শোকার্ত: মৃত সন্তানকে কোলে নিয়ে হাহাকার। সোমবার ইরানের সারপোল-ই-জাহাবে। ছবি: এপি।
বাইরে হাড়কাঁপানো ঠান্ডা। স্থানীয় ঘড়িতে সময় তখনও রাত দশটা ছোঁয়নি। অনেকে খেতে বসেছিলেন। কেউ কেউ আবার শুয়েও পড়েছিলেন। হঠাৎই প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দিয়ে কেঁপে উঠল ইরান ও ইরাকের বিস্তীর্ণ অংশ। উপসাগরীয় অঞ্চলের অন্য একাধিক দেশেও তার রেশ ছড়াল। রিখটার স্কেলে কম্পনের তীব্রতা ছিল ৭.৩।
ইরানের পাহাড়ে ঘেরা পশ্চিম অংশ এবং সীমান্তের ও-পারে ইরাকে ইতিমধ্যেই মৃতের সংখ্যা চারশো ছাড়িয়েছে। জখম অন্তত ছয় হাজার। প্রশাসনের আশঙ্কা, মৃতের সংখ্যা বহু গুণ বাড়বে। ইরানের সরকারি সূত্রের খবর, রবিবারের ভূমিকম্পে সে দেশের অন্তত ১৪টি প্রদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব চেয়ে ভয়াবহ অবস্থা কেরমানশাহ প্রদেশের। কেরমানশাহের সারপোল-ই-জাহাব এলাকাতেই মৃত্যু হয়েছে ২৫০ জনের। প্রত্যন্ত গ্রামগুলোর দশা শোচনীয়। বহু এলাকায় ধসও নেমেছে। ভূমিকম্পের তীব্রতায় অধিকাংশ মাটির বাড়ি ভেঙে পড়েছে। আশঙ্কা, ভগ্নস্তূপে আটকে রয়েছেন অনেকে। অন্তত ৭০ হাজার মানুষ আশ্রয় শিবিরের সন্ধানে। তবে তেলের পাইপলাইন ও শোধনাগারগুলো অক্ষত রয়েছে বলে জানাচ্ছেন ইরানের তেল-বিষয়ক কর্তারা।
ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে সরকারি সংস্থাগুলোকে অনুরোধ জানিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা খামেনেই এবং প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। টুইটারে শোক প্রকাশ করে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ বিশ্বের একাধিক রাষ্ট্রপ্রধান।
• মৃত ৪০০
• জখম ৬০০০
• ভূমিকম্পের তীব্রতা ৭.৩ রিখটার স্কেল
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ইরানের অবস্থান ইউরেশীয় ও আরবীয় টেকটনিক প্লেটের সংযোগস্থলে। সেই কারণেই বারবার প্রবল ভূমিকম্পের কবলে পড়ে দেশটি। যেমন ২০০৩ সালের ২৬ ডিসেম্বরের ভূমিকম্পে প্রায় ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছিল ইরানের ঐতিহাসিক শহর বাম। ৬.৬ তীব্রতার সেই কম্পনে ৩১ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিলেন। সোমবার আমেরিকার ভূতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ কেন্দ্র (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ৭.৩ তীব্রতার ভূমিকম্পটির উৎসস্থল ছিল ইরাকের হালাবজা শহর।
ভূমিকম্প পরবর্তী অনুকম্পনের ভয়ে প্রবল ঠান্ডাতেও খোলা আকাশের নীচে রয়েছেন বাসিন্দারা। ইরানের সেসমোলজিক্যাল সেন্টার জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই ১১৮টি অনুকম্পন হয়েছে। সারপোল-ই-জাহাবের বাসিন্দা রেজা মহম্মদি যেমন তড়িঘড়ি বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন। একটা কিছু সঙ্গে নিতে পারেননি। পরিস্থিতি একটু শান্ত হতে বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করেন। তখনই ফের অনুকম্পন। ঢোকার মুখেই ভেঙে পড়ে রেজার বাড়ি।
ইরাকে ৭ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। জখম অন্তত ৫০। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দারবান্দিখান শহর। মাজিদা আমির নামে এক ইরাকি বলেন, ‘‘খেতে বসেছিলাম। হঠাৎই বাড়িটা দুলতে লাগল। প্রথমে ভেবেছিলাম কোনও শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছে হয়তো। ভুলটা ভাঙে আশপাশের লোকজনের আর্তনাদে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy