প্রতীকী ছবি
দৃশ্যটা বেশ পরিচিত, প্রকাশ্যে এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির উপরে নৃশংস অত্যাচার করছে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ। আর বহু ক্ষেত্রেই এই নিপীড়নের ফলাফল কৃষ্ণাঙ্গ মানুষটির মৃত্যু। ২০ বছরের প্রবাস জীবনে বহু বার শুনেছি এই রকম ঘটনা, যা ‘নিউজ়’ হয়ে বারবার ঘুরেফিরে এসেছে।
সংবাদমাধ্যমের সূত্রে প্রত্যক্ষ করেছি, ট্রেভর মার্টিন থেকে জর্জ ফ্লয়েডের কাহিনী। গত এক মাসে পরপর এসেছে ব্রিয়ানা টেলর, আহমদ আরবেরির নামগুলি। কিন্তু যা আমরা জেনেও জানি না, প্রতিদিনই এক জন কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যু হয় শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে। এ সব খবর শুনলে আমরা তাৎক্ষণিক সমবেদনা জানাই, তার পরে গা সওয়া হলে চুপ করে থাকি।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, ফ্লয়েডের মৃত্যুর পরেই গোটা আমেরিকা তথা বিশ্ব জুড়ে জোরালো প্রতিবাদের ঝড় উঠল কেন? ফিরে যাওয়া যাক সেই সময়ে, যখন ট্রেভর মার্টিন, মাইকেল ব্রাউন, এরিক গার্নার শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে প্রাণ হারানোর পরে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ স্লোগানে সামাজিক মাধ্যমে আন্দোলন সংগঠিত হয়। তার পর থেকেই কৃষ্ণাঙ্গরা পেয়েছে একটা স্বতঃস্ফূর্ত ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম। শুনেছি সময়ে সময়ে পুলিশি নৃশংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠ। যাঁরা একে একে অন্যায় ভাবে বিনা দোষে প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের সুবিচারের দাবিতে। ক্রমে এই প্ল্যাটফর্ম নিছক প্রতিবাদী কণ্ঠ থেকে পরিণত হয় রাজনৈতিক আন্দোলনে।
আরও পড়ুন: কোভিড পজিটিভ ১ লক্ষ হলেও ফের লকডাউন নাকচ ইমরানের
কলেজ ক্যাম্পাসে দেখেছি এদের উপস্থিতি। ক্রমশ এই আন্দোলন ঢুকে পড়েছে আমাদের সংস্কৃতির ভিতরেও। যার প্রভাবে গত ক’বছরে ফেডারেল ‘পলিসি’তেও পরিবর্তন এসেছে।
ঠিক আজকের মতোই ওকল্যান্ড, সান ফ্রান্সিসকো, সান হোসেতে বারবার রাস্তায় নেমেছেন কালো, সাদা, বাদামি— সমস্ত বর্ণের মানুষ। ওয়াশিংটন পোস্টের খবর অনুযায়ী, প্রতি বছর হাজারখানেক কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যু হয় পুলিশের গুলিতে। গত তিন বছরে মার্কিন প্রশাসন ওভাল অফিসকে বিভাজন নীতির চালক যন্ত্রে পরিণত করেছে। ভিন্ন বর্ণ ও সংস্কৃতির মানুষদের নিয়মিত নিশানা করা হয়েছে। তাই আন্দোলনের পটভূমি তৈরিই ছিল। ফ্লয়েডের মৃত্যুটা স্রেফ বারুদের স্তূপে আগুন জ্বালিয়েছে।
অতিমারি পরিস্থিতিতে গত তিন মাসে অর্থনীতির মেরুদণ্ড বেঁকে গিয়েছে। চাকরি হারিয়ে বহু মানুষ দৈনন্দিন সমস্যায় জর্জরিত। সাম্প্রতিক রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, করোনায় কৃষ্ণাঙ্গদের সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার তুলনামূলক ভাবে বেশি। দেখা যাচ্ছে, আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গ জনসংখ্যা যদিও ১৩ শতাংশ, তাঁদের মধ্যে ৪৪ শতাংশ মানুষ কাজ হারিয়েছেন। ২২ শতাংশ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ২৩ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। করোনাভাইরাস, পুলিশ, প্রশাসন, অর্থনীতি— সব দিক থেকেই ‘আমরা মরে আছি’, এমন একটা ধারণা তৈরি হয়েছে। তাই ফ্লয়েডের মৃত্যু যে উপলক্ষ মাত্র, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।(চলবে)
(লেখক ডি অ্যানজ়া কলেজের জীববিদ্যা বিভাগের শিক্ষক)
আরও পড়ুন: হাজারো মানুষের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy