প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষে প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ ব্রিটিশ সেনা হাসপাতালে নানা ধরনের চিকিৎসার পরে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন। এঁদের মধ্যে প্রায় ১৬ শতাংশের মুখে ছিল ভয়াবহ ক্ষত।ছবি: সংগৃহীত।
পছন্দসই নাক কিংবা ঠোঁট। এমনকি নিতম্বও আজকাল পাল্টে ফেলা যায় ‘প্লাস্টিক সার্জারি’র জোরে। হলিউড হোক বলিউড। তাবড় নায়িকাদের কারা কারা ভোল পাল্টাতে ‘লিপ’ বা ‘নোজ় জব’ করালেন, সে নিয়ে পেজ থ্রি-তে চর্চাও হয় বিস্তর। তবে ইতিহাস বলছে, এই ধরনের অস্ত্রোপচার একেবারেই হালের ফ্যাশন নয়। এর শিকড় রয়েছে একশো বছর গভীরে।
১১ নভেম্বর, ১৯১৮। আনুষ্ঠানিক ভাবে শেষ হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। যুদ্ধ সমাপ্তির সেই শতবর্ষকে স্মরণ করেছেন চিকিৎসক রবার্ট কারবি। ইংল্যান্ডের কিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক্লিনিকাল এডুকেশন এবং সার্জারি’র এই অধ্যাপক জানালেন, একশো বছর আগে, সেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আমলেই শুরু হয়েছিল এই ধরনের অস্ত্রোপচারের প্রচলন। পরবর্তীকালে ‘প্লাস্টিক সার্জারি’ বা ‘প্রস্টেথিকস’ প্রযুক্তিও এসেছে সেই প্রাচীন গবেষণারই হাত ধরে।
কারবি জানাচ্ছেন, মূলত যুদ্ধে আহত সেনাদের ক্ষতবিক্ষত চেহারা ঠিক করতেই এই ধরনের অস্ত্রোপচার শুরু হয় ইংল্যান্ডে। অধ্যাপক জানাচ্ছেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষে প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ ব্রিটিশ সেনা হাসপাতালে নানা ধরনের চিকিৎসার পরে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন। এঁদের মধ্যে প্রায় ১৬ শতাংশের মুখে ছিল ভয়াবহ ক্ষত। মূলত শার্পনেল বা শেলের টুকরো অনেকেরই চেহারার একটা বড় অংশকে পুরোপুরি চেনার অযোগ্য করে দিয়েছিল। হ্যারল্ড গিলিজ নামে নিউজিল্যান্ডের এক ইএনটি চিকিৎসক আহত এই ধরনের সেনার চিকিৎসা করছিলেন ‘ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’-এ। তিনিই প্রথম এই ধরনের পুড়ে যাওয়া বা একেবারে ক্ষতবিক্ষত মুখগুলোর উপরে ‘কসমেটিক সার্জারি’ করার প্রয়োজন অনুভব করেন। ১৯১৬ সালে অলডারশটে তৈরি হয় ব্রিটেনের প্রথম প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট। কেমব্রিজ সেনা হাসপাতালে আহত ব্রিটিশ সেনাদের মুখে সেই প্রথম ‘স্কিন গ্রাফটিং’ শুরু করেন চিকিৎসক গিলিজ। একেবারে শুরুতে দু’শো জন মতো রোগী আশা করেছিলেন গিলিজ। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, সংখ্যাটা তখনই দু’হাজার ছাড়িয়েছে। কোনও আহত সেনার ক্ষতবিক্ষত মুখে দেহের অন্য অংশ থেকে চামড়া নিয়ে মুখে জোড়ার কাজ শুরু হয় সেই সময় থেকেই।
আরও পড়ুন: যুদ্ধ শেষ! শান্তি চাইল ১০০ বছরের উৎসব
আরও পড়ুন: ৯৪! তবু কাঠগড়ায়
ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তাঁর রোগীর সংখ্যা। গিলিজের হাতে গড়া দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডে কুইন মেরিজ় হাসপাতালে একটি বিশেষ ইউনিটে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে
এ ধরনের ১১ হাজারেরও বেশি অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy