বানভাসি: জলমগ্ন রাস্তায় ভাসছে পরিত্যক্ত গাড়ি। নর্থ ক্যারোলাইনার উইলমিংটনে। ছূবি: রয়টার্স।
হারিকেন ফ্লোরেন্স স্থলে আছড়ে পড়েছে আগেই। তাই কিছুটা হলেও কমেছে তার শক্তি। কিন্তু কলম্বিয়ায় হাওয়ার গতিবেগ ভালই। প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৭০ মাইল। আর তাতেই আমরা ভয়ে কাঁটা। হাওয়ার জোর এতটাই বেশি যে বাড়ির পিছনের দিকে পাইন গাছগুলোকে মাতালের মতো লাগছে। আজ সকাল থেকেই এখানে শুরু হয়েছে প্রবল বৃষ্টি। সঙ্গে হাওয়ার দারুণ দাপট।
কাল স্থলে আছড়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই পাঁচ জনের প্রাণ কেড়েছে এই বিধ্বংসী ঝড়। মৃতদের মধ্যে একটি শিশুও রয়েছে। টিভিতে দেখাচ্ছে, উইলমিংটনে একটি বাড়ির উপর গাছ পড়ে মারা গিয়েছে ওই শিশুটি আর তার মা। বাবা গুরুতর জখম। ওই এলাকার বেশির ভাগ বাড়িই এখন জলের তলায়। দেখলাম ছোট ছোট নৌকো করে আটকে পড়া বাসিন্দাদের সরানোর চেষ্টা চলছে। লেনোয়ার কাউন্টিতে মারা গিয়েছেন দু’জন।
আজ সকালেও শুনলাম মার্টল বিচ থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে ফ্লোরেন্স। সেখানে ঝড় আছড়ে পড়লে প্রচুর বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। মার্কিন সেনা আর বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী সে ভাবেই তৈরি বলে আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে বারবার। আতঙ্কটা তবু যাচ্ছে না। নর্থ ক্যারোলাইনার নদীগুলির জলস্তর এমনিতেই বেড়ে গিয়েছে। সেখানে ৪০ ইঞ্চি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। নিউ হ্যানোভারে নদীর জল উল্টো দিকে বইছে। বেশ কিছু জায়গায় জারি করা হয়েছে কার্ফু।
ক্যারি, শার্লটের মতো শহরে আগামী দু’দিন ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সাউথে বৃষ্টির পূর্বাভাস কিছুটা হলেও কম। নর্থ আর সাউথ ক্যারোলাইনা মিলে বারো লক্ষ বাড়িতে এখন বিদ্যুৎ নেই। ফ্লোরেন্সের দৌলতে ২২ হাজার মানুষ এখন ঘরছাড়া। স্থানীয় বেসবল স্টেডিয়াম আর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলি খুলে দেওয়া হয়েছে ত্রাণ শিবিরের জন্য। শুনলাম নর্থ ক্যারোলাইনার রাস্তায় আবার বন্যপ্রাণীরা ঘুরছে। স্থানীয় লেকগুলি থেকে উঠে এসেছে কুমির।
কলম্বিয়ার অবস্থা ততটা ভয়াবহ না হলেও হাওয়ার গতিবেগই ভয় পাওয়ার জন্য যথেষ্ট। কাল সকাল ন’টার পর আর সূর্য ওঠেনি। প্রতিবেশীর বাড়ির ছাদে আমেরিকা আর সাউথ ক্যারোলাইনার পতাকা উড়ত। আজ ঘর থেকেই দেখলাম পতাকাগুলো নামিয়ে ফেলছেন ওঁরা। ঠিক তখনই ভয়ঙ্কর আওয়াজে টনক নড়ল। স্ত্রী বেরোতে বারণ করল, কিন্তু বেরোতে তো হতই। দেখলাম, প্রায় ৪০ কেজি ওজনের একটা টব ফেন্সের ধারে উড়ে এসে পড়েছে। এমন সব উড়ন্ত জিনিসকেই তো ভয়! মেয়েকে জানলার কাছে যেতে বারণ করেছি। ফায়ার প্লেস আর কিচেন ভেন্টগুলো অনবরত কাঁপছে। সঙ্গে আওয়াজ। মনে হচ্ছে এক্ষুনি উড়ে যাবে।
এত আতঙ্কের মধ্যেও একটা কাজে ফাঁকি পড়েনি অবশ্য। দুর্গাপুজোর অনুষ্ঠানের জন্য নাচ আর গানের মহড়া। আগামী সপ্তাহে বৃষ্টি আরও বাড়লে রিহার্সালে ব্যাঘাত ঘটতে পারে ভেবে আজ নাচ আর কোরাস গানটা ঝালিয়ে নেওয়ার কথা। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের আয়োজনে এখনও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি ফ্লোরেন্স!
(সাউথ ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসোসিয়েট প্রোফেসর)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy