নিজের দেশে ব্রিটেনের হয়ে চরবৃত্তি করেছিলেন সের্গেই ভিক্তরভিচ স্ক্রিপাল। ধরা পড়ে ১৩ বছর জেল হয় রাশিয়ায়। পরে চর বিনিময়ের এক রফার সূত্রে আশ্রয় জুটেছিল ব্রিটেনে। কিন্তু তাতেও নিরাপদ থাকতে পারলেন না। অজানা বিষের ক্রিয়ায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে স্ক্রিপাল ও তাঁর মেয়ে ইউলিয়া এখন স্যালিসবেরির হাসপাতালে। কোনও কোনও মহল থেকে রাশিয়ার দিকে আঙুল তোলা হলেও ভ্লাদিমির পুতিন- ঘনিষ্ঠ রুশ মুখপাত্র দিমিত্র পেশকভ বলেছেন, দুঃখজনক ঘটনা। তিনি কীসে যুক্ত ছিলেন, আমাদের কাছে কোনও তথ্য নেই। তদন্তে পুরোদস্তুর সাহায্য করতে তৈরি মস্কো।
রুশ স্থলসেনার কর্নেল হিসেবে স্ক্রিপাল ছিলেন গোয়েন্দা বিভাগে। ২০০৪-এ গ্রেফতার হন। অভিযোগ ছিল, নব্বইয়ের দশকে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে অনেক রুশ চরের পরিচয় তিনি ব্রিটিশ গুপ্তচর সংস্থা ‘এমআই-সিক্স’-কে জানিয়ে দিয়েছেন। ২০০৬-এ কারাদণ্ড হয় স্ক্রিপালের। তখনই বিষয়টি প্রথম প্রকাশ্যে আসে। ঠান্ডা যুদ্ধের পরে ২০১০-এ কূটনৈতিক রফার ভিত্তিতে রাশিয়া ও ব্রিটেনের মধ্যে বড়সড় চর বিনিময় হয়। ভিয়েনা বিমানবন্দরের টারম্যাকে পাশাপাশি গিয়ে দাঁড়ায় দু’দেশের দু’টি জেট। দু’দেশের দশ জন করে চর বিমান বদল করেন ও তাঁদের নিয়ে ফিরে যায় জেট দু’টি। আট বছর পরে ফের শিরোনামে স্ক্রিপাল। মৃত্যুর সঙ্গে যুঝছেন ৬৬ বছর বয়সি এই রুশ ‘ডাবল এজেন্ট’। একই অবস্থা তাঁর মেয়ের। ৩৩ বছর বয়সি ইউলিয়া স্ক্রিপাল রাশিয়ায় থাকেন। বাবার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন।
রবিবার বিকেলে স্যালিসবেরিতে অচৈতন্য অবস্থা পাওয়া গিয়েছিল দু’জনকে। মনে করা হচ্ছে, অজানা কোনও বিষাক্ত বস্তুর সংস্পর্শে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তাঁরা। যে পুলিশকর্মীরা তাঁদের উদ্ধার করেছেন, তাঁদের মধ্যেও কিছু উপসর্গ দেখা গিয়েছে। তবে, তাঁদের অসুস্থতা গুরুতর নয়। ঝুঁকি এড়াতে স্থানীয় একটি রেস্তরাঁ বন্ধ রাখা হলেও ‘পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড’ জানিয়েছে, এলাকায় আম জনতার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিপদ নেই। যদিও এলাকায় তেজস্ক্রিয়তা-রোধী পোশাকে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। রবিবার থেকে স্ক্রিপালের বাড়ির সামনেও মোতায়েন রয়েছে পুলিশ।
ঘটনাচক্রে, বির্টেনের সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস (এসআইএস) তথা ‘এমআই-সিক্স’-এর হয়ে কাজ করার জন্য রাশিয়ায় যে বছর জেল হয় স্ক্রিপালের, সে বছরই লন্ডনের মিলেনিয়াম হোটেলে খুন হন আলেকজান্দার লিৎভিনেঙ্কো। পুতিনের কট্টর সমালোচক লিৎভিনেঙ্কা কেজিবি-র চরবৃত্তি ছেড়ে ব্রিটেনে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর অনেক পরে জানা যায় তেজস্ক্রিয় পোলোনিয়াম প্রয়োগ করে হত্যা করা হয়েছিল তাঁকে। আঙুল ওঠে ক্রেমলিনের দিকে। তারা সে অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে। স্ক্রিপালদের অসুস্থতা নিয়েও তাদের একই সুর। নিহত লিৎভিনেঙ্কোর স্ত্রী মারিনা, গত কাল বলেছেন, ‘‘দেজা ভু! মন বলছিল, এমন কিছু হতে চলেছে। ব্রিটেন রাজনৈতিক আশ্রিতদের জীবন পুরোপরুরি সুরক্ষিত হোক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy