ডালাসে তৈরি করা হয়েছে অস্থায়ী হাসপাতাল।—ছবি এপি
আমাদের বিভাগের নিয়ম, প্রত্যেক শিক্ষককে বছরে একটা অন্তত ‘আন্ডারগ্র্যাড’ ক্লাস পড়াতে হবে। আমি এই সিমেস্টারে ‘ডিজিটাল সার্কিটস’ পড়াচ্ছি। সেই ১২ মার্চ আমি শেষ ক্লাস নিয়েছিলাম। এখন আমাদের ‘স্প্রিং ব্রেক’ চলছে। সাধারণত এই ছুটিটা এক সপ্তাহের হয়। কিন্তু এই বছর সেটি দু’সপ্তাহ করা হয়েছে। গত সোমবার, ৩০ তারিখ থেকে ক্লাস শুরু হল। তবে সব অনলাইনে। কিন্তু অনলাইন পড়ালে তো ছাত্রছাত্রীদের সামনাসামনি দেখতে পাব না। বোর্ডে লেখাও হবে না। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত শিক্ষকের মধ্যে আলোচনা চলছে কী ভাবে অনলাইন ক্লাস ভাল করা যায়, অনলাইন পরীক্ষা নেওয়া যায়। সোমবার থেকে আমাদের ট্রেনিং নিতে হবে অনলাইন ক্লাসের। এর মধ্যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, দরকার না থাকলে ক্যাম্পাসে না যেতে। গবেষণার কাজও বাড়ি থেকে করতে বলেছেন। যাদের সেটি সম্ভব না, তাদের অন্য কাজ, যেমন গবেষণাপত্র পড়া, লেখা, এ সব করতে বলা হয়েছে।
ডালাস শহরটি টেক্সাসের অন্যতম বড় শহর। এই রাজ্যের বাকি বড় শহরগুলি হল হিউস্টন, অস্টিন আর স্যান অ্যান্টোনিয়ো। প্রায় ২৫ লক্ষ লোকের বাস ডালাস ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায়। এখন এখানে ১০ জনের বেশি একসঙ্গে বেরোনো আইনবিরুদ্ধ। সমস্ত সেলুন, স্পা, জিম বন্ধ। রেস্তরাঁ বা বারে বসেও খাওয়া যাবে না। তবে রেস্তরাঁ থেকে খাবার বাড়ি এনে খাওয়া যাবে। সমস্ত স্কুল বন্ধ অনির্দিষ্টকালের জন্য। শহরের পশু শেল্টারগুলি খোলা থাকলেও বন্ধ হয়ে গেছে সিভিক সেন্টার, থিয়েটার, বেশির ভাগ পার্ক, লিগের খেলা, সিনিয়ার সেন্টার। লাইব্রেরি খোলা থাকলেও বই আগে থেকে অনলাইনে অর্ডার করতে হবে ও পিক-আপ জানলা দিয়ে নিতে হবে।
সবচেয়ে সমস্যা হয়েছে দোকান-বাজার করতে গিয়ে। লোকজন ভীত হয়ে একের পর এক জিনিস কিনে রাখছে। গত সপ্তাহে বাজার করতে গিয়ে দেখলাম এক মহিলা ৫০০ ডলারের বাজার করলেন সুপারমার্কেট থেকে! একদম পাওয়া যাচ্ছে না হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার, টয়লেট পেপার আর ডিসইনফেক্টিং ওয়াইপ্স। এই ঘটনায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ ডালাসের বিচারক ক্লে জেঙ্কিন্স অর্ডার দিয়েছেন কেউ যেন ১২টার বেশি টয়লেট পেপাররোল না নিতে পারে। উনি পরিষ্কার বলে দিয়েছেন “লোকে এখনও স্বার্থপর থেকে গিয়েছে, আত্মত্যাগ করতে শেখেনি।’’ উনি আরও নির্দেশ দিয়েছেন লোকজনকে ‘শেল্টার ইন প্লেস’ মানতে। অর্থাৎ যারা অত্যাবশ্যক সেবায় নেই, তারা বাড়ি থেকে বেরোতে পারবে না।
এখানকার প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যেও ভীতি চলে এসেছে। ভারতীয় দোকানে গিয়ে দেখলাম বিশাল লাইন। কাউকে কাউকে দেখলাম ২০-৩০টা ডেটল সাবান কিনে রাখছেন! কিছু দোকান তাদের ফেসবুক পেজে বড় করে ঘোষণা করেছে যে দোকান বন্ধ থাকবে না, দোকানের কোন কর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নয়, এবং দোকানে সব জিনিস পাওয়া যাচ্ছে।
এটা আশার কথা, কারণ আমরা বাঙালিরা তো আর কিছু না হলেও ভাত, ডাল, ঘি খেয়ে দিব্যি চালিয়ে নিতে পারব!
(লেখক ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস, ডালাসের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষক)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy