Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Iraq

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, ‘সম্মুখ সমর’ এড়ালেন ট্রাম্প

ইরান নিয়ে আজ বিবৃতি দেওয়ার কথা ছিল স্থানীয় সময় সকাল ১১টায়। ট্রাম্প মঞ্চে এলেন প্রায় বিশ মিনিট পার করে।

হামলার পরে উপগ্রহ চিত্রে আল আসাদ ঘাঁটি।

হামলার পরে উপগ্রহ চিত্রে আল আসাদ ঘাঁটি।

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন ও তেহরান শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:১১
Share: Save:

মারতে পারি, কিন্তু এখনই মারব না... আবার বাড়াবাড়িও সহ্য করব না— কাল রাতের ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ‘সামলে’ তেহরানকে কার্যত এ ভাবেই সমঝে যাওয়ার বার্তা দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরানের উপর একগুচ্ছ নতুন নিষেধাজ্ঞা চাপানোর কথা জানিয়েও বললেন, ‘‘বিশ্বকে আরও নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ হিসেবে গড়ে তুলতে আমাদের এখন একজোট হয়ে ইরানের সঙ্গে চুক্তির ব্যাপারে এগোনো উচিত। কেউ শান্তি চাইলে, সেই প্রস্তাবে রাজি আমরা।’’ সন্ত্রাসদমন ও আত্মরক্ষার্থেই যে ‘জঙ্গি’ জেনারেল কাসেম সোলেমানিকে মারতে হয়েছিল, সেই দাবি এ দিনও বারবার উঠে এল ট্রাম্পের কথায়।

ইরান নিয়ে আজ বিবৃতি দেওয়ার কথা ছিল স্থানীয় সময় সকাল ১১টায়। ট্রাম্প মঞ্চে এলেন প্রায় বিশ মিনিট পার করে। এসেই বললেন, ‘‘আমি যত দিন প্রেসিডেন্ট আছি, ইরানকে পরমাণু বোমা বানাতে দেব না।’’ ১০ মিনিট টানা বলে প্রেসিডেন্ট বেরিয়ে গেলেন সাংবাদিকদের একটিও প্রশ্ন না-নিয়ে।

গত শুক্রবার ভোররাতে মার্কিন হানায় জেনারেল কাসেম সোলেমানি খুনের পরের দিনই জামকরন মসজিদে ‘যুদ্ধ নিশান’ লাল পতাকা উড়িয়েছিল ইরান। হুমকি, পাল্টা-হুমকি চলছিলই। এরই মধ্যে কাল মাঝরাতে ইরাকের দু’টি মার্কিন সেনাঘাঁটিতে ডজনেরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পরে ইরানের সরকারি সংবাদমাধ্যম বলেছিল— ‘৮০ মার্কিন জঙ্গি খতম।’ প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প গত কালই টুইট করেছিলেন, ‘অল ইজ় ওয়েল। ক্ষয়ক্ষতি কী হয়েছে, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ আজ হোয়াইট হাউসে তিনি দাবি করলেন, ‘‘আমাদের এক জন সেনাও মারা যায়নি। তবে পরমাণু চুক্তির সময়ে কোটি কোটি ডলার নিয়ে আমাদের উপরেই ওরা যে ভাবে হামলা চালাল, তা বরদাস্ত করা হবে না। নিষেধাজ্ঞা থাকবেই, যত দিন না ওরা শোধরাচ্ছে।’’ বারাক ওবামা আমলে ইরানের পরমাণু চুক্তিকেও এ দিন একহাত নিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘‘একপেশে ওই চুক্তিতে বিপুল অর্থ পেয়ে ইরানের উচিত আমাদের ধন্যবাদ জানানো। তা না-করে বলছে— আমেরিকা নিপাত যাক।’’

আরও পড়ুন: বিমান ভেঙে ইরানে মৃত ১৭৬

কালকের হামলা নিয়ে ইরাক জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তাদের সেনার গায়েও আঁচড় পড়েনি। যদিও ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেইয়ের দাবি, ‘‘আমরা সপাটে চড় কষিয়েছি আমেরিকার গালে।’’ এই হামলাকে ‘মাপা জবাব’ বলে ইরানের বিদেশমন্ত্রী জাভেদ জ়ারিফও বল ঠেলে দেন আমেরিকার কোর্টে। তাঁর কথায়, ‘‘রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদের ৫১ নম্বর অনুচ্ছেদ মেনে আমরা আত্মরক্ষার্থে মেপে জবাব দিয়েছি আমরা। হিসেব বরাবর।’’

ইরানের হানার পরে উদ্বেগ ছড়িয়েছিল— আমেরিকা না জানি কী জবাব দেয়। তারা যুদ্ধং দেহি মনোভাব নিলে আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়ত পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতি। এখন ইরাক-ইরানের আকাশ এড়িয়ে চলছে আন্তর্জাতিক উড়ানগুলি। ভারত, ব্রিটেন ও অন্য কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের ওই অঞ্চল থেকে সরে আসার আর্জি জানিয়েছে। যুদ্ধের আশঙ্কায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন সংযত হওয়ার আর্জি জানিয়েছে উভয় পক্ষকে। সোলেমানি খুনের ‘বদলায়’ ইরান সম্প্রতি পরমাণু চুক্তি ছেড়ে বেরিয়ে আসার কথা ঘোষণা করেছে। তা পুনর্বিবেচনা করতে ইরানের বিদেশমন্ত্রীকে ব্রাসেলসেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে খুন হয়েছিলেন সোলেমানি। তার ঠিক চার দিনের মাথায় ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ধেয়ে এল ইরাকের মাটিতে। ইরাকি সেনার দাবি, কাল রাত দেড়টা থেকে পৌনে ২টোর মধ্যে আল-আসাদ এবং ইরবিলের ঘাঁটিতে মোট ২২টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। তবু তাদের কেউ মারা যায়নি বলে জানাল ইরাকের পরে আমেরিকাও। কী ভাবে এড়ানো গেল এই বিপর্যয়? ইরাকের তদারকি প্রধানমন্ত্রী আদেল আব্দেল মাহদির দফতর ইঙ্গিতপূর্ণ বিবৃতিতে জানিয়েছে, হামলার কথা ইরান মৌখিক ভাবে তাদের আগাম জানিয়েছিল। তবে ‘টার্গেট’ জানা ছিল না। অন্য একটি সূত্রের দাবি, ইরাক যথাসময়ে মার্কিন সেনাকেও সেই তথ্য পৌঁছে দিয়েছিল। সেই কারণেই ট্রাম্প আগাগোড়া এতখানি ‘নিরুত্তাপ’ বলে মনে করছেন অনেকে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজে অবশ্য এই হামলা ‘ভেস্তে’ দেওয়ার জন্য মার্কিন গোয়েন্দাদেরই কৃতিত্ব দেন।

আরও পড়ুন: ‘সপাটে থাপ্পড় কষিয়েছি’, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর আমেরিকাকে কটাক্ষ খামেনেইয়ের

পশ্চিমের একাধিক নিরাপত্তা এজেন্সিরও দাবি, ইরানের হানায় প্রাণহানি হয়নি। ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু কিন্তু বলেন, ‘‘আমাদের মাটিতে হামলা হলে, ভুগবে ইরান।’’ ‘ইজ়রায়েলের মতো বন্ধু আর আমেরিকার নেই’ বলে আজ মন্তব্য করেন তিনি।

এমনই পোক্ত জোট বাগদাদের সঙ্গে চাইছে তেহরানও। ইরানি সমর্থনপুষ্ট ইরাকের সশস্ত্র শিয়া বাহিনী আজই বাগদাদের কাছে আর্জি জানিয়েছে, তারা যেন ইরানের সুরেই জবাব দেয় আমেরিকাকে। বাগদাদের মাটিতে মার্কিন ড্রোন হামলা তাদের ‘সার্বভৌমত্বে আঘাত’— এই অভিযোগে দেশ থেকে মার্কিন সেনা হটাতে প্রস্তাব পাশ হয়েছে ইরাকি পার্লামেন্টে। এ দিন আবার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নিয়ে বাগদাদ একই অভিযোগ তুলেছে ইরানের বিরুদ্ধে। দু’পক্ষের লড়াইয়ে ইরাকের মাটি ব্যবহার করা যাবে না বলে আজ জানান ইরাকি পার্লামেন্টের স্পিকার মহম্মদ আল-হালবুসি।

মার্কিন সেনাকে অঞ্চলছাড়া করার দাবিতে এ দিনও সুর চড়ান খামেনেই। তাঁর কথায়, ‘‘সামরিক আক্রমণটাই যথেষ্ট নয়। সমগ্র পশ্চিম এশিয়া থেকে আমেরিকার বিষাক্ত উপস্থিত মুছে ফেলাটাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’’

তবে দিনের শেষে সংঘাতটা যে বিবৃতিতেই বন্দি রইল, স্বস্তি সেটাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Iraq Iran USA Israel Qasem Soleimani
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE