Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

আইএস দমনে যুদ্ধের প্রস্তুতি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের

গত ক’দিন ধরে সুর চড়িয়েছেন ধাপে ধাপে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে সাত দিন পূর্ণ করতে না করতেই সপ্তমে পৌঁছে গেলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আস্তিন থেকে বের করে আনলেন চরম তাসটি।

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩৪
Share: Save:

গত ক’দিন ধরে সুর চড়িয়েছেন ধাপে ধাপে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে সাত দিন পূর্ণ করতে না করতেই সপ্তমে পৌঁছে গেলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আস্তিন থেকে বের করে আনলেন চরম তাসটি।

যুদ্ধ!

যে যুদ্ধে ট্রাম্পে প্রধান প্রতিপক্ষ জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস। আজ একটি নয়া নির্দেশে সই করেছেন ট্রাম্প। তাতে মার্কিন সেনাকে বলা হয়েছে, কী ভাবে আইএস-কে পরাস্ত করা যায়, আগামী ৩০ দিনের মধ্যে তা নিয়ে একটি সুসংহত রণকৌশল তৈরি করতে। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে প্রেসিডেন্টের কাছে সেটি জমা দিতে হবে। তাৎপর্যপূর্ণ হল, আন্তর্জাতিক আইন মানতে গিয়ে যদি মার্কিন আইন বা রণনীতিকে কিছুটা পিছু হটতে হয়, সেই বাধা দূর করার সুপারিশও রাখা হয়েছে ওই নির্দেশে।

অর্থাৎ বার্তা পরিষ্কার— ‘আজ বাদে কাল যুদ্ধ। তৈরি হও সেনা!’

আজই তাঁর জমানায় প্রথম বার ইয়েমেনে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তাতে সন্দেহভাজন ৪১ জন আল-কায়দা জঙ্গির পাশাপাশি মহিলা ও শিশু-সহ ১৬ জন সাধারণ মানুষেরও মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। মারা গিয়েছেন এক মার্কিন কম্যান্ডোও। যদিও ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন, আল-কায়দা নয়, তাঁর আসল নিশানা আইএস। আজকের নির্দেশে তিনি বলেছেন, আইএস-কে নিয়ে আমেরিকার চিন্তাটা শুধু ইসলামি জঙ্গিবাদের জন্য নয়। তারাই সবচেয়ে নিষ্ঠুর ও আগ্রাসী জঙ্গিদের মধ্যে পড়ে। যারা নিজেদের আলাদা রাষ্ট্র তৈরি করতে চায়। যারা রাসায়নিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা চালায়। এক দিকে মার্কিনদের মধ্যে মৌলবাদ ছড়ায়। আবার উপদ্রব চালায় আমেরিকার ‘বন্ধুদের’ উপরেও। ট্রাম্প তাই মনে করছেন, আইএস-কে ক্ষমতায় থাকতে দেওয়ার অর্থ বিপদ বাড়তে দেওয়া। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাফ কথা, ‘‘ওদের সঙ্গে কোনও সমঝোতা হতে পারে না।’’

মার্কিন সাংবাদিক জেমস ফলি, স্টিফেন সটলফ, স্বেচ্ছাসেবী পিটার কাসিগ-দের মাথা কেটে খুন করেছিল আইএস। তাদের হাতে বন্দি থাকার সময়েই মৃত্যু হয় মানবাধিকার কর্মী যুবতী কায়ালা মুলারের। তা ছাড়া, ২০১৫-র ডিসেম্বরে ক্যালিফোর্নিয়ার সান বার্নার্দিনো কিংবা ২০১৬-র জুনে ফ্লোরিডার অর্ল্যান্ডো— প্রতিটি হামলাতেই প্রমাণিত হয়েছে আইএস-যোগ। গত বৃহস্পতিবার একটি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেই সব হামলার প্রসঙ্গ তুলে ট্রাম্প বলেছেন, ‘‘ওরা (আইএস জঙ্গিরা) হল কয়েকটা নোংরা, অসুস্থ ইঁদুর। যারা গির্জায় বা সুপার মার্কেটে বোমা ফাটিয়ে লোক মারে। ওদের সঙ্গে লড়াইটা শক্ত।’’ কেন? ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উপমা টেনে ট্রাম্প বলেছেন, ‘‘জার্মানি বা জাপানের সেনাবাহিনী নিজেদের পোশাক পরে লড়াই করে। আমাদের শত্রুদের কোনও ইউনিফর্ম নেই। তাই লড়াইটা কঠিন। কিন্তু আমরা জিতবই।’’

আইএস-বিরোধী যুদ্ধের সুসংহত পরিকল্পনায় কী কী থাকতে হবে, তার একটা মোটামুটি আভাস দেওয়া হয়েছে ওই নির্দেশে। যেমন বলা হয়েছে, তথ্য সংগ্রহ ও সাইবার অভিযানে বিশেষ জোর দিয়ে এবং জনমত গড়ে তুলে আইএস-কে একঘরে করে দিতে হবে। আইএস ও তার সঙ্গীদের সঙ্গে লড়তে নতুন নতুন জোটসঙ্গী খুঁজতে হবে। চাঁদা থেকে শুরু করে চোরাই প্রত্নসামগ্রী বিক্রি, মানুষ পাচার— নানা ভাবে টাকা আসে আইএসের হাতে। সেই টাকার জোগান বন্ধ করতে হবে।

তবে কূটনীতিকদের একাংশের আশঙ্কা, শুধু ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেই ট্রাম্প নিরস্ত হবেন— এমন ভাবার কারণ নেই। শুক্রবার পেন্টাগনে সেনাবাহিনীর আধুনিকীকরণের যে নির্দেশে তিনি সই করেছেন, তাতে পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার বাড়ানোর কথা যেমন রয়েছে, তেমনই আছে প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব। এবং সংবাদমাধ্যমের একাংশের দাবি, নিকটতম ‘দুই প্রতিদ্বন্দ্বী’র বিরুদ্ধে অভিযান কী ভাবে চালানো যায়, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে নয়া প্রতিরক্ষা সচিব জেমস ম্যাটিসকে। রয়েছে ‘আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জারের’ কথাও। বিশেষজ্ঞরা মনে করাচ্ছেন, পরমাণু শক্তিধর চিন ও রাশিয়াকে বোঝাতে ওই ‘নিকটতম দুই’ লব্জটাই ব্যবহার করেন মার্কিন কর্তারা। আর ‘আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জার’? ইরান। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, চিনা সেনার ওয়েবসাইটে এক কর্তাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ‘‘ট্রাম্পের আমেরিকার সঙ্গে যুদ্ধটা ক্রমশ স্লোগান থেকে বাস্তব হয়ে উঠছে।’’

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উপমা টেনেছিলেন ট্রাম্প। সেনাকে তৈরি হতে বলেছেন। কিন্তু তাঁর চোখে ‘আসল’ যুদ্ধ কোনটা? তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ? উত্তর নেই। আছে চর্চা, উদ্বেগ, আর অপেক্ষা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Donald Trump ISIS Destroy Planning
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE