Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

জলবায়ু চুক্তি থেকে সরেই দাঁড়াল ট্রাম্পের আমেরিকা

ঘুরেফিরে আবারও সেই ভারত আর চিনকে দুষেই! প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অবশ্য বুঝিয়ে দিলেন, আমেরিকা চুক্তি খারিজ করলেও পরিবেশ রক্ষায় অনড়ই থাকবে ভারত।

নারাজ: হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এপি

নারাজ: হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এপি

ওয়াশিংটন
সংবাদ সংস্থা  শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৭ ০৩:১১
Share: Save:

মিলে গেল পূর্বাভাস। প্যারিসের জলবায়ু চুক্তি থেকে শেষমেশ সরেই দাঁড়াল ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকা। ঘুরেফিরে আবারও সেই ভারত আর চিনকে দুষেই! প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অবশ্য বুঝিয়ে দিলেন, আমেরিকা চুক্তি খারিজ করলেও পরিবেশ রক্ষায় অনড়ই থাকবে ভারত।

বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প ঘোষণা করেন, এই চুক্তি আমেরিকার উন্নয়নের পথে কাঁটা। তাঁর যুক্তি, এই চুক্তির আওতায় থাকার ফলে বোঝা বাড়ছে আমেরিকার। কিন্তু ফায়দা লুটছে ভারত, চিনের মতো দেশ।

হঠাৎ চিন, ভারতকে নিয়ে কেন পড়লেন ট্রাম্প? বিশ্ব উষ্ণায়ন ঠেকাতে ২০১৫-র সেই চুক্তিতে রাজি হয়েছিল ১৯৫টি দেশ। আর সে জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলির থেকে অনুদান আদায়ের কথাও বলা হয়েছিল খসড়ায়। ২০০৫-এ গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের যা মাত্রা ছিল, ২০২৫-এর মধ্যে তা ২৬-২৮ শতাংশ কমানোর কথা আমেরিকার। আর ২০২০-র মধ্যে অনুদান দেওয়ার কথা ৩০০ কোটি ডলারের। যার মধ্যে ওবামা জমানায় ১০০ কোটি দেওয়া হয়ে গিয়েছে। ট্রাম্পের আপত্তি এই জোড়া শর্তেই। তিনি বলেন, ‘‘এটা অন্যায়। এই চুক্তি শুধুই ভারত ও চিনের মতো দেশকে প্রাধান্য দিচ্ছে। কোটি কোটি ডলার আর্থিক সাহায্য পাচ্ছে ওরা। এ বার দ্বিগুণ কয়লা উৎপাদনের ছাড়পত্র পাবে ভারত। ফায়দা লুটবে চিনও।’’

ট্রাম্প বললেন বটে, কিন্তু হিসেবে গরমিল থাকছেই। রিপোর্ট বলছে, দূষণ সৃষ্টিকারী দেশগুলির মধ্যে চিন সবার উপরে হলেও, ভারতের অবস্থান চতুর্থ। যেখানে আমেরিকার অবস্থান চিনের ঠিক পরেই। একাধিক মার্কিন সংবাদমাধ্যমেরই রিপোর্ট বলছে, গত এক বছরে অন্তত ২ শতাংশ কার্বন নির্গমন বেড়েছে আমেরিকার। সেখানে ভারত সম্প্রতি যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, তাতে বলা হয়েছে ২০২৭-এর মধ্যে অজীবাশ্ম জ্বালানি থেকে ৫৭ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে দেশে। যা ২০১৫-র চুক্তিতে বলা মাত্রার থেকে ৫০ গুণ বেশি। মাথাপিছু কার্বন নির্গমন ধরলেও ভারতের থেকে দূষণের দায় অনেক বেশি কাতার, কুয়েত, এমনকী আমেরিকারও। তাই নয়াদিল্লির দাবি, ট্রাম্পের অভিযোগ যথার্থ নয়। চুক্তিতে অন়ড় থাকার কথা জানিয়েছেন ভারতের পরিবেশ মন্ত্রী হর্ষ বর্ধন। আর রাশিয়া সফররত মোদী বলেন, ‘‘প্যারিস চুক্তি হোক বা না অন্য কিছু, পরিবেশ দূষণের কোনও অধিকার নেই আমাদের। সুস্থ ও সুন্দর পৃথিবীর অধিকার রয়েছে সবার। আমরা তা ছিনিয়ে নিতে পারি না।’’

আরও পড়ুন:রাশিয়ায় ফের সন্ত্রাস নিয়ে সরব প্রধানমন্ত্রী মোদী

ট্রাম্পের অভিযোগ, পরিবেশ রক্ষায় উন্নয়নশীল দেশগুলিকে সাহায্য করার নামে খামোখা অর্থনৈতিক বোঝা চাপানো হয়েছে আমেরিকার উপর। এটা হতে দেওয়া যায় না। তাই এর পরিবর্তে ন্যায্য কোনও চুক্তির লক্ষ্যেই তিনি আলোচনার বসবেন বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে। যাতে পরিবেশের পাশাপাশি ভাবা হবে মার্কিন জনগণের কর্মসংস্থান নিয়েও।

ট্রাম্পের এই ঘোষণার মিনিট খানেকের মধ্যেই ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইতালি যৌথ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, এই চুক্তি বদল সম্ভব নয়। তাই আর আলোচনার প্রশ্নই উঠছে না। ফরাসি প্রেসি়ডেন্ট ইমানুয়েল মাক্‌রঁ ট্রাম্পকে বিঁধতে তাঁরই স্লোগান অস্ত্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন— ‘মেক আওয়ার প্ল্যানেট গ্রেট এগেন।’ উত্তরসূরির এই সিদ্ধান্তে হতাশ প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও। তবু তিনি ভরসা রাখতে চাইছেন দেশবাসীর সদিচ্ছার উপরেই। তাঁর কথায়, ‘‘প্রশাসন না চাইলেও আমেরিকার মানুষ ও শিল্পপতিরা সুস্থ ও সুন্দর ভবিষ্যতের লক্ষ্যে এগিয়ে যাবেন বলেই আমার বিশ্বাস।’’

আমেরিকা এ ভাবে চুক্তি থেকে সরতে পারে কিনা, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও। প্রেসিডেন্ট অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁর কোনও তাড়া নেই। আমেরিকা এই চুক্তি থেকে সরে আসবে প্রক্রিয়া মেনেই। যা শেষ হতে হতে ৪ বছর। তত দিনে মেয়াদ ফুরনোর কথা ট্রাম্পের। কূটনীতিকদের একাংশ তাই এর নিষ্পত্তিতে মার্কিন ভোটারদের দিকেই তাকিয়ে থাকছেন।

ট্রাম্পে না-খুশ তাঁর দেশেরই সিংহভাগ শিল্পপতি। অ্যাপল, টুইটার, টেসলা, মাইক্রোসফট, আইবিএম-কর্তারা সুর চড়িয়েছেন এর বিরুদ্ধে। যার মোদ্দা কথা একটাই— এতে শুধু আমেরিকা নয়, গোটা বিশ্বেরই ক্ষতি। প্রেসিডেন্টের ‘দূরদৃষ্টিহীনতা’কে বিঁধে ফেসবুক কর্তা মার্ক জুকেরবার্গ বলেন, ‘‘এ ভাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেই বিপদে ঠেলে দেওয়া হলো।’’ গুগল তবু পরিবেশ রক্ষায় যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাবে বলে জানান সংস্থাটির ভারতীয় বংশোদ্ভূত সিইও সুন্দর পিচাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE