বক্তা: সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের শীর্ষ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার আস্তানায়। ছবি: পিটিআই।
দীর্ঘ বারো বছরের অপেক্ষা শেষ। অবশেষে ‘ঘরের কাছের’ বহুরাষ্ট্রীয় গোষ্ঠী সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)-এর প্রতিনিধিপদ পেল ভারত।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, এই গোষ্ঠীটিতে যে চিনা-কাঁটা বিছানো থাকবে সেটা ভাল করেই জানে নয়াদিল্লি। আর তা জেনেও এসসিও-তে ঢোকার জন্য ধারাবাহিক ভাবে আগ্রহ দেখিয়ে আসছে এনডিএ এবং তার আগের মনমোহন সিংহ সরকার। আজ এসসিও-তে ঢোকার পরে সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে ধন্যবাদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ‘‘অবশেষে ভারত এমন একটি গোষ্ঠীর প্রতিনিধি হল যার সঙ্গে যুক্ত দেশগুলি বিশ্বের মোট ২০% জিডিপি-র অধিকারী এবং বিশ্বের ৪০% মানুষ থাকেন এই দেশগুলিতে।’’
ভারত, পাকিস্তান এবং ইরানকে এসসিও-তে পরিদর্শক রাষ্ট্র হিসেবে যুক্ত করা হয়েছিল ২০০৫ সালে। মূলত চিনের অনাগ্রহে এত দিন দরজা বন্ধ ছিল ভারতের। বিদেশমন্ত্রক জানাচ্ছে, শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সক্রিয় কূটনৈতিক দৌত্যেই এসসিও-তে প্রবেশাধিকার পেল ভারত। অন্য দিকে একই ভাবে পাকিস্তান ঢুকল চিনের সমর্থনে।
প্রশ্ন উঠছে, কী মোক্ষলাভ হবে এর সদস্য হয়ে? কেনই বা তার জন্য উদ্গ্রীব অপেক্ষায় ছিল সাউথ ব্লক! বিশেষ করে এই গোষ্ঠীতে চিনের দাদাগিরি যেখানে সহজে বন্ধ করা সম্ভব নয় ভারতের পক্ষে। বরং নয়াদিল্লির অনেক প্রয়াসই বানচাল হয়ে যেতে পারে এই গোষ্ঠীতে। কিন্তু এই ‘কাঁটার’ কথা না ভেবে এর ইতিবাচক দিকটিকেই বড় করে দেখতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।
আরও পড়ুন:ম্যাজিক সংখ্যা নেই, জোটের পথে টেরেসা
কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসসিও সদস্য হওয়ায় একাধিক লাভ ভারতের। ইউরোপের অনেক বহুরাষ্ট্রীয় গোষ্ঠীর সদস্য হলেও, এত দিন মধ্য এশিয়া তথা পূর্ব ইউরোপের কোনও বড় গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ছিল না ভারত। চিন, রাশিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান— এসসিও-র সদস্য এই ছ’টি দেশের সঙ্গে আলাদা ভাবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই তা ছিল ম্রিয়মাণ। আনেক দিন ধরেই প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদ, গ্যাস এবং তেলে সমৃদ্ধ এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে ভারতের স্বার্থের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন মোদী। এত দিনে তা সম্ভব হল। এই গোষ্ঠীর সদস্য হওয়ার সুবাদে পৃথক ভাবে দেশগুলির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক স্তরে বাণিজ্যিক, পরিবহন, শক্তি এবং ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে যোগাযোগ অনেকটাই বাড়বে বলে মনে করছে সাউথ ব্লক। পাশাপাশি এই গোষ্ঠীকে কাজে লাগিয়ে গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা এবং সন্ত্রাস-বিরোধিতার প্রশ্নে ভারত আরও বেশি করে নিজের মতামত তুলে ধরতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী মোদী যে চেষ্টা শুরু করে দিয়েছেন গোষ্ঠীতে পা রাখার প্রথম দিনেই।
এখনও পর্যন্ত এসসিও-র সিদ্ধান্ত এবং কার্যকলাপ সবই নিয়ন্ত্রিত হয় চিনের প্রভাবে। গোষ্ঠীর যৌথ সামরিক মহড়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন যৌথ কর্মসূচির ক্ষেত্রে চিন এবং তার সেনাবাহিনী জড়িত থাকে ওতপ্রোত ভাবে। এমন একটি গোষ্ঠীতে নিজেদের প্রতিনিধিত্ব থাকলে চিনের বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ তথ্য এবং অন্যান্য কার্যকলাপ সম্পর্কে ওয়াকবিহাল থাকারও সুযোগ বাড়বে। চিনের সঙ্গে বেশ কিছু ক্ষেত্রে দরকষাকষি করতেও এর ফলে সুবিধে হবে বলেই মনে করছে সাউথ ব্লক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy