Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
আল্পসে দুর্ঘটনা

জোর করে বিমান নামান কো-পাইলটই

দুর্ঘটনা নয়। যান্ত্রিক ত্রুটি নয়। খারাপ আবহাওয়াও নয়। জার্মানউইঙ্গসের বিমানটি নিয়ে স্বেচ্ছায় ধ্বংসের পথে এগিয়ে গিয়েছিলেন কো-পাইলট নিজেই। ফরাসি তদন্তকারী সংস্থার রিপোর্টে এমনই চাঞ্চল্যকর দাবি করা হল বৃহস্পতিবার। তদন্তকারীদের মুখপাত্র ব্রাইস রবিন সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, বিমানের কো-পাইলট অ্যান্ড্রিয়াস লুবিৎজ ইচ্ছাকৃত ভাবেই দুর্ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। ইচ্ছে করেই তিনি আল্পসের দুর্গম এলাকায় বিমানটিকে নামিয়েছিলেন, যাতে ভেঙে পড়ে এয়ারবাস এ-৩২০।

বিমানের কো-পাইলট অ্যান্ড্রিয়াস লুবিৎজ। ছবি ফেসবুকের সৌজন্যে।

বিমানের কো-পাইলট অ্যান্ড্রিয়াস লুবিৎজ। ছবি ফেসবুকের সৌজন্যে।

সংবাদ সংস্থা
মার্সেই শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৫ ০৩:২৬
Share: Save:

দুর্ঘটনা নয়। যান্ত্রিক ত্রুটি নয়। খারাপ আবহাওয়াও নয়। জার্মানউইঙ্গসের বিমানটি নিয়ে স্বেচ্ছায় ধ্বংসের পথে এগিয়ে গিয়েছিলেন কো-পাইলট নিজেই। ফরাসি তদন্তকারী সংস্থার রিপোর্টে এমনই চাঞ্চল্যকর দাবি করা হল বৃহস্পতিবার।

তদন্তকারীদের মুখপাত্র ব্রাইস রবিন সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, বিমানের কো-পাইলট অ্যান্ড্রিয়াস লুবিৎজ ইচ্ছাকৃত ভাবেই দুর্ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। ইচ্ছে করেই তিনি আল্পসের দুর্গম এলাকায় বিমানটিকে নামিয়েছিলেন, যাতে ভেঙে পড়ে এয়ারবাস এ-৩২০।

কাল পর্যন্ত দুর্ঘটনার আসল কারণ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন তদন্তকারীরা। এখন প্রশ্ন উঠছে এক দিনের মধ্যে এমন কী হল, যার জন্য এক ধাক্কায় কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেওয়া হল কো-পাইলট লুবিৎজকে? উত্তরটা লুকিয়ে রয়েছে ককপিট ভয়েস রেকর্ডার-এর মধ্যে। রবিন জানাচ্ছেন, ওই রেকর্ডার থেকে এটা স্পষ্ট যে যাত্রাপথে কোনও এক সময় ককপিট থেকে বেরিয়েছিলেন বিমানের চালক এস প্যাট্রিক। তখন ককপিটের দরজা ভিতর থেকে আটকে দিয়েছিলেন লুবিৎজ। তাঁর শ্বাস-প্রশ্বাস তখন স্বাভাবিকই ছিল। সেই শব্দও রেকর্ডারে রয়েছে। তা থেকেই তদম্তকারীদের ধারণা হয়েছে, লুবিৎজ সুস্থ ছিলেন। যা করেছেন ভেবেচিন্তে করেছেন।

বিমান চালকদের নিজেদের মধ্যে কথোপকথন আর এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য ধরা থাকে এই ককপিট ভয়েস রেকর্ডারে। জার্মানউইঙ্গসের বিমানটির ককপিট ভয়েস রেকর্ডার থেকে স্পষ্ট যে যাত্রাপথের প্রথম দিকে পাইলট এবং কো-পাইলটের মধ্যে কথাবার্তা বেশ স্বাভাবিকই ছিল। তার পরই হঠাৎ ককপিট থেকে বেরিয়ে যান পাইলট। ভেঙে পড়ার মুহূর্তে ভয়েস রেকর্ডারে ধরা পড়েছে যাত্রীদের প্রবল আর্ত চিৎকার। বিমান যে গোঁত্তা খেতে খেতে ক্রমশ নীচের দিকে নামছে, তা শেষ মুহূর্তে বুঝতে পেরেছিলেন যাত্রীরা। ৩৮ হাজার ফুট উপর দিয়ে যেতে যেতে হঠাৎই নীচে নামতে শুরু করেছিল এয়ারবাস এ-৩২০। আট মিনিটে সেই উচ্চতাই কমে দাঁড়ায় ছ’হাজার ফুটে। আর তখনই শেষ বারের মতো ফরাসি রেডারে ধরা পড়েছিল বিমানটি।

ফরাসি তদন্তকারী সংস্থার এক অফিসার জানিয়েছেন, ভয়েস রেকর্ডারের আওয়াজ বলছে “ককপিটে ফিরে আসার সময় প্রথমে পাইলট ককপিটের দরজায় হাল্কা ভাবে ধাক্কা দেন। কিন্তু কোনও উত্তর মেলে না। তার পর জোরে জোরে দরজায় ধাক্কা দেওয়ার পরেও ককপিট থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি।” কেন ককপিটের দরজা খোলেননি লুবিৎজ? ব্রাইস রবিন এখানে আত্মহত্যার তত্ত্বই দিয়েছেন। তাঁর এই কাজে যাতে কেউ বাধা না দেন, সে জন্যই ককপিটের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে পাইলটকে আটকে দিয়েছিলেন তিনি। তবে এই ঘটনাটিকে নিছক আত্মহত্যা বলে মানতে রাজি নন রবিন। তাঁর কথায়, “যখন তুমি একসঙ্গে ১৫০টি প্রাণ কেড়ে নিচ্ছ, তখন আমি একে শুধু আত্মহত্যা বলতে পারি না।” একই সুর শোনা গিয়েছে লুফৎহানসার সিইও-র গলাতেও। তিনি বলেছেন, “যদি এক জন নিজেকে এবং আরও ১৪৯ জনকে ইচ্ছে করে মেরে ফেলেন, তার জন্য সম্পূর্ণ অন্য শব্দ ব্যবহার করা উচিত। আত্মহত্যা নয়।”


বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল। বৃহস্পতিবার বার্লিনে। ছবি: এএফপি।

তবে জার্মানির নাগরিক লুবিৎজের ইতিহাস ঘেঁটে এখনও কোনও জঙ্গি যোগ মেলেনি। ২৮ বছরের লুবিৎজ জার্মানির মোন্টাবাউয়ার শহরে থাকতেন তাঁর বাবা-মায়ের সঙ্গে। ডুসেলডর্ফেও একটি ফ্ল্যাট ছিল তাঁর। ২০১৩ সালে জার্মানউইঙ্গসে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। আগে থেকেই লুবিৎজের এই পরিকল্পনা ছিল কি না, তা অবশ্য এখনও স্পষ্ট নয়। যদিও জানা গিয়েছে, ওই দুর্ঘটনার দিন দু’য়েক আগে নিজের ফেসবুক পেজটি মুছে দিয়েছিলেন তিনি। রবিন জানিয়েছেন, এই ধরনের বিমান চালানোয় একশো ঘণ্টার অভিজ্ঞতা ছিল লুবিৎজের।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এয়ারবাসের কোনও পাইলট ইচ্ছে করলেই ককপিটের দরজা ভিতর থেকে এমন ভাবে বন্ধ রাখতে পারেন যে বাইরে থেকে পাসওয়ার্ড দিয়েও তা খোলা সম্ভব নয়। হয়তো সে দিন ঠিক তাই হয়েছিল পাইলট প্যাট্রিকের। লুবিৎজের অসুস্থতা বা যান্ত্রিক কোনও ত্রুটির জন্যে যে দরজা বন্ধ হয় হয়নি, সে বিষয়ে প্রায় নিশ্চিত তদন্তকারী সংস্থা। তবে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, ককপিটে পাইলট কখনওই একা থাকতে পারেন না। পাইলট বা কো-পাইলট কোনও প্রয়োজনে বাইরে বেরোলে অন্য জনের সঙ্গে এক বিমানকর্মীর থাকা আবশ্যিক। এ ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হয়েছিল কি না, তা জানা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE