ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর আমেরিকার হিন্দুত্ববাদী প্রবাসী সংগঠনগুলি উচ্ছ্বসিত হয়েছিল। উল্লাস প্রকাশ করেছিলেন রাম মাধবের মতো আরএসএস থেকে আসা বিজেপি নেতারাও। মুসলমান বিরোধিতা-সহ বিভিন্ন প্রশ্নে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ট্রাম্পের রসায়ন জমে উঠবে— এটাই ছিল তাঁদের সার্বিক আশার কারণ।
কিন্তু মোদী সরকারের মেয়াদের শেষ প্রান্তে এসে দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতায় বসার পর থেকে তাচ্ছিল্য এবং বিদ্রুপই প্রধান অস্ত্র থেকেছে ট্রাম্পের মোদী-নীতির। সূত্রের খবর, চলতি বছরের প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতে তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মোদী। সেই আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্ট-এর গ্রীষ্মাবাস ক্যাম্প ডেভিড এ যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন মোদী। সেই ইচ্ছাও পূরণ করার কোনও আগ্রহ দেখায়নি ট্রাম্প প্রশাসন।
শুধু এ টুকুই নয়। গত দু’বছরে একাধিক বার মোদী সম্পর্কে বিদ্রুপাত্মক আচরণ করতে দেখা গিয়েছে ট্রাম্পকে। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বারাক ওবামাও ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে মোদী-জমানার অসহিষ্ণুতা নিয়ে সরব হয়েছিলেন। রাজনৈতিক আর্দশের দিক দিয়েও তিনি ছিলেন মোদীর ভিন্ন মেরুর। কিন্তু তাঁকে কখনও ব্যক্তিগত স্তরে ঠাট্টা তামাশা করতে দেখা যায়নি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে। বরং হায়দরাবাদ হাউসে তাঁকে পাশে বসিয়ে যখন ‘বারাক’ বলে সম্বোধন করেছেন মোদী তখন স্মিত হাসিই দেখা গিয়েছিলেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্টের মুখে।
এর আগে হার্লে ডেভিডসন মোটরবাইকের শুল্ক ছাড় সংক্রান্ত মন্তব্য থেকে শুরু করে মোদীর জন্য ভাল পাত্রী খোঁজা নিয়ে ঠাট্টা, অথবা মোদীর ইংরেজি বলার ভঙ্গি নকল করে দেখানো— সবেতেই মোদী সম্পর্কে ট্রাম্পের তাচ্ছিল্য ফুটে উঠেছে। সম্প্রতি আফগানিস্তানে ভারতের লাইব্রেরি বানানোর বিষয়টি নিয়ে তিনি যে ভাবে প্রধানমন্ত্রীকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেছেন, তাতে প্রতিবাদ জানাতে বাধ্য হয়েছে বিরোধী দলও।
কূটনীতির লোকজন মানছেন, মোদী জমানায় আমেরিকার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ভাল ভাবেই শুরু হয়েছিল। কিন্তু এই ক’বছরে মিঠে ভাবটা কেটে গিয়ে বেশ খানিকটা তিক্ততা ও হতাশা তৈরি হয়েছে। ট্রাম্প-মোদীর রসায়ন ঠিক মতো না জমাটাও এর জন্য দায়ী। এইচ১-বি ভিসা থেকে আফগানিস্তান নীতি— কোনও ক্ষেত্রেই ভারতের অনুরোধকে যে ওয়াশিংটন অগ্রাধিকার দিচ্ছে না, সেটা স্পষ্ট। ইরান থেকে তেল কেনা বা রাশিয়া থেকে অস্ত্র আমদানির উপরে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সাময়িক ছাড় দেওয়া হয়েছে ঠিকই, কিন্তু উঠতে বসতে লাল চোখ দেখিয়ে যাচ্ছে মার্কিন প্রশাসন। কোনও কৌশলগত বন্ধু রাষ্ট্রের নেতার প্রতি এতটা ব্যক্তিগত বিতৃষ্ণা কাজ করলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়া খুব সহজ নয় বলে মনে করছেন সাউথ ব্লকের কর্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy