সিধু-সঙ্গ: শপথের পরে ক্রিকেটের বন্ধুদের সঙ্গে ইমরান।
ঝলমলে স্ফটিকের বিশ্বকাপ ট্রফিটা দু’হাতে তুলে ধরে মাইক্রোফোনের সামনে তিনি বলেছিলেন, ‘‘ক্রিকেট জীবনের সায়াহ্নে এসে আজ আমি গর্বিত।’’
মেলবোর্নের ঐতিহাসিক রাতের ছাব্বিশ বছর পরে সেই ক্রিকেট অধিনায়ক আজ পঁয়ষট্টির প্রৌঢ়। ছাইরঙা-কালো শেরওয়ানি পরনে। চোখে রিডিং গ্লাস। সামনে ফের মাইক্রোফোন। এ বার তাঁর হাতে ধরা শপথবাক্যের ফোল্ডার। পাশে দেশের প্রেসিডেন্ট মামনুন হুসেন।
জীবনের সম্পূর্ণ নতুন বাঁকে দাঁড়িয়ে ইমরান আহমেদ খান নিয়াজ়ি আজ কি কাঁদছিলেন? সংবাদমাধ্যমের একাংশের দাবি— হ্যাঁ। শূন্য থেকে শুরু করা রাজনৈতিক জীবনে ধাক্কা খেতে খেতে এগিয়ে আজ পাকিস্তানের ২২তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার সময়ে আবেগে গলা বুজে আসছিল ইমরানের।
পাক সেনাপ্রধানকে আলিঙ্গন সিধুর।
দিনটার পরতে পরতে তো আবেগই! শপথের অনেক আগে, সকাল ৯টার আশেপাশে প্রাক্তন পাক স্পিনার মুস্তাক আহমেদ টুইট করলেন একটা গ্রুপ ছবি। ছবিতে তাঁর সঙ্গে ওয়াকার ইউনুস, ইনজ়ামাম-উল-হক, আকিব জাভেদ। মুস্তাক লিখলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের শপথে যাচ্ছি। ইতিহাসকে চোখের সামনে দেখব বলে আর অপেক্ষা করতে পারছি না।’
ইমরানের বিশ্বজয়ী দলের আরও দুই গুরুত্বপূর্ণ যোদ্ধা প্রায় ওই সময়েই পৌঁছে গিয়েছেন ইসলামাবাদের ‘আইওয়ান-এ-সদর’ বা প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে। ওয়াসিম আক্রম এবং রামিজ় রাজা। সরকারি চ্যানেলকে নভজ্যোৎ সিংহ সিধু তখন বলছিলেন, ‘‘পাকিস্তানে আজ নতুন সকাল। আসছে নতুন সরকার, যা দেশের ভাগ্য বদলে দেবে।’’
কিন্তু ইমরান কোথায়? শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা ছিল সকাল সাড়ে ৯টায়। কখন পেরিয়ে গিয়েছে নির্ধারিত সেই সময়। বাড়ছে অপেক্ষা। মহম্মদ আলি জিন্নার তৈলচিত্রের সামনে সার বাঁধা চেয়ারগুলো ভরে যাচ্ছে ক্রমশ। সেনাপ্রধান কমর জাভেদ বাজওয়া এলেন। প্রথম সারিতে বসা সিধু জড়িয়ে ধরলেন তাঁকে। হ্যান্ডশেকের পরে হাসিমুখে অনেক ক্ষণ কথাও হল দু’জনের।
আক্রম বলছিলেন, ‘‘ভোটের পর থেকে দেশটা শান্ত। সবাই আসলে দেখছে, আমরা একটা নতুন পথের যাত্রী হতে চলেছি।’’ কিন্তু তাঁর ‘কাপ্তান’ কই? খবর এল, গাড়িতে মিনিট পনেরোর দূরত্বে বানি গালায় নিজের বাড়ি থেকে একটু পরেই বেরোবেন তিনি। সরকারি কনভয় পৌঁছে গিয়েছে তাঁকে আনতে। তত ক্ষণে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে পৌঁছেছেন ‘বুশরা বিবি’। ইমরানের তৃতীয় স্ত্রী বুশরা মানেকাকে এই নামেই ডাকে পাক সংবাদমাধ্যম। সাদা বোরখা পরা বুশরার সঙ্গে কুশল বিনিময় করলেন কয়েক জন। ইমরান-পত্নীর অভিব্যক্তি বোঝা গেল না। কারণ, চোখ দু’টো বাদে তাঁর গোটা মুখই ছিল ঢাকা।
আবার অপেক্ষা। কখন আসবেন ইমরান?
এবং ইমরান এলেন। গাড়ি থেকে নামতেই তাঁকে ঘিরে নিলেন সেনাকর্তারা। মঞ্চ সাজানোই ছিল। তার ঠিক পিছনের পেল্লায় দরজাটা খুলে গেল এ বার। ভাবী প্রধানমন্ত্রীকে পাশে নিয়ে বেরিয়ে এলেন প্রেসিডেন্ট। ঘড়িতে তখন ১০টা ১০।
জাতীয় সঙ্গীত, ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠের পরে শপথ। দীর্ঘ শপথবাক্য চোস্ত উর্দুতে পড়ছিলেন প্রেসিডেন্ট। তাল রাখতে গিয়ে কোথাও কোথাও হোঁচট খেলেন ইমরান। এক বার শব্দের অর্থও গেল পাল্টে। প্রেসিডেন্ট ধরিয়ে দেওয়ায় অপ্রস্তুত হেসে বললেন, ‘সরি’। শুধরে নিলেন ভুল। শপথ শেষ হতেই হাততালি।
ইমরান বলেছিলেন, খরচে লাগাম টানবেন তিনি। আজ অতিথিদের জন্য ব্যবস্থা ছিল শুধু চায়ের। শপথের পরেই ইমরানের দল জানিয়ে দিয়েছে, পরবর্তী প্রেসিডেন্ট পদে আরিফ আলভিকে মনোনীত করেছে তারা। একটা বিতর্ক অবশ্য রইল। ইমরানের জন্য কাশ্মীরি শাল নিয়ে যাওয়া সিধুর ঠিক পাশেই বসানো হয়েছিল পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের প্রেসিডেন্ট মাসুদ খানকে। যা নিয়ে দিল্লিতে উষ্মা জানিয়েছেন কেউ কেউ।
ছবি: এএফপি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy