Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

ট্রাম্পের কোপে অ্যাটর্নি জেনারেল, সাংবাদিকও

একই সঙ্গে হাউসের দখল নেওয়া ডেমোক্র্যাটদের প্রেসি়ডেন্ট হুমকি দিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে কোনও রকম তদন্ত শুরু হলে তিনিও ‘যুদ্ধং দেহি’ মনোভাব নেবেন। তাঁর কথায়, ‘‘ওরা (ডেমোক্র্যাটরা) কোনও চাল চালতেই পারে। কিন্তু আমরা আরও বড় খেলোয়াড়।’’

ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনস (বাঁ দিকে)। —ফাইল চিত্র।

ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনস (বাঁ দিকে)। —ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৮ ০০:৪৩
Share: Save:

রিপাবলিকান দল হাউসের দখল হারানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দু’জন ‘ঝামেলাবাজ’কে সরিয়ে দিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথম জন, অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনস। যিনি কিছু দিন আগে পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের বিশ্বস্ত সঙ্গী বলেই পরিচিত ছিলেন। সম্প্রতি রবার্ট ম্যুলারের সমর্থনে মুখ খুলে প্রেসিডেন্টের বিরাগভাজন হন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ নিয়ে তদন্ত করছেন বিশেষ কৌঁসুলি ম্যুলার। ‘সরিয়ে দেওয়া’ হয়েছে মার্কিন চ্যানেল সিএনএনের সাংবাদিক জিম অ্যাকোস্টাকেও। হোয়াইট হাউসের বিশেষ প্রতিবেদক ছিলেন তিনি। একই সঙ্গে হাউসের দখল নেওয়া ডেমোক্র্যাটদের প্রেসি়ডেন্ট হুমকি দিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে কোনও রকম তদন্ত শুরু হলে তিনিও ‘যুদ্ধং দেহি’ মনোভাব নেবেন। তাঁর কথায়, ‘‘ওরা (ডেমোক্র্যাটরা) কোনও চাল চালতেই পারে। কিন্তু আমরা আরও বড় খেলোয়াড়।’’

কাল সন্ধেবেলা হোয়াইট হাউসে সাংবাদিক বৈঠকে ডেকেছিলেন ট্রাম্প। সেই বৈঠকেই ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে এ ধরনের বাক্যবাণ প্রয়োগ করেন প্রেসিডেন্ট। বলেন, ‘‘ওদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে চাইছি। কিন্তু বেচাল দেখলেই পিছিয়ে আসব। তখন বল এক বার আমাদের কোর্টে, আর এক বার বল ওদের কোর্টে— এ ভাবেই দু’বছর পার হয়ে যাবে। কোনও কাজ হবে না।’’

বিরোধী দলের হাতে সেনেট বা হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস থাকা আমেরিকার ইতিহাসে নতুন নয়। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের আমলে একটা সময়ে হাউস ও সেনেট, দু’টোই ছিল বিরোধী রিপাবলিকানদের হাতে। আট বছর পরে হাউসের দায়িত্ব পেয়ে ডেমোক্র্যাটরা চাইছে, প্রেসিডেন্টের বিভিন্ন বিতর্কিত সিদ্ধান্তে ‌কিছুটা রাশ পড়ুক। বিরোধী নেত্রী ও হাউসের সম্ভাব্য স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির কথায়, ‘‘সংবিধানের প্রতি আমাদের একটা দায়বদ্ধতা রয়েছে। আশা করি নতুন হাউস ট্রাম্প-প্রশাসনের উপর নজরদারি চালানোর কাজে সফল হবে।’’

সেই নজরদারির পথ যে তিনি খোলা রাখতে চান না, তার ইঙ্গিত কাল নিজেই দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট। ২০১৬-র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ সংক্রান্ত তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট ম্যুলার ফের এ নিয়ে চাপ বাড়াতে পারেন বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। সেই জল্পনাতে আরও ইন্ধন জুগিয়ে কাল রাতে অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনসকে বরখাস্ত করেন ট্রাম্প। পদত্যাগপত্রে সেশনস ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন, ‘‘আপনার নির্দেশ মতোই আমি ইস্তফা দিলাম।’’ বরখাস্ত করার খবর নিজেই টুইট করেন প্রেসিডেন্ট। তবে কেন তিনি এই নির্দেশ দিয়েছেন, তার কোনও ব্যাখ্যা প্রেসিডেন্ট দেননি। কূটনীতিকদের একাংশ বলছেন, ম্যুলারের পায়ে বেড়ি পরাতেই এই সিদ্ধান্ত। সেশনসের জায়গায় ট্রাম্প যাঁকে নিয়ে এসেছেন, সেই ম্যাথ্যু হুইটেকার ঘোষিত ম্যুলার-বিরোধী।

গতকালের সাংবাদিক বৈঠকেই প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বাগ্-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েছিলেন সিএনএনের সাংবাদিক ও হোয়াইট হাউসে পরিচিত মুখ জিম অ্যাকোস্টা। প্রথম সারি থেকে তিনি ট্রাম্পের উদ্দেশে একের পর এক প্রশ্নবাণ ছুড়ছিলেন। তখন জিমের হাত থেকে মাইক নিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন হোয়াইট হাউসের এক মহিলা ইন্টার্ন। অভিযোগ, সেই মহিলার গায়ে হাত দেন জিম। তারপরেই জিমের ‘অ্যাক্রেডিশন’ (হোয়াইট হাউসের সাংবাদিক বৈঠকে যোগ দেওয়ার বিশেষ অনুমতি) কেড়ে নেওয়া হয়। হোয়াইট হাউসের মিডিয়া সচিব সারা স্যান্ডার্সের কথায়, ‘‘ওই ইন্টার্ন নিজের কাজ করছিলেন মাত্র। হোয়াইট হাউসের কোনও কর্মীর সঙ্গে অভব্য আচরণ কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।’’ সোশ্যাল মিডিয়ায় কয়েক সেকেন্ডের সেই ‘ধস্তাধস্তি’র ভিডিয়ো পোস্ট করে ট্রাম্প-বিরোধীরা অবশ্য বলতে শুরু করেছেন, দেখা যাচ্ছে জিম কিছুই করেননি, বরং মহিলাই জিমকে শারীরিক ভাবে হেনস্থা করছেন। টুইটারে এক ডেমোক্র্যাট সমর্থক মন্তব্য করেন, ‘‘এটাই ট্রাম্প প্রশাসন। যুক্তি দিয়ে না পারলে, গায়ের জোর ফলাতে শুরু করুন!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE