Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

তল পাচ্ছে না তেল, নামতে পারে ২০ ডলারেও

তল পাচ্ছে না তেলের দাম। বছর তিনেক আগেও যে দর ব্যারেলে ১২০ ডলারের আশেপাশে ঘোরাফেরা করছিল, তা সম্প্রতি নেমে গিয়েছে ১২ বছরের মধ্যে সব থেকে কমে। ৩০ ডলারেরও নীচে। আর তারপরেও চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্যের যা হাল, তাতে বিশ্ব বাজারে ব্যারেল-পিছু অশোধিত তেলের দর খুব তাড়াতাড়ি ২০ ডলারে নেমে গেলেও আশ্চর্য হবেন না অনেকে।

সংবাদ সংস্থা
লন্ডন শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৬ ২০:৪২
Share: Save:

তল পাচ্ছে না তেলের দাম। বছর তিনেক আগেও যে দর ব্যারেলে ১২০ ডলারের আশেপাশে ঘোরাফেরা করছিল, তা সম্প্রতি নেমে গিয়েছে ১২ বছরের মধ্যে সব থেকে কমে। ৩০ ডলারেরও নীচে। আর তারপরেও চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্যের যা হাল, তাতে বিশ্ব বাজারে ব্যারেল-পিছু অশোধিত তেলের দর খুব তাড়াতাড়ি ২০ ডলারে নেমে গেলেও আশ্চর্য হবেন না অনেকে।

গত বছর মার্কিন ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্ক গোল্ডম্যান স্যাক্স যখন তেল ২০ ডলারে নামার সম্ভাবনার কথা বলেছিল, তখনও তা স্রেফ ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিলেন অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ। অথচ কানাডায় তোলা অশোধিত তেলের দর ইতিমধ্যেই নেমেছে ২০ ডলারে। মধ্য এশিয়ার ১৩টি তেল উৎপাদক দেশের সংগঠন ওপেক-এর তোলা তেলের গড় দরও সম্প্রতি নেমেছিল ৩০ ডলারের নীচে। এবং তেল এখন বেশ কিছু দিন এমন নীচে থাকবে বলে ধরে নিচ্ছে আগাম পণ্য লেনদেনের বাজারও।

২০১৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্তও বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দর ছিল ১০০ ডলারের বেশি। সেখান থেকে দেড় বছরের মধ্যে তা এ ভাবে নেমে আসার কারণ চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি জোগান।

আরও পড়ুন:

পশ্চিম এশিয়ায় অশান্তির ধাক্কা ভারতের গয়না রফতানিতে

বিশেষজ্ঞদের মতে, সারা পৃথিবীতে তেলের বাজার দখলের জন্য আসলে তলে-তলে ‘রক্তক্ষয়ী’ যুদ্ধ চলছে উৎপাদক দেশগুলির মধ্যে। গত ছ’বছরে অশোধিত তেলের উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ করেছে আমেরিকা। সেই তেল এশিয়ার লোভনীয় বাজারে বেচতে চায় তারা। তেলের বাজারে যে কোনও মূল্যে নিজেদের কব্জা কায়েম রাখতে বদ্ধপরিকর সৌরি আরব-সহ ওপেক দেশগুলি। ফলে তেলের দাম ক্রমাগত কমা সত্ত্বেও উৎপাদন ছাঁটাই করেনি তারা। আর সেই কারণেই এখন টানটান স্নায়ুর লড়াই চলছে তেল উৎপাদক দেশগুলির মধ্যে।

কেন?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই লড়াইয়ের শুরুটা শেল বনাম শেখ থেকে। পাথরের খাঁজে আটকে থাকা গ্যাসকে তেলের বিকল্প জ্বালানি হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছিল আমেরিকা। তাতে প্রমাদ গোনে ওপেক দেশগুলি। শঙ্কিত বোধ করে রাশিয়া, ব্রাজিল, নাইজেরিয়ার মতো দেশগুলিও। তেল এবং গ্যাসই যাদের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। তাই দামের লড়াইয়ে শেল গ্যাসকে হারিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যেই শুরু হয় তেলের উৎপাদন বাড়ানো। যাতে সেই বাড়তি জোগানের ফলে নেমে আসা তেলের দামের সঙ্গে পাল্লা দিতে না-পেরে পিছু হটে শেল গ্যাস। সেই সঙ্গে, তেলের বাজারের দখল কার হাতে কতখানি থাকবে, তা নিয়েও লড়াই জোরালো হতে থাকে ক্রমশ।

২০১৫ সাল জুড়ে দেখা গিয়েছে, তেলের দাম হুড়মুড়িয়ে কমা সত্ত্বেও উৎপাদন ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটছে না প্রায় কোনও তেল উৎপাদকই। এমনকী এখন, যেখানে তেল বেচে তা তোলার খরচ জোগাড়ই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখনও উৎপাদন কমানোর নাম নেই কোনও দেশের।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিপুল লোকসান গুনেও গত বছর উৎপাদন না-কমানোর যে এই সিদ্ধান্ত, তার পিছনে রয়েছে ওই স্নায়ুর লড়াই। সকলেই মনে করছে, ক্রমাগত ক্ষতির এই বোঝা আর টানতে না-পেরে রণে ভঙ্গ দেবে কিছু প্রতিদ্বন্দ্বী। জোগান কমবে। ফলে ফের বাড়তে শুরু করবে দামও। মূলত এই আশাতেই গত বছর ব্যবসায় স্রেফ টিকে থাকতে চেয়েছে তারা। কিন্তু ২০১৫ সালের শেষ দিকে এসে সেখানেও জোর ধাক্কা খেতে হয়েছে তাদের। কারণ, তেল উৎপাদক দেশগুলি মনে করেছিল, গত বছরের মাঝামাঝি থেকে ছন্দে ফিরবে বিশ্ব অর্থনীতি। ফলে চাহিদা বাড়বে তেলের। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, হয়েছে উল্টোটা।

ঘুরে দাঁড়ানোর প্রাথমিক লক্ষণ চোখে পড়লেও, এখনও পুরোপুরি চাঙ্গা নয় মার্কিন অর্থনীতি। যেখানে তেলের চাহিদা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি। চাহিদায় শৈত্য বহাল ধুঁকতে থাকা ইউরোপীয় দেশগুলিতেও। আর এই সবের সঙ্গে তেল উৎপাদকদের কাছে সবচেয়ে বড় ধাক্কা চিনের অর্থনীতি নড়বড়ে হয়ে পড়া। তেলের দ্বিতীয় বৃহত্তম খরিদ্দার ওই দেশে শেয়ার বাজার টালমাটাল। কমছে তাদের মুদ্রা ইউয়ানের দর। ফলে অন্তত অদূর ভবিষ্যতে চাহিদা বাড়ার লক্ষণ নেই। অথচ উল্টো দিকে, গত বছরের অতিরিক্ত উৎপাদনের জেরে জমে রয়েছে ৩০০ কোটি ব্যারেল তেল। এই অবস্থায় তেলের দর শেষমেশ কোথায় ঠেকবে, তল মিলছে না তার।

অনেকে অবশ্য বলছেন, তেল তলানিতে ঠেকার উত্তর আসলে লুকিয়ে রয়েছে অন্য এক কূটনৈতিক লড়াইয়ের মধ্যে। তাঁদের মতে, রাশিয়ার অর্থনীতির মূল স্তম্ভ তেল এবং গ্যাস। তেলের দর তলানিতে ঠেলে ভ্লাদিমির পুতিনের দেশকে খাদের কিনারায় পৌঁছে দিতে চায় আমেরিকা। যাতে তেলের বাজারে কায়েম করা যায় নিজেদের আধিপত্য। রাশিয়া, ব্রাজিলের পায়ের তলার জমি কেড়ে আগামী দিনে মোটা মুনাফার মুখ দেখতে চায় ওপেক দেশগুলিও। সেই কারণে এই মুহূর্তে আমেরিকার মতোই লোকসান গুনতে পিছপা নয় তারা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, তেল ঘিরে এ এক নতুন ঠাণ্ডা লড়াই। যার মীমাংসা না-হওয়া পর্যন্ত তেলের দরের তল পাওয়া শক্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

International Crude Oil Price Decrease
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE