Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

৭ দশকে কলঙ্কমুক্ত ‘গ্রোভল্যান্ড ফোর’

ধর্ষণ যে আদৌ হয়নি তার প্রমাণ মিলেছিল আগেই। তবে ‘ক্ষমা’ পেতে কেটে গেল সাত দশক! 

রেহাই: ওয়াল্টার আরভিন, স্যামুয়েল শেপার্ড ও আর্নেস্ট টমাস (বাঁ দিক থেকে)। ছবি: ফ্লরিডার সরকারি গ্রন্থাগার থেকে প্রকাশিত

রেহাই: ওয়াল্টার আরভিন, স্যামুয়েল শেপার্ড ও আর্নেস্ট টমাস (বাঁ দিক থেকে)। ছবি: ফ্লরিডার সরকারি গ্রন্থাগার থেকে প্রকাশিত

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:১৯
Share: Save:

ধর্ষণ যে আদৌ হয়নি তার প্রমাণ মিলেছিল আগেই। তবে ‘ক্ষমা’ পেতে কেটে গেল সাত দশক!

১৯৪৯ সালে এক শ্বেতাঙ্গ কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে চার কৃষ্ণাঙ্গ তরুণকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল আমেরিকার আদালত। সেই চার জনের দু’জন খুন হয়েছিলেন পুলিশেরই হাতে। বাকি দু’জন প্যারোলে ছাড়া পাওয়ার পরে রহস্যজনক ভাবে মারা যান। সেই ঘটনার ৭০ বছর বাদে, শুক্রবার ফ্লরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিস জানালেন, ওই কৃষ্ণাঙ্গেরা কেউই ধর্ষণ করেননি। তাঁদের প্রতি যে অবিচার হয়েছে, তা মেনে নিয়ে সর্বসম্মত ভাবে ‘ক্ষমা’ করা হচ্ছে চার জনকে।

চার্লস গ্রিনলি, ওয়াল্টার আরভিন, স্যামুয়েল শেপার্ড ও আর্নেস্ট টমাস। ‘গ্রোভল্যান্ড ফোর’ নামে পরিচিত ছিলেন তাঁরা। ১৯৪৯ সালে ফ্লরিডার গ্রোভল্যান্ডে নর্মা প্যাজেট নামে ১৭ বছরের এক কিশোরী অভিযোগ করেন, ওই চার কৃষ্ণাঙ্গ গাড়ি থেকে নামিয়ে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ধর্ষণ করেছেন তাঁকে। তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। চতুর্থ আর্নেস্ট পালিয়ে যান। তাঁর সন্ধানে তৈরি হয় ১০০০ জনের বাহিনী। শোনা যায়, ঘুমন্ত অবস্থায় তাঁকে গাছের তলায় খুঁজে পেয়ে ৪০০ বার গুলি করে মারে পুলিশ।

গ্রিনলি, আরভিন ও শেপার্ডকে যে বিচারকমণ্ডলী দোষী সাব্যস্ত করেন, তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন শ্বেতাঙ্গ। বিচার চলাকালীন তাঁদের অপছন্দের সব সাক্ষ্যপ্রমাণই বাদ পড়েছিল বলে অভিযোগ। ওই কিশোরীকে পরীক্ষা করে এক চিকিৎসক সেই সময়ে জানিয়েছিলেন, ধর্ষণ হয়নি। তা সত্ত্বেও সে সব তথ্য চাপা দিয়ে গ্রিনলিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বাকি দু’জন পান মৃত্যুদণ্ড।

বছর দু’য়েক বাদে মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের প্রথম অ্যাফ্রো-আমেরিকান বিচারপতি তুরগুড মার্শাল ফের মামলা চালুর নির্দেশ দেন। কিন্তু শুনানি শুরুর দিন কয়েক আগেই মেরে ফেলা হয় শেপার্ডকে। আরভিন ও শেপার্ডকে গুলি করেছিলেন লেক কাউন্টির শেরিফ উইলিস ম্যাকল। তাঁর দাবি ছিল, শিকল খুলে পালানোর চেষ্টা করায় গুলি করা হয় দু’জনকে। শেপার্ড মারা যান সঙ্গে সঙ্গেই। আরভিনের ঘাড়ে গুলি লাগলেও বেঁচে যান। ফের জেলে ভরা হয় তাঁকে। তখনও প্রাক্তন এক এফবিআই এজেন্ট জানিয়েছিলেন, চার জনের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ সাজানো। তবু এই মামলার আইনজীবীদের বিরুদ্ধে কখনওই কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।

১৯৬৮ সালে প্যারোলে ছাড়া পান আরভিন। এর এক বছর বাদে গাড়িতে মৃত অবস্থায় তাঁর দেহ মেলে। তাঁর আগে, ১৯৬০ সালে ছাড়া পান গ্রিনলিও। ২০১২ সালে মারা যান তিনি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে লেখা ‘ডেভিল ইন দ্য গ্রোভ’ বইটি ২০১৩ সালে পুলিৎজার পুরস্কার পায়।

ওই চার কৃষ্ণাঙ্গকে ক্ষমার প্রস্তাব নিয়ে শুক্রবার ক্যাবিনেটে ভোটাভুটি হয়। ছিলেন অভিযোগকারিণীও। তিনি বলেন, ‘‘আমি চাই না ওদের ক্ষমা করা হোক। কারণ আমি সে দিন সত্যি কথাই বলেছিলাম।’’ যদিও শেষ পর্যন্ত জয় হয় ক্ষমারই। গ্রিনলির মেয়ে ক্যারলের কথায়, ‘‘আমার বাবা যে ধর্ষক নন, সারা বিশ্বকে এই সত্যিটা জানানোই ছিল আমার লক্ষ্য। কারণ, তাঁকে দোষী সাজানো হয়েছে, জেলে ভরা হয়েছে, অত্যাচার করা হয়েছে এমন এক অভিযোগ ঘিরে— যে কাজ তিনি করেননি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Groveland Four Florida Rape
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE