Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
International News

ভারত-পাক বৈঠক ভেস্তে গিয়ে ‘মান’ ও ‘মন’, দুই-ই রইল মোদীর

কারণ হিসেবে দেখানো হল, জম্মু-কাশ্মীরে একটি জঙ্গি সন্ত্রাসের ঘটনা। ফলে, গত তিন বছর ধরে যে যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল, ভারত ও পাকিস্তান সেখানেই ফিরে গেল।

ইমরান খান ও নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।

ইমরান খান ও নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।

সুজয় চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৯:০৭
Share: Save:

বুধে পা দিয়ে শুক্রে হল ‘যাত্রা নাস্তি’! পরশু এসেছিল একটি ‘সাধু প্রস্তাব’। গত কাল তাতে মিলেছিল ‘সম্মতি’। আর আজ, শুক্রবার সেই প্রস্তাব পুরোপুরি বাতিল হয়ে গেল।

কারণ হিসেবে দেখানো হল, জম্মু-কাশ্মীরে একটি জঙ্গি সন্ত্রাসের ঘটনা। ফলে, গত তিন বছর ধরে যে যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল, ভারত ও পাকিস্তান সেখানেই ফিরে গেল। পাঁচিলটা রয়েই গেল সম্পর্কে!

২০১৫-য় শেষ বার ইসলামাবাদে গিয়ে তদানীন্তন পাক বিদেশমন্ত্রী সরতাজ আজিজের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ।

তিন বছর পর দুই প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্ক ‘কিছুটা স্বাভাবিক’ করার প্রাথমিক উদ্যোগে যবনিকা পড়ল রাজনীতির টানাপড়েনে। মূলত আমেরিকা ও চিনের চাপে কার্যত, বাধ্য হয়েই পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে দু’দেশের আলোচনা শুরুর প্রস্তাব দিয়েছিলেন। দৃশ্যত খুব একটা ইচ্ছা না থাকলেও, আন্তর্জাতিক মহলের কথা মাথায় রেখে বৃহস্পতিবার তাতে সায় দিয়েছিল দিল্লি। আর শুক্রবার সেই প্রস্তাব বেমালুম খারিজ করে দিয়ে মোদী সরকার বিজেপি ও আরএসএসের কট্টরপন্থীদের বার্তা দিলেন, তালভঙ্গ হয়নি মোটেই! কট্টরপন্থীরা যা চাইছেন, সরকার সেটাই করেছে! লোকসভা ভোটের আগে বিরোধীদের হাতে কোনও ‘অস্ত্র’ তুলে দেয়নি সরকার। তাঁদের বলতে দেয়নি, জওয়ান-পুলিশ খুনের পরেও ইসলামাবাদের সঙ্গে কথা বলেছে দিল্লি। আমেরিকাকেও বোঝানো গেল, ভারত তো রাজি ছিল। কিন্তু নিরাপত্তা কর্মীদের মাথা কাটলে কী ভাবে কারও সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসা যায়?

আরও পড়ুন- সোপিয়ানের জের: পাকিস্তানের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করল ভারত​

আরও পড়ুন- চিনকে শাস্তি দিয়ে ভারতকে বার্তা! সুখোই কিনলে পড়তে হবে মার্কিন কোপে​

ফলে, ভারত ও পাকিস্তানের দুই প্রধানমন্ত্রী যথাক্রমে নরেন্দ্র মোদী ও ইমরান খান নতিস্বীকার করলেন কার্যত চাপেই। সেই চাপ কখনও দেশের গণ্ডির বাইরে থেকে বা সরকারের চালিকাশক্তির একাংশ থেকে আসা। কখনও বা তা শাসকদলের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের।

এমনটাই বলছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, ভারত যে এ দিন নতুন পাক প্রধানমন্ত্রীর ‘সাধু প্রস্তাব’-এ সরাসরি ‘না’ বলে দিল, তা খুব একটা অপ্রত্যাশিত ছিল না। তবে যে ভাবে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক ইস্যুতে দিল্লির মত বদলে গেল, তা ‘নেহাতই বালখিল্যসুলভ’।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক পুরুষোত্তম ভট্টাচার্যের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী মোদী, তাঁর দল বিজেপি বা তার মন্ত্রণাদাতা আরএসএস কি জানে না, পাকিস্তানে যাঁরা ক্ষমতায় আসেন, তাঁদের ভরসা করে থাকতে হয় দু’টি প্রধান শক্তির ওপর। একটি সে দেশের সেনাবাহিনী। অন্যটি পাকিস্তানের মৌলবাদী শক্তি। এর আগেও বহু বার মৌলবাদী শক্তি খুন, সন্ত্রাসের মাধ্যমে ভেস্তে দিয়েছে দুই প্রতিবেশী দেশের কাছাকাছি আসার প্রয়াস। এ বারও পাক মৌলবাদীরাই সফল হল বলে তাঁর ধারণা। কিন্তু দিল্লি কেন গত কাল ‘হ্যাঁ’ বলে আজ ‘না’ বলল, সেটাই তাঁর বোধগম্য নয়। এটাকে মোদী সরকারের বালখিল্যসুলভ আচরণ বলে মনে হচ্ছে। পুরুষোত্তমের কথায়: ‘‘আরএসএস এবং বিজেপির কট্টরপন্থীদের চাপই নির্ধারক হয়ে উঠল।’’

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের আর এক অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সংযুক্তা ভট্টাচার্য অবশ্য মনে করছেন, খুব ভেবেচিন্তেই ‘হ্যাঁ’ আর ‘না’-এর খেলাটা খেলেছে দিল্লি। ইমরানের প্রস্তাবে রাজি না হলে আমেরিকা-সহ গোটা বিশ্ব বলত, মোদী সরকারের তা হলে সদিচ্ছা নেই? প্রধানমন্ত্রী মোদী সেটা বলতে দিলেন না। তাই বলা হয়েছিল ‘হ্যাঁ’। আর এখন ‘না’ বলার কারণ, মোদী তাঁর দল এবং আরএসএসের কট্টরপন্থীদের বোঝাতে পারলেন, তোমাদের সুরেই তো সুর বাঁধলাম। লোকসভা ভোটের আগে বিরোধীদেরও বলতে দিলেন না, পুলিশ, জওয়ানের মাথা কাটলেও মোদী সরকার ইসলামাবাদের সঙ্গে গোলটেবিলে বসে। আমেরিকাকেও জানানো গেল, সদিচ্ছার অভাব ছিল না। কিন্তু সদিচ্ছাটা একতরফা হলে তো হয় না।

সংযুক্তা মনে করছেন না, এ ব্যাপারে পাক সেনাবাহিনীর কোনও ভূমিকা থাকতে পারে। বরং তিনি বলছেন, ‘‘পাক সেনাবাহিনী চাইছে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক কিছুটা স্বাভাবিক হোক। পাক সেনাপ্রধান জেনারেল কমর জাভেদ বাজওয়ার সঙ্গে যথেষ্টই ভাল সম্পর্ক ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াতের। আর পাক সেনাবাহিনীর মদত না থাকলে আগ বাড়িয়ে মোদীকে অমন চিঠি লিখতেনও না ইমরান। বস্তুত, পাক সেনাবাহিনীর উপরে এ ব্যাপারে চিন ও আমেরিকার চাপ রয়েছে তাদের নিজেদের স্বার্থেই।’’

পুরষোত্তম ও সংযুক্তা দু’জনেই মনে করছেন, দুই প্রতিবেশীর কাছাকাছি আসার প্রাথমিক উদ্যোগ ভেস্তে দেওয়ার জন্যযদি এ বারও পাক মৌলবাদীরাই দায়ী থাকে, তা হলে এটাও বলতে হবে, ‘ঘর’ সামলাতে গিয়ে তাতে সায় ছিল প্রধানমন্ত্রী মোদী ও তাঁর দলের কট্টরপন্থীদের।

এতে আন্তর্জাতিক মহলে ‘মান’ থাকল প্রধানমন্ত্রী মোদীর। আবার লোকসভা ভোটের আগে তিনি ‘মন’ রাখতে পারলেন আরএসএসেরও!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE