Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতা থেকে গঙ্গাজলের বোতল আনেন ঠাকুরমশাই

কলকাতা থেকে সাড়ে সাত হাজার কিলোমিটার দূরে জার্মানির রাইন নদীর তীরের এই সুন্দর, ব্যস্ত শহর ডুসেলডর্ফেও মা দুর্গা আসেন।

চলছে ‘আনন্দমেলার’ প্রস্তুতি। নিজস্ব চিত্র

চলছে ‘আনন্দমেলার’ প্রস্তুতি। নিজস্ব চিত্র

সুদেষ্ণা দে ডুসেলডর্ফ
জার্মানি শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৪৭
Share: Save:

‘প্রণমি বরদা, অজরা অতুলা...।’

পুজো আসছে, চারদিকে সাজো সাজো রব।

কলকাতা থেকে সাড়ে সাত হাজার কিলোমিটার দূরে জার্মানির রাইন নদীর তীরের এই সুন্দর, ব্যস্ত শহর ডুসেলডর্ফেও মা দুর্গা আসেন। তাঁর সেই আগমন জানান দেয় মায়াবী নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ ও চারপাশে ফুটে থাকা প্যাম্পাসগ্রাস, ঠিক যেন রঙবেরঙের কাশফুল।

কিছু সংস্কৃতিমনস্ক, উৎসাহী প্রবাসী ভারতীয়দের নিয়ে গঠিত ক্লাব ‘ইন্ডিশে গেমাইন্ডে ডুসেলডর্ফ (ডুসেলডর্ফের ভারতীয় সম্প্রদায়)’। তাঁরাই এই দুর্গাপুজোর আয়োজন করেন। মা এখানে পূজিত হন একেবারে তিথি অনুযায়ী, সমস্ত রীতিনীতি মেনে। এই পাঁচ দিনের আনন্দ নিজের দেশ, আত্মীয়স্বজন থেকে দূরে থাকা আমাদের মতো মানুষদের সারা বছরের অক্সিজেন জোগায়।

এখানে পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় প্রায় তিন-চার মাস আগে থেকেই। পুজোর ঠিক আগে ঠাকুরমশাই চলে আসেন কলকাতা থেকে, সঙ্গে নিয়ে আসেন বেশ কয়েক বোতল গঙ্গা জল। ফাইবার গ্লাসে নির্মিত দেবী মূর্তিকে পঞ্চমীর রাতে ক্লাবের এক সদস্যের বাড়ি থেকে সযত্নে নিয়ে আসা হয় পুজো মণ্ডপে।

মহাষষ্ঠী থেকে মহাদশমী পর্যন্ত মাতৃ আরাধনার সঙ্গে প্রতিদিনই দু’বেলা থাকে খাওয়াদাওয়ার অঢেল আয়োজন, সপ্তমীতে মাছের কালিয়া, অষ্টমীতে নিরামিষ তরকারি আর লুচি, নবমীতে পাঁঠার মাংসের ঝোল...। উপরি পাওনা প্রতিদিন সন্ধ্যায় বিচিত্রানুষ্ঠান। বাঙালি, অবাঙালি, ভারতীয়, বিদেশি, ছোট-বড় সকলে মিলে অংশগ্রহণ করে আনন্দে ভরিয়ে তোলে উৎসবের মুহূর্তকে।

আশপাশের আরও কিছু শহরেও দুর্গাপুজোর আয়োজন হয়। পুজোর মধ্যে কোনও এক দিন দল বেঁধে অন্য শহরে ঠাকুর দেখতে যাওয়া চাই-ই চাই। আর যথারীতি সেখান থেকে ফিরে এসে নিজেদের পুজোকেই একটু বেশি ভাল প্রমাণ করার যুক্তি-তর্ক শুরু হয়ে যায়।

পুজো চলাকালীন সপ্তাহান্তে ডুসেলডর্ফের পুজো প্রাঙ্গণে এক দিন আয়োজিত হয় ‘আনন্দমেলা’— যেখানে নানা সাবেকি খাবার পরিবেশিত হয় ছোট ছোট স্টলে। কিছু দোকানে পাওয়া যায় পুজোর সরঞ্জাম যেমন ধূপকাঠি, শঙ্খ, মাটির প্রদীপ। তৈরি হয় ছোটখাটো মেলার পরিবেশ।

এরই মধ্যে চলে আসে মা-কে বিদায় জানানোর সময়। সুন্দর শাড়ি-গয়না পরে সুসজ্জিত হয়ে দশমীর দিন ক্লাবের মহিলা সদস্যরা মেতে ওঠেন সিঁদুর খেলায়। সে সময়ে ঢাকের বোলের সঙ্গে নেচে ওঠে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের পা।

এর পর মন কেমনের পালা। আবার এক বছরের প্রতীক্ষা। আসছে বছর আবার এসো মা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

2019 Durga Puja Special Germany
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE