মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রাকিবুলের টুপিতে আইএসের লোগো।ঢাকার আদালত চত্বরে। নিজস্ব চিত্র
বিচারকের প্রশ্নের জবাবে জঙ্গি নিজেই জানাল, আইএস-এর লোগো দেওয়া টুপিটি সে কোথায় পেয়েছিল। আর তাতে ফের সামনে এসেছে ‘সর্ষের মধ্যে ভূত’-এর তত্ত্ব। প্রশ্ন উঠেছে, গুলশন হামলা নিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের ঘোষণাকে মিথ্যা প্রমাণ করতে পুলিশ-প্রশাসনের কোনও অংশই কি ভরা আদালতের মধ্যে আসামিদের হাতে আইএস-এর লোগো দেওয়া টুপি তুলে দিয়েছিল?
প্রথম দিন থেকে সরকার বলে আসছে, গুলশনের রেস্তরাঁয় হামলা চালানো জঙ্গিদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সংগঠন আইএস-এর যোগ নেই। এরা দেশীয় জঙ্গি সংগঠনের সদস্য। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল মঙ্গলবারেও বলেন, ‘‘আমরা সব সময়েই বলেছি, আমাদের দেশে আইএস নেই। এরা দেশীয় (হোমমেড) জঙ্গি। আইএস-এর সঙ্গে হয়তো যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল।’’ অভিযোগ উঠেছে— গুলশন হামলার রায়ের পরে ভরা আদালতে জঙ্গিদের আইএস-এর লোগো দেওয়া টুপি পরিয়ে বিশ্বকে বার্তা দেওয়া চেষ্টা হয়েছে, তারা ওই সংগঠনেরই সদস্য।
গুলশনের রেস্তরাঁয় ২০১৬-র ১ জুলাই হামলার পরে ২৫ জুলাই কল্যাণপুরে জঙ্গিদের একটি আড্ডা ঘিরে ফেলেছিল পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে লড়াইয়ে সেখানে ৯ জন জঙ্গি মারা যায়। জখম অবস্থায় ধরা পড়ে গুলশন হামলার পরিকল্পনাকারী রাকিবুল হাসান রিগ্যান। গুলশন হামলায় এই রিগ্যানের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে এবং সে দিন রায়ের পরে তাকেই আদালতের মধ্যে আইএস-টুপি পরে দেখা গিয়েছে। এ দিন সেই জঙ্গিকে কল্যাণপুরের মামলায় আদালতে তোলা হয়। এই মামলার বিচারক মজিবুর রহমানই ছ’দিন আগে গুলশন মামলার রায় দিয়েছিলেন। আদালতে বিচারক সরাসরি জঙ্গি রিগ্যানকে জিজ্ঞেস করেন, ‘‘সে দিন কার কাছ থেকে তুমি ওই টুপি পেয়েছিলে?’’
টুপি যে কারাগার থেকে আসেনি, কারা বিভাগের কমিটি তদন্ত করে তা সরকারকে জানিয়েছে। কোথা থেকে আসামি এই টুপি পেল, তা জানতে গোয়েন্দা পুলিশের আরও একটি কমিটি তদন্ত করছে। এই পরিস্থিতিতে বিচারক নিজেই প্রশ্ন করলে রিগ্যান জানায়, আদালতে ভিড়ের মধ্যে ‘অচেনা এক জন’ তার হাতে টুপিটি দেয়। বিচারক জানতে চান, শুধু তাকেই দিয়েছিল, নাকি অন্যদেরও? জঙ্গি জানায়, আর কারও হাতে টুপি দেওয়া হয়নি, তবে আর এক আসামি জাহাঙ্গির হোসেন রাজীব গাড়িতে উঠে তার থেকে টুপিটি নিয়ে মাথায় পরে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলে।
গুলশন হামলার রায়ের দিন আদালতে ছিল কঠোর নিরাপত্তা। আইনজীবী ও বাছাই করা সংবাদকর্মী ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। আসামিদের চার পাশেও ছিল ঝাঁক ঝাঁক পুলিশের পাহারা। সেখানে পুলিশের অগোচরে জঙ্গিদের হাতে আইএস-টুপি পৌঁছে দেওয়াটা খুবই কঠিন। সম্প্রতি ঢাকা হাইকোর্ট মন্তব্য করেছে, আদালতে টুপি কাণ্ড প্রমাণ করে সর্ষের মধ্যেই ভূত রয়েছে। পুলিশ-সূত্র যদিও বলছে, তদন্তে এক জন জাল আইনজীবীর হদিশ মিলেছে, যে আসামিদের হাতে ওই টুপি পৌঁছে দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল এ দিন বলেন, ‘‘কারাগার থেকে যে টুপি আসেনি, সেটা জানা গিয়েছে। পুলিশ বলছে, তারা কাউকে টুপি তুলে দিতে দেখেনি। কাজেই কী ভাবে আসামিদের হাতে টুপি এল, তা তদন্তেই প্রকাশ পাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy