Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

উত্তপ্ত শ্রীলঙ্কায় বন্ধ হল ফেসবুক

অশান্তির কেন্দ্রবিন্দু ক্যান্ডিতে আজ ফের জারি হয়েছে কার্ফু। নিহতের সংখ্যা ২। পোড়া দোকান আর বসতবাড়ির পাশ দিয়ে চলছে সেনা টহল। 

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

পি কে বালচন্দ্রন
কলম্বো শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৮ ০৩:০৬
Share: Save:

জরুরি অবস্থার দ্বিতীয় দিনে শ্রীলঙ্কা জুড়ে বন্ধ হল ফেসবুক। হোয়াটস্অ্যাপে শুধু মেসেজ করা যাচ্ছে, ফোন নয়। বন্ধ ইনস্টাগ্রাম, ভাইবারও। প্রশাসন মনে করছে, বৌদ্ধ ও মুসলিমদের মধ্যে সংঘর্ষে ইন্ধন জোগাতে ব্যাপক ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে সোশ্যাল সাইটগুলিকে।

অশান্তির কেন্দ্রবিন্দু ক্যান্ডিতে আজ ফের জারি হয়েছে কার্ফু। নিহতের সংখ্যা ২। পোড়া দোকান আর বসতবাড়ির পাশ দিয়ে চলছে সেনা টহল।

সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধরা বলছেন, পুলিশ সময়মতো সক্রিয় হলে পরিস্থিতি এত দূর গড়াত না। ক্যান্ডিতে এ বারের গোলমালের মূলে ২২ ফেব্রুয়ারি রাতের একটা ঘটনা। সে দিন ক্যান্ডির কাছে দিগানা শহরে একদল মদ্যপ প্রচণ্ড মারধর করে কুমারসিংহে নামে এক লরিচালককে। অটোয় সওয়ার ওই যুবকদের অভিযোগ, কুমারসিংহে নাকি তাদের রাস্তা ছাড়ছিলেন না। গত ৩ মার্চ হাসপাতালে মারা যান ওই লরিচালক। বৌদ্ধদের দাবি, ইচ্ছে করেই কোনও অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। সমঝোতা হয়ে গিয়েছে তলায় তলায়। অথচ কুমারসিংহের শেষকৃত্যের জমায়েত থেকে আটক করা হয়েছিল ২৭ জন বৌদ্ধকে। কার্যত এর পরেই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে পরিস্থিতি।

দুই গোষ্ঠীর ছাইচাপা উত্তেজনা বরাবরই ছিল। নানা ঘটনায় তা-ই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ক্যান্ডির ঠিক আগেই যেমন ধর্মীয় অশান্তি ছড়িয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব শ্রীলঙ্কার আম্পারায়। হাঙ্গামার শুরু এক গুজব থেকে। তা হল, আম্পারায় মুসলিম রেস্তোরাঁগুলোর খাবারে নাকি এমন কোনও ওষুধ মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা খেলে পৌরুষ হারাচ্ছেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা।

শ্রীলঙ্কার বৌদ্ধদের অনেকের ধারণা, জনসংখ্যা বাড়িয়ে এ দেশে জাঁকিয়ে বসতে চাইছেন সংখ্যালঘুরা। সৌদি আরবের প্রভাবে ডালপালা ছড়াচ্ছে মুসলিম কট্টরপন্থা। তৈরি হচ্ছে সাংস্কৃতিক দূরত্ব। এই আবেগ থেকেই ‘শ্রীলঙ্কা শুধু সিংহলি বৌদ্ধদের জন্য’ নাম দিয়ে শুরু হয়েছে প্রচার। তামিল জনগোষ্ঠীর উপরেও ক্ষুব্ধ বৌদ্ধরা।

সেই সঙ্গে রয়েছে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ। প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপাল সিরিসেনা এবং প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহে সংখ্যালঘুদের প্রতি নরম বলে মনে করেন বৌদ্ধরা। তাঁদের মতে, মহিন্দা রাজাপক্ষের জমানায় এই লক্ষণ ছিল না। বিরোধী এমপি উদয় গমনপিলার কথায়, ‘‘মানুষ যখন পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলছে, তখন ক্যান্ডির ওই হত্যাকাণ্ডের পরেই পুলিশের সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল।’’ এমনকী শ্রীলঙ্কা সরকারের তামিল মন্ত্রী মানো গণেশনও অভিযোগ করছেন, চেষ্টা করেও প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী— কারও সঙ্গেই তিনি যোগাযোগ করতে পারেননি।

১০ দিনের ঘোষিত জরুরি অবস্থার সবে দু’টো দিন পেরোল। দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ দেখা দেশটাকে নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন, ‘আবার এত রক্ত কেন?’

(লেখক স্থানীয় সাংবাদিক)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE