আগুন নেভানোর চেষ্টায় এক দমকলকর্মী।—ছবি এপি
উডল্যান্ড হিলস-এর একটি স্কুলে অস্থায়ী শিবির। সেখানকারই টাউন হলে তিন ঘণ্টা ধরে বৈঠক চলছিল। আগুনের বর্তমান গতিবিধি ঠিক কী, কোন কোন অংশ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত, তা-ই বোঝানো হচ্ছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের। ক্যালিফর্নিয়ার দক্ষিণাংশে লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ এখন এই শিবিরেই গত চার দিন ধরে আশ্রয় নিয়েছেন। আচমকাই পুলিশের উপর রাগে ফেটে পড়লেন এক মহিলা। ‘‘পড়শিদের কারও বাড়ি আর আস্ত নেই। আমারটা আছে কি না, দয়া করে জানাবেন?’’ কথাগুলো শেষ করেই ফুঁসতে থাকেন ওই মহিলা। দমকল কর্মীরা কেন বাড়িগুলো বাঁচাতে পারছেন না, তা নিয়েও পুলিশকে একগুচ্ছ কথা শুনিয়ে ফেললেন তিনি।
দাবানলের আগুনে ত্রস্ত ক্যালিফর্নিয়ার এটা একটা টুকরো ছবি মাত্র। দিন যত এগোচ্ছে, হারাচ্ছে ধৈর্যের বাঁধ। নিখোঁজ প্রিয়জনরা কেমন আছেন, কোথায় আছেন, জানার জন্য ছটফট করছেন মানুষ। প্যারাডাইস শহরের বেশ কিছু দমকলকর্মীর নিজেদের বাড়িও পুড়ে ছাই। আপাতত আট হাজার দমকলকর্মী এক নাগাড়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে পুরোপুরি তাকে কাবু করা যায়নি এখনও। দাবানলের তাণ্ডবের চার দিন পেরিয়ে গিয়েছে। আর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। শেষ কবে দাবানল এতটা বিধ্বংসী ছিল, মনে করতে পারছে না ক্যালিফর্নিয়া। গোটা প্রদেশে পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছে ৬,৭০০টি বাড়ি। উত্তর থেকে দক্ষিণ ধ্বংসের ছবিটা সর্বত্রই একই রকম। তবে ক্ষয়ক্ষতির দিক থেকে দক্ষিণকে অনেকটাই পিছনে ফেলে দিয়েছে উত্তর। ‘ক্যাম্প ফায়ার’-এ জেরে সেখানে ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে ২৭ জনের। দক্ষিণ ক্যালিফর্নিয়ায় আগুনের বলি দু’জন। রাজ্যে নিখোঁজের সংখ্যা ২২৮। এঁদের মধ্যে বেশির ভাগকেই জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করার আশা দেখছেন না কেউ। যাঁদের দেহ উদ্ধার হচ্ছে, তাঁরাও আর চেনার অবস্থায় নেই। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে দেহাংশ শনাক্ত করতে জরুরি ভিত্তিতে কয়েকটি পরীক্ষাগার খোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই অবস্থায় ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে সাহায্যের আর্তি জানিয়েছেন ক্যালিফর্নিয়ার গভর্নর জেরি ব্রাউন। কয়েক দিন আগেই একটি টুইটে বন বিভাগের উপর সমস্ত বিপর্যয়ের দায় চাপিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বন বিভাগের দুর্বল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ফেডারেল অনুদান বন্ধ করার হুমকিও দেন। কিন্তু গভর্নর আপাতত এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষত মেরামতের জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের উপরেই ভরসারাখছেন। সাংবাদিকদের জানিয়েছে, ‘স্টেট’ ও ‘ফেডারেল’-এই দু’ধরনের অনুদান না পেলে তাঁদের পক্ষে মুখ তুলে দাঁড়ানো কার্যত অসম্ভব।
কালই আবহবিদেরা ঝোড়ো হাওয়া নিয়ে সতর্ক করেছিলেন। আশঙ্কা সত্যি প্রমাণিত হয়েছে। শুষ্ক ও ঝোড়ো হাওয়ায় উত্তর ক্যালিফর্নিয়ায় ফের বেড়েছে দাবানলের গতি। ঘণ্টায় ৫০ মাইল বেগে আসা সেই হাওয়ায় আগুন ছড়াচ্ছে দ্রুত। দক্ষিণে আগুন গতি পাচ্ছে ‘সান্টা আনা’ হাওয়ায়। মঙ্গলবার বিকেল চারটে পর্যন্ত আবহাওয়া এমন থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। এখনও প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। মঙ্গলবারের আগে অবস্থার উন্নতির সম্ভাবনা নেই।
আরও পড়ুন: অকাল ভোটের বিরোধিতায় কোর্টে শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন দল
তবে লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির একাংশের বাসিন্দারা বাড়ি ফেরা শুরু করেছেন আজ থেকে। ‘উলজে ফায়ার’ সেখানে খানিকটা সংযত এখন। অভিজাত ম্যালিবু শহরে পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছে বেশ কিছু হলিউড তারকার বাড়ি। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন মাইলি সাইরাস, জেরার্ড বাটলার, নীল ইয়ংয়ের মতো সেলিব্রিটি। মাইলি টুইটারে জানিয়েছেন, ক্যালিফর্নিয়ার আগুনে আগেও এক বার তাঁর বা়ড়ি পুড়ে গিয়েছিল। তবে তিনি সুরক্ষিত আছেন বলে ভক্তদের জানিয়েছেন। জেরার্ড তাঁর পুড়ে যাওয়া বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে পোস্ট করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। ধন্যবাদ জানিয়েছেন দমকলকর্মীদেরও। গোটা বিপর্যয়ের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছেন আবহবিদেরা। বিস্তীর্ণ বনাঞ্চলের একাংশ পুরো সাফ করে দিয়ে জনবসতি গড়ে তোলাটাও অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: খাশোগি-খুনে সাঁড়াশি চাপ সৌদিকে
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy