কার্ল পুইদমঁ
আশঙ্কা সত্যি করে ক্যাটালোনিয়ার প্রাক্তন প্রাদেশিক প্রেসিডেন্ট কার্ল পুইদমেঁর বিরুদ্ধে বিশেষ ইউরোপীয় আইনে জারি করা হল গ্রেফতারি পরোয়ানা।
পুইদমঁকে যে জেলে পোরা হতে পারে, সে গুঞ্জন উঠেছিল আগেই। এমনকী এই খবর ছড়াতে বেলজিয়াম তড়িঘড়ি রাজনৈতিক আশ্রয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল তাঁকে। ‘আশ্রয়’ বলে স্বীকার না করলেও, পুইদমঁ আপাতত দেশ ছেড়ে বেলজিয়ামেই রয়েছেন। আর ঠিক সেই কারণে, ভাইস প্রেসিডেন্ট-সহ আট মন্ত্রীকে গ্রেফতার করা পরেই বিশেষ ইউরোপীয় আইনে তাঁকে গ্রেফতার করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন মাদ্রিদের আইনজীবীরা। আজ সেটাই হল। পাশ হল প্রস্তাব। পুইদমঁ ছাড়াও আরও চার বহিষ্কৃত মন্ত্রীকে ওই একই আইনে গ্রেফতার করা হতে পারে।
প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ— দেশদ্রোহ, উস্কানিমূলক বক্তৃতা ও সরকারি অর্থের অপব্যবহার করে স্বাধীনতা ঘোষণা ইত্যাদি। ৫৪ বছর বয়সি প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে সমন জারি করে আদালত। কিন্তু গত কাল কোর্টের সামনে হাজির হননি তিনি। তার পরেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে মাদ্রিদ কোর্ট।
স্পেনের উত্তরপূর্বে ক্যাটালোনিয়া প্রদেশে ৭৫ লক্ষ মানুষের বাস। ২০১৬ সালের জানিয়ারি মাসে তার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন পুইদমঁ। তখনও তিনি স্পেনের রাজনীতিতে এক রকম নতুন মুখই বলা চলে। পাহাড়ে ঘেরা আমের নামে একটা ছোট্ট গ্রামে পুইদমেঁর বড় হয়ে ওঠা। ১৭ বছর সাংবাদিকতা করার পরে রাজনীতিতে হাতেখড়ি। ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত গিরোনায় মেয়র ছিলেন। প্রথম থেকেই তাঁর গলায় ছিল বিচ্ছিন্নতাবাদী সুর। শোনা যায়, সেই সুরে সুর মিলিয়ে লাফিয়ে বেড়েছিল তাঁর জনপ্রিয়তা। মেয়র থেকে একেবারে প্রাদেশিক প্রেসিডেন্ট। ২০১৬তে প্রেসিডেন্টের গদিতে বসার পর থেকেই গণভোটের দাবি জানিয়েছিলেন তিনি। শেষমেশ যে লড়াইয়ে বিপুল ভোটে জিতেও যান পুইদমঁ। আদালতের নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে ক্যাটালোনিয়ার স্বাধীনতার দাবিতে ১ অক্টোবর গণভোটের ডাক দেন তিনি। জয় আসে তাতেও। ঘোষণা করা হয় স্বাধীনতা। কিন্তু রাত ফুরোনোর আগেই শেষ হয় স্বাধীনতার মেয়াদ। ক্যাটালোনিয়ার স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নিয়ে ভেঙে দেওয়া হয় পার্লামেন্ট। ‘অবাধ্যতার’ অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়েছিল প্রাদেশিক প্রেসিডেন্ট কার্ল পুইদমঁ-সহ বিচ্ছিন্নতাকামী নেতাদের। সরানো হয় ক্যাটালোনিয়ার পুলিশ প্রধানকেও। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাহয় জানিয়েছিলেন, ক্যাটালোনিয়ায় নতুন করে ভোট হবে আগামী ২১ ডিসেম্বর। বহিষ্কৃত প্রেসিডেন্টকেও লড়াইয়ের ময়দানে নামার আহ্বান জানানো হয়। তখনই প্রশ্ন উঠেছিল, আদৌ কি পুইদমেঁর সঙ্গে সুবিচার করবে মাদ্রিদ? তা হলে কেন ভেস্তে দেওয়া হল গণভোট?
পুইদমঁও এ দিন বলেন, ‘‘আমি তো ভোটে জিতেছিলাম। তা হলে ভোট হওয়ার মানে কী?’’ তাঁর অভিযোগ, সম্পূর্ণ ‘বেআইনি ভাবে’ ক্যাটালোনিয়ার পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়েছেন রাহয়। বলেন, ‘‘রাজনৈতিক সমস্যা যদি মেটাতে চান, তা হলে সেটা রাজনীতির পথেই করুন। শুধুমাত্র ভিন্ন মত প্রকাশ করার জন্য কারও জেল হতে পারে না!’’ কূটনীতিকদের একাংশের মতে, বিটলসের কায়দায় চুল ছাটা পুইদমঁ গোড়াতেই রাহয়ের কুনজরে পড়েছিলেন। তাঁর জনপ্রিয়তা মাদ্রিদের সঙ্গে শত্রুতা বাড়িয়ে দেয়।
তবে অনেকেরই মতে, এই বিচ্ছিন্নতাবাদী সুরের জন্য দায়ী মাদ্রিদ ও তার একের পর এক ভুল নীতি। এ বারও যেমন গ্রেফতারের পথে হেঁটে বিক্ষোভের আগুনে ঘি ঢালছেন রাহয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy