর জার্মানির অন্যতম ব্যস্ত শহর হল হামবুর্গ। আসার কিছু দিনের মধ্যেই বুঝতে পেরেছিলাম, এখানকার লোকেরা খুবই কাজ-পাগল। তবে একই সঙ্গে এটাও টের পেয়েছিলাম যে সপ্তাহান্তে হাতে পাওয়া মুহূর্তগুলোকে একেবারে উসুল করে নিতে পারে এরা। কিন্তু গত কয়েক দিনে করোনাভাইরাসের আতঙ্কে চেনা পরিবেশ পাল্টে গিয়েছে একেবারে।

জার্মানির অন্য শহরগুলির তুলনায় বেশ কয়েক দিন পরে হামবুর্গে আক্রান্তের খবর আসে। কয়েক দিনের জন্য আক্রান্তের সংখ্যা এক জনেই আটকে ছিল। শহরের গতিবিধিও স্বাভাবিক ভাবে চলছিল। কিন্তু এক সপ্তাহে এই শহরে আক্রান্তের সংখ্যা ৬০০ ছুঁয়েছে। তারপরেই অবস্থাটা দ্রুত পাল্টে যায়। গত সপ্তাহ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করা ই-মেলে বলা হচ্ছিল, অফিসের কাজ যে ভাবে চলছে, তাই চলবে। সমস্ত পরীক্ষা চলবে। পরিস্থিতি পাল্টে গেল বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে। স্থগিত করে দেওয়া হল সব পরীক্ষা। পরের সিমেস্টার পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। সব লাইব্রেরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যে কোনও জমায়েতই নিষিদ্ধ। স্কুলগুলি অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ। অসুস্থ হলে হেল্পলাইনে যোগাযোগ করা এবং চিকিৎসক যাতে বাড়ি গিয়ে পরীক্ষা করতে পারেন সেই ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।

হামবুর্গে আমরা ভারতীয় পড়ুয়ারাও একে ওপরের সঙ্গে সব সময়ে যোগাযোগ রেখে চলেছি। কোনও এক জন তথ্য পেলে সেটা সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দূতাবাস থেকেও যোগাযোগ রাখা হয়েছে সব সময়েই। প্রতিটি সুপারমার্কেটে আনাজ, ফ্রোজ়েন খাবার, বেশির ভাগ জিনিসই প্রায় শেষ। আমরাও চাল-ডাল যা পেয়েছি কিছুটা মজুত করে রেখেছি।

ছোটবেলা থেকেই বাড়িতে থেকে বই পড়তে ভালবাসতাম। কিন্তু সেটাই বাধ্যতামূলক হয়ে যাবে, কোনও দিন ভাবিনি। প্রতিদিন সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত অবধি শুধু আক্রান্তের সংখ্যাটাই বেড়ে চলেছে। প্রতি ঘণ্টায়, প্রতি মিনিটে। সব খবর, সব ই-মেল একই জিনিস দেখাচ্ছে। শুধু হামবুর্গ বা জার্মানিতেই নয়, একই অবস্থা গোটা পৃথিবীতে। এখন বোধহয় পুরোপুরি ঘরবন্দি থাকাটাই প্রতিরোধ। এই ভয়াবহতা রুখতে আর কোনও প্রতিরোধ কারও জানা নেই।

রোদের দেখা এখানে বছরের খুব কম দিনেই পাওয়া যায়। তাই আসার পর থেকেই দেখেছি, রোদ যে দিন ওঠে, সবাই বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসের থেকে বেশি ভিড় থাকে বাইরের বসার জায়গাগুলোতে। সবাই একসঙ্গে মিলেমিশে উপভোগ করে নেন মুহূর্তগুলো। গত এক সপ্তাহে পরপর দু’দিন রৌদ্রোজ্জ্বল দিন ছিল হামবুর্গে। কিন্তু এখানে আসার পরে এই প্রথম কাউকে বাইরে দেখতে পেলাম না। নিজের ঘরের জানলায় দাঁড়িয়ে দেখলাম বাকিরাও জানলায় দাঁড়িয়ে বা বসে রোদ পোহানোর চেষ্টা করছেন।

সকলে মিলে রোদ গায়ে মাখার সুযোগ তো নেই এখন!

লেখক হামবুর্গ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির পড়ুয়া

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Hamburg Germany
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE