গুরুদ্বারে ঢোকার মুখে হেনস্থা করা হয় ভারতীয় আধিকারিকদের।—ফাইল চিত্র।
পাকিস্তানে হেনস্থার শিকার ভারতীয় হাই কমিশনের আধিকারিকরা। গুরু নানকের জন্মের ৫৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বুধবার সেখানে গিয়েছিলেন হাজার হাজার শিখ। তাঁদের সঙ্গে করতে দেওয়া হয়নি সেখানে কর্মরত ভারতীয় হাই কমিশনের আধিকারিকদের। এমনকি পাক সরকারের অনুমতিপত্র সঙ্গে থাকা সত্ত্বেও গুরুদ্বারে ঢুকতে দেওয়া হয়নি তাঁদের। পুণ্যার্থীদের সুবিধার্থে গতকালই পঞ্জাব থেকে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পর্যন্ত করিডরে গড়ায় সায় দিয়েছিল কেন্দ্র। এই ঘটনায় তাই স্তম্ভিত নয়াদিল্লি।
শুক্রবার বিদেশমন্ত্রকের তরফে একটি বিবৃতি জারি করে বলা হয়, ‘‘সেখানে কর্মরত হাই কমিশনের অফিসারদের ভারতীয় পুণ্যার্থীদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। যে কারণে কূটনৈতিক কাজ অসমাপ্ত রেখেই ইসলামাবাদ ফিরে যেতে হয়েছে তাঁদের। পাকিস্তানের এমন আচরণের তীব্র প্রতিবাদ করছি আমরা।’’ শুক্রবার দুপুরে দিল্লিতে নিযুক্ত পাক হাই কমিনশনার সৈয়দ হায়দর শাহকে সাউথ ব্লকে ডেকে পাঠানো হয়। তাঁকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের নানকানা সাহিব শহরে ইরাবতী নদীর তীরে ঐতিহাসিক গুরুদ্বার দরবার সাহিব কর্তারপুর অবস্থিত। সেখানে জীবনের ১৮টি বছর কাটান নানক। তাঁর সমাধিও রয়েছে সেখানে। আগামী বছর এপ্রিলে তাঁর জন্মের ৫৫০ বছর পূর্তি। সেই উপলক্ষে এখন থেকেই উৎসবে মেতেছেন শিখ ধর্মাবলম্বীরা। বুধবারই লাহৌর পৌঁছন প্রায় ৩০০০ ভারতীয় দর্শনার্থী। বৃহস্পতিবারও দলে দলে মানুষ গিয়ে হাজির হন। ফারুখাবাদের গুরুদ্বার সাচা সওদাতেও যান তাঁরা।
আরও পড়ুন: ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ‘ধর্মীয় করিডর’ তৈরিতে সায় কেন্দ্রের
আরও পড়ুন: উগ্র জাতীয়তাবাদের আগ্রাসনে খর্ব হচ্ছে ধর্মীয় স্বাধীনতা, প্রথম সারিতে ভারত, চিন
সেখানে তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে গেলে বাধা পান ইসলামাবাদে ভারতীয় হাই কমিশনে কর্মরত দুই আধিকারিক—অরণজিৎ সিংহ এবং সুনীল কুমার। বুধবার রাতে নানকানা সাহিবের গুরুদ্বারে ঢুকতে দেওয়া হয়নি তাঁদের। বৃহস্পতিবার ঢুকতে দেওয়া হয়নি গুরুদ্বার সাচা সওদাতেও। ওই দুই গুরুদ্বার কর্তৃপক্ষের যুক্তি ছিল, সম্প্রতি ‘নানক শাহ ফকির’ নামের একটি ছবির প্রদর্শনীতে সায় দেয় ভারত সরকার। তাঁদের এই পদেক্ষেপ শিখ ধর্মাবলম্বীদের ভাবাবেগে আঘাত করেছে।
সংবাদ মাধ্যম এএনআই সূত্রে একটি ভিডিয়ো সামনে এসেছে। তাতে দেখা গিয়েছে দুই আধিকারিককে গুরুদ্বারে ঢুকতে বাধা দিচ্ছেন পাকিস্তানের গুরুদ্বার প্রবন্ধক কমিটি। তাঁদের ফিরে যেতে বলা হচ্ছে। তা নিয়ে প্রশ্ন করে হলে ‘দ্য ইভাক্যুয়ি ট্রাস্ট প্রপার্টি বোর্ড’-এর সচিব তারিক ওয়াজির বলেন, ‘‘ওই ছবি মুক্তি পাওয়ার পরই ভারতীয় হাই কমিশনকে চিঠি দিয়েছিলাম আমরা। বলে দিয়েছিলাম, আধিকারিকদের যেন কোনও গুরুদ্বারে না পাঠানো হয়। নিরাপত্তা দিতে পারব না আমরা।’’
১৯৭৪ সালে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে একটি বিশেষ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যার আওতায় সারা বছর পুণ্যার্থীদের অবাধ যাতায়াতের সুযোগ করে দিতে সম্মত হয় দুই দেশ। উরস উৎসব উপলক্ষে এ বছরই ১৪৪ জন পাকিস্তানি মুসলিম পুণ্যার্থী ভারতে এসেছেন। পঞ্জাবের শেখ ফারুথি শিরহিন্দি দরগায় শ্রদ্ধা জানিয়ে গিয়েছেন। তাই নিরাপত্তার বাহানা দেখিয়ে ভারতীয় হাই কমিশনারদের গুরুদ্বারে ঢুকতে না দেওয়ায় বিতর্ক শুরু হয়েছে।
এই ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। এর আগে, জুন মাসে রাওয়ালপিণ্ডির হাসান আবদালে গুরুদ্বার পাঞ্জা সাহিবে ঢুকতে গিয়ে বাধা পান ভারতীয় হাই কমিশনার অজয় বাসারিয়া এবং তাঁর স্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy