Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
International News

কিম-কর্তব্য: ইগোর খোঁচায় নোবেল-স্বপ্নও ঝেড়ে ফেললেন ট্রাম্প!

অহমিকাই হয়তো তাঁর নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াল!

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।-ফাইল চিত্র।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।-ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৮ ১৭:৪২
Share: Save:

অন্যের চোখে ছোট হয়ে যাওয়ার ভয়ে সকলের চোখে আরও বড় হয়ে ওঠার স্বপ্নটাকে মুহূর্তে জলাঞ্জলি দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প!

অহমিকাই হয়তো তাঁর নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াল!

তাঁর পূর্বসূরীদের মধ্যে যা কেউই পারেননি, উত্তর কোরিয়ার ‘রণং দেহি’ প্রেসিডেন্ট কিম জং-উনকে শান্তি আলোচনার টেবিলে বসিয়ে সেই কাজটাই করে দেখাতে চেয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। স্বপ্ন দেখেছিলেন, নোবেল পুরস্কার জয়ের।

কিন্তু না, রোনাল্ড রেগন বা মিখাইল গর্বাচেভ হতে পারলেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প, তাঁর অহমিকায় ঘা লাগায়।

সবকিছু ঠিকঠাক ছিল, হবে। দিনকয়েক আগে ট্রাম্প ও কিমের মন্তব্যে জোরালো ইঙ্গিত মিলেছিল, হচ্ছে।

কিন্তু তা যে আদৌ হচ্ছে না, তার প্রথম ইঙ্গিত মিলেছিল বুধবার রাত ১০টা নাগাদ। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন ওই সময় ওভাল অফিস থেকে হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘরে ঢুকলেন। ট্রাম্পকে বললেন, ‘‘করছেনটা কী? জানেন, পিয়ংইয়ংয়ের প্রকাশ্য বিবৃতিতে হুমকি দেওয়া হয়েছে পরমাণু অস্ত্রের ক্ষমতা প্রদর্শনের? জানেন কি, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে নিয়ে মস্করা করেছে পিয়ংইয়ং?’’

আরও পড়ুন- কিমের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করলেন ট্রাম্প​

আরও পড়ুন- সক্ষমতার প্রকাশ তাণ্ডবে নয়, উদারতায়​

ওই সময় যাঁরা ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের আশপাশে, তাঁরা জানিয়েছেন, বোল্টের ওই সব কথা শুনে কিছু ক্ষণ তাঁর দিকে চেয়ে থাকেন ট্রাম্প। তার পর ঘরের সকলকে বলেন, ‘‘কিম ওই বৈঠক থেকে সরে আসতে চাইছেন বলেই মনে হচ্ছে। এখন বৈঠকে বসলে সকলে মনে করবে, আমেরিকাই আগ বাড়িয়ে শান্তি আলোচনায় বসতে চাইছে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে! লোকে ভাববে পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে আলোচনায় বসার গরজটা বেশি ওয়াশিংটনেরই!’’

‘আমেরিকান্‌স ফার্স্ট’ নীতির প্রবক্তা ট্রাম্পের ইগোয় লেগে গেল! ইগো বলে কথা, ট্রাম্প ভুলে গেলেন, গত মার্চে তিনিই ঝটিতি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কিমের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠকে বসার। সিঙ্গাপুরে যে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল আগামী ১২ জুন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ব্যক্তিগত অ্যাটর্নি রুডি গ্যুলিয়ানি বুধবারই কথা বলেছিলেন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে। শুক্রবার নিউ ইয়র্কে গ্যুলিয়ানি বলেছেন, ‘‘বোল্টের কাছ থেকে ওই সব কথা শুনে স্বাভাবিক ভাবেই হতাশ হয়ে পড়েন প্রেসিডেন্ট। যদিও এমনটা যে হতে পারে, তার আপাত আভাস আগেই মিলেছিল।’’

ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠদের অনেকেই বলছেন, হতাশ হওয়ার কারণ ছিল যথেষ্টই। কারণ, ট্রাম্প ভেবেই নিয়েছিলেন, এই বৈঠকটা হলেই তাঁর নোবেল শান্তি পুরস্কার জেতার রাস্তা খুলে যাবে। সত্যি-সত্যিই ভেবেছিলেন! তার জন্য হোয়াইট হাউসের কমিউনিকেশন এজেন্সি তড়িঘড়ি কিছু ব্যবস্থাও নিয়েছিল। এক দিকে ট্রাম্প, অন্য দিকে কিমকে রেখে বানানো হয়েছিল বেশ কয়েকটি রৌপ্যমুদ্রা। যাকে আমেরিকার আমজনতার একাংশ এখন একটি ‘সোপ অপেরা’ বলে মনে করছেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বই ‘দ্য আর্ট অফ দ্য ডিল’-এর সহ-লেখক টোনি শ্যোয়ার্জের কথায়, ‘‘ট্রাম্পের খুব ভয় হল, উনি সকলের কাছে ছোট হয়ে যাবেন। হাসাহাসির পাত্র হবেন। লজ্জায় মুখ ঢাকতে হবে তাঁকে। কে কত বড়, কে কত শক্তিশালী, সেটা দেখানোই তো ছিল মূল উদ্দেশ্য। ট্রাম্পের মনে হল, এখন ওই বৈঠকে বসলে লোকে তাঁকে দুর্বল মনে করবে। সকলের চোখে তিনি খাটো হয়ে যাবেন। এর চেয়ে আর বেশি আপত্তিজনক কিছু নেই ট্রাম্পের কাছে!’’

বৃহস্পতিবার ভোর হতেই ট্রাম্প প্রশাসনের অফিসাররা ভিড় জমাতে শুরু করেন হোয়াইট হাউসের ওয়েস্ট উইংয়ে। সকাল ৭টা নাগাদ তাঁরা একের পর এক ফোনে কথা বলতে শুরু করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে। ট্রাম্প তখনও তাঁর প্রাইভেট চেম্বারে। সেখানেই ঝটিতি সিদ্ধান্ত নেন ট্রাম্প, বাতিল হোক কিমের সঙ্গে বৈঠক।

সিদ্ধান্ত নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ট্রাম্প ঠিক করলেন, এ বার চিঠি লিখতে হবে উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্টকে। প্রাইভেট চেম্বারে বসেই তাঁর স্টেনোগ্রাফারকে সেই চিঠির ডিকটেশন দিতে শুরু কর়লেন ট্রাম্প। চিঠির শুরুতে উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং-উনকে ‘হিজ এক্সেলেন্সি’ বলে সম্বোধন করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করার পাশাপাশি গণতন্ত্রের প্রতি উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের ‘অশ্রদ্ধা’কেও যেন মনে করিয়ে দিতে চাইলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সেই চিঠি লিখতে লিখতে বেরিয়ে পড়ল ট্রাম্পের ‘লুকোনো অহমিকা’ও। ট্রাম্প লিখলেন, ‘‘পরমাণু অস্ত্রক্ষমতা প্রর্শনের কথা বলে চলেছেন আপনি (কিম)। কিন্তু পরমাণু অস্ত্রে আমরা প্রচণ্ড শক্তিশালী। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, সেই ক্ষমতা যেন আমাদের দেখাতে না হয়।’’

ইতিহাস গড়ার সুযোগটাকে নিজের হাতেই নষ্ট করে দিয়ে ট্রাম্প প্রমাণ করলেন, নোবেল পুরস্কার জয়ের স্বপ্নের চেয়েও ইগো তাঁর কাছে বেশি বড়!

জিতল ইগো! দূর হঠল বিশ্বে পরমাণু অস্ত্রের বিপদ কমার সম্ভাবনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Donald Trump
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE