Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

কোথায় রয়েছে ছ’বছরের মেয়ে, জানা নেই বাবার

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘জ়িরো টলারেন্স’ নীতির ধাক্কায় উইডোসের মতো আরও অন্তত দু’হাজার পরিবার বিপাকে পড়েছে। প্রেসিডেন্টের নির্দেশেই আমেরিকায় অনুপ্রবেশের জেরে আটক প্রত্যেক পরিবারের থেকে শিশুদের আলাদা করা হয়েছে এত দিন। দেশ জুড়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে গত সপ্তাহে নিজের সিদ্ধান্ত থেকে কিছুটা পিছু হটেছেন ট্রাম্প।

ছবি: এএফপি।

ছবি: এএফপি।

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৮ ০২:৫৪
Share: Save:

কথাগুলো মাথা থেকে বেরোচ্ছেই না বছর ছাব্বিশের যুবকের। সবুজ ইউনিফর্ম পরা অভিবাসন দফতরের কর্মীরা এসে তাঁকে বলেছিল, ‘‘সবটাই সাময়িক ব্যাপার। অভিবাসী আটক কেন্দ্রের সেলটা বড্ড ঠান্ডা। অতটুকু মেয়ের কষ্ট হবে। ওকে এখন নিয়ে যাচ্ছি। চিন্তা করবেন না।’’ ছ’বছরের মেয়ের সঙ্গে সেই শেষ দেখা আর্নোভিস উইডোস পোর্টিও-র। এতগুলো মাস কেটেছে। উইডোসকে এল সালভাদোরে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। মেবেলিন হয়তো আমেরিকারই কোথাও রয়েছে, জানা নেই তার বাবার।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘জ়িরো টলারেন্স’ নীতির ধাক্কায় উইডোসের মতো আরও অন্তত দু’হাজার পরিবার বিপাকে পড়েছে। প্রেসিডেন্টের নির্দেশেই আমেরিকায় অনুপ্রবেশের জেরে আটক প্রত্যেক পরিবারের থেকে শিশুদের আলাদা করা হয়েছে এত দিন। দেশ জুড়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে গত সপ্তাহে নিজের সিদ্ধান্ত থেকে কিছুটা পিছু হটেছেন ট্রাম্প। শিশুদের পরিবার থেকে আলাদা করার প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। তাতেও অবশ্য বহু বাবা-মা প্রশাসনিক জটে পড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছেন। সন্তান কোথায়, তাঁরা জানেনই না। আদৌ কখনও একসঙ্গে হতে পারবে কি না, সে নিয়ে দুশ্চিন্তায়।

আরও পড়ুন: শরণার্থী জাহাজে ইউরোপের ৫ এমপি

‘‘কেউ আমেরিকায় যাবেন না। সন্তানকে নিয়ে তো নয়ই। আমার মতো অবস্থায় যেন কেউ না পড়ে,’’ চোখের জল মুছতে মুছতে বললেন উইডোস। দেশে ফিরে একটা এক-কামরার ঘর জোগাড় করেছেন। অন্ধকার, সূর্যের আলো ঢোকে না। বিদ্যুৎ নেই। ঘরের এক কোণে ক’টা ছাগল রয়েছে। তাদের সঙ্গেই বাস। জানালেন, যত কষ্ট করেই হোক না কেন, অর্থের ব্যবস্থা করে ফের আমেরিকা যেতে চান তিনি। ‘‘মেবেলিনকে ফিরিয়ে আনতে হবেই,’’ বললেন উইডোস।

মার্কিন শুল্ক এবং সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মুখপাত্র একটি বিবৃতি জারি করে বলেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ তাঁরা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। এ-ও জানিয়েছেন, তাঁদের মহিলা কিংবা পুরুষ কর্মীরা নিজেদের দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র। সেটাও যথেষ্ট সম্মান দেখিয়ে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘শিশুদের বিষয়টি ভীষণ স্পর্শকাতর। তাদের কীসে ভাল, সেটাই প্রথমে দেখা হচ্ছে।’’ অভিবাসন, শুল্ক, এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) বিভাগের মুখপাত্র সারা রডরিগেজ় বলেন, ‘‘গত ১৯ জুন উইডোস লিখিত ভাবে জানিয়েছেন মেয়েকে ছাড়াই তাঁকে এল সালভাদোরে ফেরত পাঠানো হয়েছে। কিন্তু আইসিই-র হেফাজতে থাকা প্রত্যেকে চাইলে প্রিয়জনের জন্য অপেক্ষা করতে পারেন। সেই অধিকার তাঁদের রয়েছে।’’

কিন্তু কই, তাঁকে তো এ সব বলা হয়নি, দাবি উইডোসের। গত শুক্রবার সমুদ্রতীরবর্তী ইউসুইউটান প্রদেশে পৌঁছেছেন তিনি। আপাতত ভুট্টা খেতে কাজ নিয়েছেন। তাতে দৈনিক ৭ ডলার রোজগার হয়। এক কামরার ঘরটা পেতে তাঁকে সাহায্য করেছেন ভাই। দু’টি গদি রয়েছে। একটা মেবেলিনের জন্য। ওর ছোট্ট ছোট্ট জামাকাপড়গুলোও সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছেন উইডোস।

দেশে ফেরার কিছু ক্ষণের মধ্যে একটা ফোন আসে। ও পারে ভেসে ওঠে মেবেলিনের আধো আধো গলা। কান্না চেপে মেয়েকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘‘তুমি কি খেলছ? খেয়েছ? কে স্নান করিয়ে দিল? কে চুল বেঁধে দিল?’’ জবাবে খুদের একটাই কথা, ‘‘পাপা, কবে আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবে?’’ আর কান্না চাপতে পারেননি উইডোস। বারবার জিজ্ঞাসা করেও অভিবাসন দফতরের কেউ বলেননি, মেবেলিনকে কোথায় রাখা হয়েছে? সেই থেকে ভেবে যাচ্ছেন কী ভাবে মেয়েকে ফিরে পাবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE