নিউ ইয়র্কের ব্রডওয়ে। সবে অভিনয় শেষ হয়েছে। মঞ্চে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কলাকুশলীরা। উঠে দাঁড়িয়েছেন দর্শকরা। কেউ কেউ প্রেক্ষাগৃহ ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। সেই দলে রয়েছেন সদ্য নির্বাচিত মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও। দর্শকদের একাংশ তাঁকে বিদ্রুপ করছেন। এমন পরিস্থিতিতে সবাইকে থামিয়ে দিয়ে মুখ খুললেন অভিনেতা ব্র্যান্ডন ভিক্টর ডিকসন। ভাইস প্রেসিডেন্টকে এ ভাবে বিদ্রুপ করা বন্ধ রাখতে বললেন। তার পর তাঁর কথা, ‘‘নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট আপনাকে স্বাগত। আপনি ‘হ্যামিলটন: অ্যান আমেরিকান মিউজিক্যাল’ দেখতে এসেছেন বলে আমরা বাধিত। আমরা এই বিচিত্র আমেরিকার প্রতিনিধি। আমরা কিন্তু শঙ্কায় রয়েছি। আমাদের আশঙ্কা, আপনাদের নতুন সরকার আমাদের রক্ষা করবে না। আমাদের পৃথিবী, আমাদের সন্তান, আমাদের বাবা-মা কেউ সুরক্ষিত থাকবে না। আমাদের অধিকার সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করবেন না। কিন্তু আমার ধারণা আমাদের এই নাটক আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে। আমরা নানা বর্ণ, নানা বিশ্বাস, নানা ধরনের। আমাদের অভিনয় করা এই নাটক দেখার জন্য আপনাকে আবার ধন্যবাদ।’’ প্রেক্ষাগৃহ থেকে বেরিয়ে গেলেও পথে দাঁড়িয়ে পুরো ঘটনা শুনেছেন মাইক পেন্স। আর তার পরই শুরু হয়েছে প্রবল বিতর্ক। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরেও আমেরিকার বিভাজন রেখাটি ভাল মতোই স্পষ্ট। শুধু তাই নয়, সেই বিভাজনটি মিলিয়ে যাওয়ার কোনও লক্ষণ নেই।
ব্রডওয়েতে হ্যামিলটন মিউজিক্যালটির বেশ নাম করেছে। আমেরিকার প্রতিষ্ঠতাদের মধ্যে অন্যতম আলেকজান্ডার হ্যামিলটনের জীবন নিয়ে এই নাটক। সাধারণ অভিবাসীর ঘরের অনাথ সন্তান হ্যামিলটন কী ভাবে আমেরিকার অন্যতম স্থপতি হয়ে উঠলেন তা নিয়েই এ নাটক। যে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে বরাবরই সরব সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনী প্রচারে কখনও মেক্সিকানদের ধর্ষক বলেছেন। কখনও মুসলিমদের দেশে ঢোকা বন্ধ করার কথা বলেছেন। নির্বাচনের পরে বিজয়ী ভাষণে অবশ্য সবাইকে নিয়ে চলার কথা বলেছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু যতই ট্রাম্পের ক্যাবিনেটের প্রতিনিধিদের নাম সামনে আসছে ততই আশঙ্কার মেঘ গাঢ় হচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারে তার আশে পাশে থাকা লোক জনকেই বিভিন্ন পদে বসাচ্ছেন ট্রাম্প। এঁদের চিন্তাভাবনা অনেকে ক্ষেত্রেই ট্রাম্পের অনুসারী। কয়েকটি ক্ষেত্রে ট্রাম্পের থেকেও গোঁড়া। আর সেটাই হ্যামিলটনের অভিনেতাদের মতো মার্কিন নাগরিকদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এই ঘটনার পরে মাইক পেন্স কিছু মনে না করলেও যথেষ্ট কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন ট্রাম্প। আর যা নিয়ে এই ঘটনার পক্ষে-বিপক্ষে সোশ্যাল মিডিয়া সরগরম। প্রেক্ষাগৃহে আদৌ এ ধরনের বার্তা দেওয়া উচিত কি না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরে এ রকম টালমাটাল পরিস্থিতি আমেরিকা আগে বিশেষ দেখেনি। ট্রাম্পের জয় নিশ্চিত হওয়ার পরেই আমেরিকার বেশ কয়েকটি জায়গায় বিক্ষোভ শুরু হয়।
ব্রডওয়েতে পেন্স আসবেন এ কথা জানার পরই এই কথাগুলি বলার পরিকল্পনা করেন হ্যামিলটনের কলাকুশলীরা। প্রেক্ষাগৃহে ঢোকার পর থেকেই পেন্সকে নানা বিদ্রুপ শুনতে হয়। কিন্তু সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে কলাকুশলীদের এই আবেদন।
আরও পড়ুন পথের কাঁটা! আড়াই কোটি ডলারে রফা চাইছেন ট্রাম্প
আরও পড়ুন পথের কাঁটা! আড়াই কোটি ডলারে রফা চাইছেন ট্রাম্প
আরও পড়ুন পথের কাঁটা! আড়াই কোটি ডলারে রফা চাইছেন ট্রাম্প
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy