Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
International News

‘আমাদের বাঁচান’, ক্রিসমাস কার্ডের ভিতরে মিলল চিনে বন্দিদের আর্তি

ক্রিসমাস কার্ড খুলতেই চমকে উঠেছিল লন্ডনের এক পরিবার।

ক্রিসমাস কার্ডে চিনে বন্দিদের নোট পায় লন্ডনের ফ্লোরেন্স উইডিকোম্ব। ছবি: সংগৃহীত।

ক্রিসমাস কার্ডে চিনে বন্দিদের নোট পায় লন্ডনের ফ্লোরেন্স উইডিকোম্ব। ছবি: সংগৃহীত।

সংবাদ সংস্থা
লন্ডন শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৯:৪৫
Share: Save:

একরত্তি মেয়ের বন্ধুদের জন্য উপহার হিসাবে সুপারমার্কেট থেকে ক্রিসমাস কার্ড কিনেছিলেন লন্ডনের এক মহিলা। তবে ওই কার্ড খুলে মেয়েটি দেখে, তাতে আগে থেকেই কিছু লেখা রয়েছে। মা-বাবাকে ডেকে তা বলতেই চমকে উঠেছিলেন তাঁরা। কার্ডে লেখা, ‘আমরা চিনের সাংহাইয়ে কিংপু জেলের বিদেশি বন্দি। জোর করিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। মানবাধিকার সংগঠনকে খবর দিন। এই লিঙ্কটা নিয়ে মিস্টার পিটার হামফ্রির সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’ গোটা বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই হইচই পড়ে গিয়েছে। চিনের সরবরাহকারীর সঙ্গে ইতিমধ্যেই সম্পর্ক ছিন্ন করেছে ওই সুপারমার্কেট সংস্থা টেসকো। তবে নিজেদের দেশের কারাগারে বিদেশি বন্দিদের দিয়ে জোর করিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চিন

ব্রিটেনের বহুজাতিক সুপারমার্কেট সংস্থা টেসকো-র তরফে রবিবার জানানো হয়েছে, বিষয়টি জানতে পেরে গত শুক্রবার এ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছেন তারা। আপাতত ক্রিসমাস কার্ড বিক্রিও বন্ধ করা দেওয়া হয়েছে। ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এক রিপোর্টের দাবি, গত দু’বছর ধরেই সাংহাইয়ের কিংপু কারাগারে বিদেশিদের দিয়ে জোর করিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তবে ওই রিপোর্টকে পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে টেসকো-র সরবরাহকারী সংস্থা এবং চিন সরকার। উল্টে চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র গেং শুয়াংয়ের দাবি, ব্রিটিশ সংবাদপত্রের সাংবাদিকই এ ধরনের নাটকীয় রিপোর্ট বানিয়েছেন। যে প্রেসে ওই কার্ড ছাপানো হয়েছিল, সেই ঝেজিয়াং ইয়ানগুয়াং প্রিন্টিংয়ের দাবি, এই বিষয়ে কিছুই শোনেননি তারা। এমনকি ওই কার্ড আদৌ তাদের প্রেসে ছাপানো হয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছে তারা।

আরও পড়ুন: মন্দিরের ভিতরে যৌনতা, ভিডিয়ো ভাইরাল হতেই গ্রেফতার মহিলা

ক্রিসমাস কার্ডের ভিতর এই নোটই মিলেছে। ছবি: সংগৃহীত।

তবে এই বিষয়টি যে অতটা সরল নয়, তা দাবি করেছেন ওই ক্রিসমাস কার্ডে উল্লিখিত পিটার হামফ্রি। ব্রিটেনের প্রাক্তন সাংবাদিক বর্তমানে হামফ্রি বেসরকারি তদন্তকারী হিসাবে কাজ করছেন। কর্পোরেট জালিয়াতির এক তদন্ত করতে গিয়ে চিন সরকারের রোষে পড়ে সেখানকার কারাগারে বন্দিও থেকেছেন তিনি। মেয়ে ফ্লোরেন্সের কাছে ওই ক্রিসমাস কার্ডটি দেখে হামফ্রিকেই প্রথমে যোগাযোগ করেন লন্ডনের বেন উইডিকোম্ব। প্রথমে একে রসিকতা মনে করলেও পরে ওই পরিবারটি বুঝতে পারে, কী ভয়ানক পরিস্থিতির কথা জানতে পেরেছেন তাঁরা। হামফ্রি জানিয়েছেন, ওই কার্ডে লেখাটি কোন বন্দির, তা হয়তো তিনি জানেন। চিনের কারাগারে বন্দি থাকাকালীনই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল হামফ্রি। সে সময়ই তিনি জানতে পারেন, প্রায় বছর দুয়েক ধরেই নিজেদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে টেসকো-র হয়ে তাঁদের কার্ড ও গিফ্ট ট্যাগ তৈরি করতে হচ্ছে। তবে সুরক্ষার কথা ভেবে ওই বন্দির পরিচয় জানাতে চাননি হামফ্রি। হামফ্রির ওই দাবি নস্যাৎ করে চিনের পাল্টা অভিযোগ, এগুলো ‘পুরোপুরিই ভুয়ো’।

আরও পড়ুন: কর্নাটকে তৈরি হল ডিটেনশন ক্যাম্প, মন্ত্রী বলছেন: শুধু বিদেশি অপরাধীদের জন্য

এই প্রথম নয়, চিনের কারাগারে বিদেশি বন্দিদের দিয়ে জোর করে কাজ করানো থেকে শুরু করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আগেও উঠেছে। ২০১৩-তে ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এ প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, হ্যালুইন উপলক্ষে কেনা জিনিসপত্রের মধ্যে চিনের এক প্রাক্তন কারাবন্দির একটি আর্তিভরা চিঠি পেয়েছিলেন আমেরিকারর ওরেগনের এক মহিলা। তাতে ওই কারাবন্দি লিখেছিলেন, ‘স্যর, আপনি যদি কখনও সখনও এই জিনিসটি কেনেন, তা হলে বিশ্ব মানবাধিকার সংগঠনে এই চিঠিটি পাঠিয়ে দিন। এখানে হাজার হাজার মানুষ চিনের কমিউনিস্ট সরকারের দ্বারা নিপীড়িত। তাঁরা আপনাকে ধন্যবাদ দেবেন’। এ ধরনের ২০টি চিঠি বিভিন্ন দ্রব্যে ভরে দিয়েছিলেন ওই কারাবন্দি। পরের বছর উত্তর আয়ারল্যান্ডের এক বাসিন্দা নতুন কেনা একটি প্যান্টের পকেট থেকে একটি নোট পেয়েছিলেন। তাতে লেখা ছিল, ‘আমাদের দিনে ১৫ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। যে খাবার জোটে তা কুকুর বা শূকরকেও কেউ খেতে দেবে না।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Christmas London China Human Rights Tesco
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE