Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

পেট থেকে গাছ! মাটি খুঁড়তেই মিলল কঙ্কাল

পেটে ফলের দানা, আর তা থেকেই নাকি গাছ! তা-ও যে সে নয়, ডুমুর। আর সেই ডুমুরের ডালপালাই ধরিয়ে দিল বছর চল্লিশ আগের এক হত্যাকাণ্ড।

ডুমুর গাছের নীচে মিলেছে দেহাবশেষ।

ডুমুর গাছের নীচে মিলেছে দেহাবশেষ।

সংবাদ সংস্থা
আথেন্স শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:০৪
Share: Save:

পেটে ফলের দানা, আর তা থেকেই নাকি গাছ! তা-ও যে সে নয়, ডুমুর। আর সেই ডুমুরের ডালপালাই ধরিয়ে দিল বছর চল্লিশ আগের এক হত্যাকাণ্ড।

সালটা ১৯৭৪। সাইপ্রাসে গ্রিকদের একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে যুদ্ধ বেধেছিল তুর্কিদের। সেই লড়াইয়ে মারা গিয়েছিলেন আহমেত হারগিউন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর কথা জানা গেল এত দিনে। সে সময়ের যুদ্ধে ২ লক্ষ মানুষ স্থানচ্যুত হয়েছিলেন। খোঁজ মেলেনি হাজার খানেক লোকের। আহমেতও নিখোঁজের তালিকায় ছিলেন। এত দিনে তাঁর মৃত্যুর খবর দিল পাহাড়ের গায়ে ডালপালা মেলে গজিয়ে ওঠা ডুমুর।

২০১১ সালে এক গবেষকের চোখে পড়েছিল গাছটি। পাহাড়ের গুহায় ও-রকম একটা গাছ দেখে চমকে যান তিনি। কারণ, পাহাড়ি এলাকায় ডুমুর সাধারণত দেখা যায় না। খোঁজ শুরু করেন তিনি। লোকজন ডেকে গাছের চারপাশে মাটি খুঁড়তে শুরু করেন। আর তাতেই সামনে আসে গোটা ঘটনা। শিউরে উঠেছিলেন ওই গবেষক— গাছের ঠিক নীচে চাপা পড়ে কঙ্কাল। একটু পাশে আরও দু’টি দেহাবশেষ। বিশেষজ্ঞদের দাবি, মারা যাওয়ার আগে হয়তো ডুমুর খেয়েছিলেন আহমেত। মৃতদেহের পাকস্থলীতে থেকে যাওয়া ডুমুরের বীজই জন্ম দেয় আর একটি প্রাণের।

আরও পড়ুন: একা সাগরে ৪৯ দিন

ইতিহাস খুঁড়ে জানা যায় বাকি কাহিনি। দুই-দুইয়ে চার করে বিশেষজ্ঞদের অনুমান, আহমেত-সহ তিনটি লোককে গুহায় আটকে রেখে ডিনামাইট ফাটিয়ে খুন করেছিল প্রতিপক্ষরা। ডিনামাইটে বড় গর্ত তৈরি হয়েছিল গুহার উল্টো দিকের দেওয়ালে। সেখান দিয়ে বন্যার জল ঢোকে গুহায়। সূর্যের আলোও এসে পড়েছিল গুহার ভিতরে। জল-আলো পেয়ে আহমেতের পেটে থাকা বীজ থেকে জন্ম নেয় চারাগাছ।

কঙ্কালটি যে আহমেতের, তা জানা যায় আর এক দল বিশেষজ্ঞের সৌজন্যে। দেহাবশেষ তিনটি মিলতেই, তাদের পরিচয় জানতে শুরু হয়েছিল খোঁজ। ১৯৬৩-১৯৭৪, গ্রিস ও তুরস্কের ওই যুদ্ধে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলটি থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল হাজার দুয়েক মানুষ। তাঁদের সন্ধানে ১৯৮১ সালে তৈরি হয়েছিল ‘দ্য কমিটি অন মিসিং পার্সনস ইন সাইপ্রাস’। নিখোঁজদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। পরিবারের থেকে নিখোঁজ ব্যক্তির বর্ণনা নেওয়া হয়। যেমন, শেষ দেখার সময়ে তিনি কী পরে ছিলেন ইত্যাদি। বাড়ির লোকেদের থেকে সংগ্রহ করা হয় রক্তের নমুনাও, যাতে ডিএনএ পরীক্ষা করা যায়। সেই সব মিলিয়েই জানা যায়, ওই গাছের জন্ম দিয়েছেন যিনি, তিনি আর কেউ নন, আহমেত।

আহমেতের বোন মুনুর এখন ৮৭ বছরের বৃদ্ধা। বললেন, ‘‘আমাদের গ্রামে চার হাজার লোকের বাস ছিল। অর্ধেক গ্রিক, অর্ধেক তুর্কি। ’৭৪ সালে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব শুরু হয়। আহমেত তুর্কিদের দলে যোগ দিয়েছিল। দিনটা মনে আছে। ১০ জুন। ভাইকে তুলে নিয়ে যায় গ্রিকরা। আর সন্ধান মেলেনি ওঁর। বছরের পর বছর খুঁজেছি। কিন্তু এ ভাবেও খোঁজ পাওয়া যায়! ভাবিনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bones Human Tree Turkey Greek War
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE