Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Donald Trump

কোভিড-১৯ নয়, ট্রাম্পের বক্তৃতায় ‘শ্বেতাঙ্গ-গৌরব’

বরাবরই তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, দেশের ভালর থেকে রাজনৈতিক ভাবে যা নিজের জন্য ভাল, সেটাকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন তিনি।

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মাউন্ট রাশমোরে ডোনাল্ড ও মেলানিয়া ট্রাম্প। এএফপি

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মাউন্ট রাশমোরে ডোনাল্ড ও মেলানিয়া ট্রাম্প। এএফপি

সংবাদ সংস্থা
কিস্টোন (সাউথ ডাকোটা) শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২০ ০২:৩৯
Share: Save:

দশকের পর দশক ধরে বেঁধে-বেঁধে থাকার গানই শোনা গিয়েছে আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্টদের মুখে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট অবশ্য সগর্বে বলেন, ‘‘শ্বেতাঙ্গই সেরা।’’ দেশের ২৪৪তম স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখে শোনা গেল সেই ‘বিভাজনের নীতি’। কালো পাহাড়ের গায়ে মাউন্ট রাশমোরের পাদদেশে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘আমাদের দেশের ইতিহাস মুছে ফেলতে আন্দোলন (ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটারস) চালাচ্ছেন অনেেক। দেশনায়কদের অমর্যাদা করছেন, ছোটদের ভুল শিক্ষা দিচ্ছেন। আমাদের পূর্বপুরুষদের দিয়ে যাওয়া আশীর্বাদ আজ বিপদের মুখে।’’

কোন বিপদের কথা বলছেন ট্রাম্প! বরাবরই তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, দেশের ভালর থেকে রাজনৈতিক ভাবে যা নিজের জন্য ভাল, সেটাকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন তিনি। দেশে ক্রমবর্ধমান করোনা-সংক্রমণ ও লাখো মানুষের মৃত্যুতে এমনিতে রাজনৈতিক ভাবে বিপাকে ছিলেন ট্রাম্প। সামনেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সঙ্গে যোগ হয় গত ২৫ মে-র মিনেসোটার ঘটনা। জর্জ ফ্লয়েড নামে এক কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিনকে হাঁটুর চাপে শ্বাসরোধ করে খুন করেন এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার। এর পর দেশ জুড়ে শুরু হয় বর্ণবৈষম্য-বিরোধী আন্দোলন। জোড়া ফলায় বিপর্যস্ত ট্রাম্প তবুও অদম্য। স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের জন্য তিনি মাউন্ট রাশমোরকে বেছে নেওয়ার সময়েই প্রশ্ন উঠেছিল। সাউথ ডাকোটার ব্ল্যাক হিল আমেরিকার আদি বাসিন্দাদের জন্য পবিত্র স্থান। এই কালো পাহাড়কে এক সময় জবরদখল করে মার্কিন সরকার। ওই অঞ্চলে থাকা অন্তত ৬০টি জনজাতির মানুষকে হত্যার কলঙ্ক রয়েছে তাদের গায়ে। পাহাড়ের গায়ে খোদাই করে গড়ে তোলা হয় ‘ঔপনিবেশিকতার প্রতীক’ চার শ্বেতাঙ্গ প্রেসিডেন্টের মুখ। জর্জ ওয়াশিংটন, টমাস জেফারসন, অ্যাব্রাহাম লিঙ্কন ও থিয়োডোর রুশভেল্ট। এমন একটি জায়গাকে বেছে নেওয়ার উদ্দেশ্য কী? দেশবাসীর একাংশের মতে, ‘এটাই হল বিভাজনের নীতি’।

হোয়াইট হাউস আয়োজিত অনুষ্ঠান। কিন্তু তার সর্বাঙ্গে ছিল ট্রাম্পের প্রচারের নিদর্শন। ৪০ মিনিটের বক্তৃতায় আমেরিকার একাধিক ‘হিরো’র নাম করেন তিনি। আবার এমন কথাও বলেন, ‘‘শহরের স্কুলগুলোতে পড়ুয়াদের শেখানো হচ্ছে কী ভাবে নিজের দেশকে ঘৃণা করতে হয়।’’ তাঁর সমালোচনা থেকে বাদ যায়নি সংবাদমাধ্যমও। মিডিয়ার ‘অতি-বামপন্থী’ মতাদর্শের নিন্দা করেন তিনি। আর এই প্রসঙ্গ টেনেই শপথ নেন, মাউন্ট রাশমোরকে রক্ষা করবেন তিনি। আমেরিকার আদি বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি, ব্ল্যাক হিলের গায়ে ওই চার শ্বেতাঙ্গ মুখ মুছে ফেলতে হবে। ট্রাম্প আজ বলেন, ‘‘যাঁরা আমাদের দেশের ঐতিহ্য মুছে ফেলতে চান, তাঁরা আমাদের বিশ্বাস, সংস্কৃতি, পরিচিতিকে ধ্বংস করতে চান, যা এ দেশকে পৃথিবী-সেরা করেছে।’’ এর পরেই তাঁর হুঙ্কার, ‘‘আমাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধার প্রতীক এই মাউন্ট রাশমোর চিরকাল এ ভাবেই থাকবে।’’

আরও পড়ুন: চিনা সেনার মহড়ার মাঝেই দক্ষিণ চিন সাগরে রওনা মার্কিন রণতরীর​

আরও পড়ুন: বিজেপির ‘ডিজিটাল এডিশন’ তৈরি করেছে করোনা, দাবি মোদীর​

বিশ্বে করোনা মৃত ৫,৩১,২০৩ আক্রান্ত ১,১৩,০৭,০৬৬ সুস্থ ৬৪,১২,২০২

দেশের করোনা-পরিস্থিতির কথা অবশ্য ট্রাম্পের বক্তৃতায় এক বারই শোনা গেল। বললেন, ‘‘যাঁরা এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ছেন, তাঁদের ধন্যবাদ।’’ ট্রাম্প দম্পতির মতো বিভিন্ন প্রদেশ থেকে আসা অধিকাংশ অতিথিই মাস্ক পরেননি। গায়ে গা ঘেঁষে ঘণ্টাখানেক প্রেসিডেন্টের অপেক্ষায় বসে থেকেছেন তাঁর একনিষ্ঠ ভক্তেরা। কারণ ‘প্রাক্তন রিয়েলিটি টিভি স্টার’ এসে পৌঁছন নির্ধারিত সময়ের বেশ পরে, তারকাচিত ভাবেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE