Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
International News

রাফাল-রিলায়্যান্স নিয়ে মুখ খুলল ফ্রান্স, তাতেও অস্বস্তি কাটল না মোদীর

প্যারিসের ওই সরকারি বিবৃতি থেকে এটা স্পষ্ট যে, কোনও চুক্তিতে অন্য দেশের কোন সংস্থাকে তারা সহযোগী সংস্থা হিসেবে বেছে নেবে, সে ব্যাপারে ফরাসি সংস্থাগুলির স্বাধীনতা রয়েছে।

রাফাল যুদ্ধবিমান। ছবি- সংগৃহীত।

রাফাল যুদ্ধবিমান। ছবি- সংগৃহীত।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৪:৫১
Share: Save:

রাফাল-রিলায়্যান্স ‘কেলেঙ্কারি’ নিয়ে শেষ পর্যন্ত মুখ খুলল ফরাসি সরকার। জানাল, ওই চুক্তিতে সহযোগী হিসেবে ভারতের কোন সংস্থাকে বেছে নেবে যুদ্ধবিমান নির্মাণকারী সংস্থা ‘দাসো অ্যাভিয়েশন’, সে ব্যাপারে ফরাসি সরকারের কোনও ভূমিকাই ছিল না। যদিও প্রাক্তন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদের মূল অভিযোগ ছিল, ভারত সরকার তাঁদের উপরে রিলায়্যান্সকে চাপিয়ে দিয়েছিল। ফরাসি সরকারের সামনে তা মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। এ ব্যাপারে কিন্তু মুখে কুলুপ এঁটে থাকল ফরাসি সরকার। প্রাক্তন ফরাসি প্রেসিডেন্টের মূল অভিযোগকে খণ্ডন করল না। ফলে, দিনের শেষে এই ইস্যুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অস্বস্তি একটুও কমল না।

শুক্রবার রাতে এক বিবৃতিতে ফরাসি সরকারের তরফেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ‘‘রাফাল যুদ্ধবিমান-চুক্তিতে সহযোগী সংস্থা হিসেবে ভারতের রিলায়্যান্স ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিজ (অনিল অম্বানীর সংস্থা)-কে বেছে নেওয়ার ব্যাপারে ফরাসি সরকারের কোনও ভূমিকাই ছিল না। আমাদের বলা হয়েছিল শুধু ওই যুদ্ধবিমানগুলির গুণগত মান আর সেগুলি যাতে নির্ধারিত সময়ে ভারতের হাতে পৌঁছয়, তা সুনিশ্চিত করতে।’’

প্যারিসের ওই সরকারি বিবৃতি থেকে এটা স্পষ্ট যে, কোনও চুক্তিতে অন্য দেশের কোন সংস্থাকে তারা সহযোগী সংস্থা হিসেবে বেছে নেবে, সে ব্যাপারে ফরাসি সংস্থাগুলির স্বাধীনতা রয়েছে।

এখানে প্রশ্ন উঠছে, যদি তাই হয়, তা হলে ভারতের ‘চাপিয়ে দেওয়া’ অনিল অম্বানীর সংস্থাকে সহযোগী হিসেবে মেনে নিতে ‘দাসো’কে ‘বাধ্য হতে’ হল কেন? অম্বানীর সংস্থাকে কি ‘দাসো’র উপর ‘চাপিয়ে দিয়েছিল’ তদানীন্তন ফরাসি সরকার? ফরাসি সরকার ও ‘দাসো’-র বিবৃতি এ ব্যাপারেও অস্পষ্ট থেকেছে।

রাফাল: ফরাসি সরকারের তরফে দেওয়া বিবৃতি।

রাফাল যুদ্ধবিমান বানায় যে ফরাসি সংস্থা, সেই ‘দাসো অ্যাভিয়েশন’-এর তরফে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘চুক্তিটি ভারত ও ফ্রান্স এই দুই সরকারের মধ্যে হলেও, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ নীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সহযোগী সংস্থা হিসেবে ভারতের রিলায়্যান্স ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিজকে আমরাই বেছে নিয়েছিলাম।’’

‘দাসো’র এই বিবৃতি যে বিজেপি শিবিরকে খুশি করেছে, ইতিমধ্যেই তার প্রমাণ মিলতে শুরু করেছে। তাঁরা ওই বিবৃতি দেখিয়ে বলছেন, ‘‘দাসো তো বলেই দিয়েছে, তারাই সহযোগী হিসেবে বেছে নিয়েছে ভারতের রিলায়্যান্স ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিজকে।’’ কিন্তু ওলাঁদের অভিযোগ ছিল, সেটা বেছে নিতে তাঁরা ‘বাধ্য হয়েছিলেন’। তা নিয়ে ‘দাসো’ও মুখে কুলুপ এঁটে থাকার পর বিজেপি শিবির কী ভাবে খুশি হচ্ছে, সেটাও অস্পষ্ট থেকে গেল।

আরও পড়ুন- রিলায়্যান্সকে আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছিল ভারত সরকার, ওলাঁদের মন্তব্যে চাপে কেন্দ্র​

আরও পড়ুন- ভুল শুধরে না নিলে আমেরিকাকে ফল ভুগতে হবে, তীব্র হুঙ্কার চিনের​

রাফাল: ‘দাসো অ্যাভিয়েশন’-এর তরফে দেওয়া বিবৃতি

ও দিকে, এ দিন সংবাদসংস্থা এএফপি খবর দিয়েছে, ভারত কোনও চাপ দিয়েছিল কি না, জানতে চাওয়ায় প্রাক্তন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ওলাঁদ বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে একমাত্র ‘দাসো’ই কিছু বলতে পারে।’’

রাফাল যুদ্ধবিমান থেকে নরেন্দ্র মোদী সরকারের অন্দরে প্রথম ‘ফরাসি বোমা’টি ফেলেন ফ্রান্সের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, মোদী সরকারই ফরাসি সরকারকে বলেছিল, অনিল অম্বানীর রিলায়্যান্স ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিজকে রাফাল-চুক্তিতে মনোনীত করতে। সংশ্লিষ্ট পত্রিকা ‘মিডিয়াপার্ট’-এর ফরাসি সংস্করণের দাবি, ওলাঁদ তাদের বলেছেন, ‘‘ভারত সরকার আমাদের উপরে রিলায়্যান্সকে চাপিয়ে দিয়েছিল। আমাদের সামনে তা মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোনও বিকল্প ছিল না।’’

ওলাঁদ প্রেসিডেন্ট থাকাকালীনই ৫৮ হাজার কোটি টাকার রাফাল-চুক্তি হয়। তিনি আজ যা বলেছেন, ঠিক সেটাই বক্তব্য রাহুল গাঁধীর। কংগ্রেস সভাপতির দাবি ছিল, যুদ্ধবিমান তৈরির কোনও অভিজ্ঞতা না-থাকা, বিপুল দেনায় জর্জরিত অনিলের সংস্থাকে রাফাল যুদ্ধবিমানের বরাত পাইয়ে দিয়েছেন মোদীই। তাঁর টুইটে রাহুল লিখেছেন, ‘‘ওলাঁদের দৌলতে জানলাম, প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগত ভাবে কোটি কোটি ডলারের চুক্তি দেউলিয়া অনিল অম্বানীকে পাইয়ে দিয়েছেন। তিনি দেশকে ঠকিয়েছেন। জওয়ানদের রক্তকে অসম্মান করেছেন।’’

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামনদের মতো অনিল অম্বানীও দাবি করেছেন, রাফাল বানিয়েছে যে ফরাসি সংস্থা সেই ‘দাসো অ্যাভিয়েশন’-এর সঙ্গে চুক্তি হয়েছে তাঁর সংস্থা রিলায়্যান্স ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিজের। সেখানে মোদী সরকারের কোনও ভূমিকা ছিল না।

যদিও ওই ফরাসি পত্রিকাটিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওলাঁদ বলেছেন, ‘‘ভারত সরকার ওই গোষ্ঠীর নাম প্রস্তাব করে। আর অম্বানীর সঙ্গে বোঝাপড়া করে দাসো। আমরা কাউকে পছন্দ করিনি।’’

২০১৫ সালে ওলাঁদের আমলেই মোদীর ফ্রান্স সফরে আচমকা ৩৬টি রাফাল কেনার চুক্তি ঘোষণা হয়। পরের বছর ওলাঁদ দিল্লি এলে সই হয় চুক্তি। কংগ্রেসের দাবি, মোদী প্রায় তিন গুণ বেশি দামে ৩৬টি রাফাল কেনায় কোষাগারের ৪১ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। বাকি ৯০টি বিমান ভারতে তৈরির বরাত পেয়ে অনিলের সংস্থা কামাতে চলেছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE