Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

বেলাগাম জ্বালানি, ফ্রান্স উত্তাল ‘হলদে’ বিক্ষোভে 

লাগামছাড়া জ্বালানির দাম। গত কাল তারই প্রতিবাদে প্যারিস থেকে শুরু করে দেশের প্রায় সর্বত্র হু হু করে ছড়িয়ে পড়েছিল আগুন। হলুদ জ্যাকেট আর গেঞ্জিতে লাখ তিনেক লোক এসে হামলে পড়েছিলেন রাস্তায়-রাস্তায়।

অচল: জাতীয় সড়ক আটকে বিক্ষোভ। পশ্চিম ফ্রান্সের কায়েনে। এএফপি

অচল: জাতীয় সড়ক আটকে বিক্ষোভ। পশ্চিম ফ্রান্সের কায়েনে। এএফপি

সংবাদ সংস্থা
প্যারিস শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৩৪
Share: Save:

লাগামছাড়া জ্বালানির দাম। গত কাল তারই প্রতিবাদে প্যারিস থেকে শুরু করে দেশের প্রায় সর্বত্র হু হু করে ছড়িয়ে পড়েছিল আগুন। হলুদ জ্যাকেট আর গেঞ্জিতে লাখ তিনেক লোক এসে হামলে পড়েছিলেন রাস্তায়-রাস্তায়। চোখ টেনেছিল ‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলনের প্ল্যাকার্ড — ‘মাকরঁ গদি ছাড়ুন’। পরিস্থিতি সামাল দিতে এন্তার কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটাল পুলিশ। চলল লাঠিও। কিন্তু দুর্ঘটনায় এক মহিলার মৃত্যুই যেন মো়ড় ঘুরিয়ে দিল আন্দোলনের। পুলিশের হিসেব বলছে, বিচ্ছিন্ন গন্ডগোলের জেরে আহত ২২৭। যার মধ্যে এক পুলিশ অফিসার-সহ সাত জনের অবস্থা গুরুতর। শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রথমে ১১৭ জনকে আটক করে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁর প্রশাসন। যাদের মধ্যে থেকে ৭৩ জনকে পরে নিজেদের হেফাজতে নেয় পুলিশ।

তা হলে কি আন্দোলন থমকে গেল? ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার থেকে প্রেসিডেন্টের আসনে বসা মাকরঁর অর্থনীতিতে ক্ষুব্ধ দেশের একটা বড় অংশ কিন্তু পিছু হটতে নারাজ। প্রয়োজনে রাস্তাতেও রাত জাগতে রাজি তাঁরা। আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, জ্বালানি-কর বৃদ্ধির কারণে চলতি শতাব্দীর গোড়া থেকেই তাঁরা ভুগছেন। মাকরঁর আমলে আরও বিগড়ে গিয়েছে পরিস্থিতি। কেন? নয়া প্রসিডেন্ট তো দিব্যি অর্থনৈতিক উন্নতির পথে হাঁটছেন বলেই দাবি তাঁর প্রশাসনের। দেশের একটা বড় অংশ কিন্তু বলছেন, এর সবটাই ধাপ্পাবাজি। মাকরঁ শুধু বড়লোকের প্রেসিডেন্ট। সমাজের নীচুতলার প্রতি তাঁর নজরই নেই। তাই প্রতিবাদ চলবেই।

যে প্রতিবাদের সলতে পাকানোটা শুরু হয়েছিল গত মাসে। সোশ্যাল মিডিয়ায়। প্রশাসনের নজর কাড়তেই ক্যাটকেটে হলুদ রংটা বেছে নেন আন্দোলনকারীরা। ঠিক হয় ‘ইয়েলো ভেস্ট’ পরেই অচল করা হবে গোটা ফ্রান্স। প্রশাসনের দাবি, গত কাল দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছোট-বড় মিলিয়ে হাজার দুয়েক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে দেশের প্রায় সব জাতীয় সড়ক এবং ব্যস্ত রাস্তায়। বেশির ভাগ আন্দোলন শান্তিপূর্ণ হলেও, তাল কাটল পূর্ব স্যাভয় অঞ্চলে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে সেখানে অবরোধের মুখে পড়েন এক মহিলা। আন্দোলনকারীরা নাছোড় দেখে একটা সময়ে মেজাজ হারিয়েই তিনি গাড়ি চালিয়ে দেল ভিড়ের মধ্যে। আর তাতেই গাড়ি চাপা পড়ে মৃত্য হয় তেষট্টি বছরের এক মহিলার।

এতে এলাকায় পুলিশি তৎপরতা বাড়লেও, রাজধানী প্যারিসে তত ক্ষণে প্রেসিডেন্টের প্যালেস ঘেরাও অভিযানে নেমে পড়েছেন হাজার-হাজার উত্তেজিত জনতা। এ বার রাস্তা আটকাতে শুরু করে পুলিশ। কাঁদালে গ্যাসের ঢেলায় ভিড়ও পাতলা হয়ে যায় অল্প সময় পরেই। তবু ধিকি ধিকি আগুনটা রয়েই গেল। চিন্তায় প্রশাসনও।

গত বছর ক্ষমতায় আসা প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তা এখনই অন্তত ২৫ শতাংশ কমে গিয়েছে বলে জানাচ্ছে দেশের একাধিক জনমত সমীক্ষা। ‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলনে তাই সাড়া দিয়েছেন প্রায় ৭৩ শতাংশ নাগরিক। দেশের মানুষকে যে তিনি সন্তুষ্ট করতে পারছেন না, মাকরঁ কার্যত সেটা মেনেও নিয়েছেন। গত সপ্তাহে এক টিভি-সাক্ষাৎকারে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘কোথাও একটা খামতি তো আছেই। না হলে নেতাদের সঙ্গে ফরাসিদের মনের মিল হবে না কেন!’’ মাকরঁ কথা দেন, জ্বালানি-ক্ষোভ কমাতে একগুচ্ছ নতুন প্রকল্প হাতে নেবেন। কিন্তু জ্বালানি-কর ফের জানুয়ারিতেই আর এক প্রস্ত বাড়বে বলে জানিয়েছে তাঁর প্রশাসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

France Fuel protest Yellow vests
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE