Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মার্কিন সেনাকে ‘জঙ্গি’ তকমা ইরানের!

 ইরানের ‘শ্যাডো কমান্ডার’ জেনারেল কাসেম সোলেমানিকে গোড়া থেকেই ‘জঙ্গি’ বলে আসছে ওয়াশিংটন। এর পাল্টা দু’দিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘সুট-পরা জঙ্গি’ বলে বিঁধেছিলেন ইরানের মন্ত্রী মহম্মদ জাভেদ আজ়ারি-হরোমি।

ইরান পার্লামেন্ট, মঙ্গলবার। পিটিআই

ইরান পার্লামেন্ট, মঙ্গলবার। পিটিআই

সংবাদ সংস্থা
তেহরান শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২০ ০২:৪৯
Share: Save:

ইরানের ‘শ্যাডো কমান্ডার’ জেনারেল কাসেম সোলেমানিকে গোড়া থেকেই ‘জঙ্গি’ বলে আসছে ওয়াশিংটন। এর পাল্টা দু’দিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘সুট-পরা জঙ্গি’ বলে বিঁধেছিলেন ইরানের মন্ত্রী মহম্মদ জাভেদ আজ়ারি-হরোমি। আজ পুরো মার্কিন সেনাবাহিনীকেই ‘জঙ্গি’ বলে দেগে দিল ইরানি পার্লামেন্ট।

ইরান বদলা নেওয়া চেষ্টা করলে, সেখানে বাছাই করে রাখা ‘৫২ টার্গেট’ গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। এর জবাব দিতে কাল আসরে নেমেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রৌহানি। ‘ইরানকে ভয় দেখালে ভুগতে হবে’ বলে তাঁর টুইট, ‘‘যারা ৫২-র হুমকি দিচ্ছে, তারা যেন ২৯০ সংখ্যাটা ভুলে না-যায়!’’ ১৯৭৯-তে ইরান-বিপ্লবের সময়ে মার্কিন দূতাবাসে ৫২ জনকে টানা ৪৪৪ দিন পণবন্দি করে করে রাখা হয়েছিল। ইরানকে হুমকির মুখে রেখে সেই স্মৃতিই উস্কে দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এর পাল্টা রৌহানি মনে করিয়ে দিলেন, ১৯৮৮ সালে ইরানি বিমানের উপর মার্কিন আঘাতে ২৯০ জনের মৃত্যুর ঘটনা। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেই গোড়া থেকেই বদলার দাবিতে সরব হলেও, রৌহানির এমন ইঙ্গিতপূর্ণ হুঁশিয়ারি এই প্রথম বলে মনে করা হচ্ছে। ফুঁসছেন সোলেমানির পদে আসা জেনারেল ইসমাইল গনিও। তাঁর বার্তা, ‘‘শহিদ সোলেমানির অসম্পূর্ণ কাজ এ বার শেষ করবে ইরান। এই অঞ্চল থেকে আমেরিকাকে আমরা হটিয়েই ছাড়ব।’’ পার্লামেন্টের যে অধিবেশন কাল মার্কিন সেনাকে ‘জঙ্গি’ বলে ঘোষণা করেছে, সেখানেই একটি বাজেট প্রস্তাবে ইরান রেভোলিউশনারি গার্ড কোরের কাডস ফোর্সকে অতিরিক্ত ২০ কোটি ডলার দেওয়ার কথাও উঠেছে।

চুপ করে বসে নেই আমেরিকাও। মিত্র দেশগুলির সঙ্গে লাগাতার ফোনালাপ করে চলেছেন ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ হোয়াইট হাউসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। ট্রাম্প বলছেন, তাঁর টার্গেটে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রও রয়েছে। এ নিয়ে আগাম উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউনেস্কো। পেন্টাগনও ট্রাম্পের এই হুঁশিয়ারি থেকে কার্যত দূরত্ব বজায় রেখেই আজ জানাল, সামরিক সংঘাতের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইন মেনেই চলবে আমেরিকা। তা-হলে কি ইরানের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে হামলা করা হবে না? এর জবাবে মার্কিন প্রতিরক্ষাসচিব মার্ক এস্পার স্পষ্ট বলেন, ‘‘আইনে তো তেমনটাই বলা আছে।’’ ১৯৫৪-র দ্য হেগ কনভেনশন মোতাবেক, সামরিক অভিযানের পরিস্থিতি তৈরি হলেও যে কোনও মূল্যে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র রক্ষা করতেই হবে। ট্রাম্প তবু অনড়ই।

এরই মধ্যে আবার অন্যায় ভাবে আমেরিকা তাঁর ভিসা বাতিল করেছে বলে অভিযোগ করলেন ইরানের বিদেশমন্ত্রী মহম্মদ জাভেদ জ়ারিফ। আগামী বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। জ়ারিফের দাবি, আমেরিকাই যে ভিসা আটকেছে, এটা খোদ রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব জানিয়েছেন তাঁকে। তাঁর অভিযোগ, হাটে হাঁড়ি ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কাতেই আটকে দেওয়া হল তাঁকে।

কিন্তু আমেরিকা কি এমনটা করতে পারে— উঠছে প্রশ্ন। ১৯৪৭-এ রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘সদর দফতর চুক্তি’ অনুযায়ী রাষ্ট্রপুঞ্জে আমন্ত্রিত বিদেশি কূটনীতিকদের ভিসা দিতে বাধ্য আমেরিকা। কিন্তু ওয়াশিংটন সূত্রের দাবি, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ‘জাতীয় নিরাপত্তা, সন্ত্রাস ও বিদেশনীতি’-র কারণেই এ ক্ষেত্রে আটকানো হল জ়ারিফকে। যদিও মার্কিন বিদেশ দফতর এখনও এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। মুখে কুলুপ এঁটে রাষ্ট্রপুঞ্জের মুখপাত্র স্টিফেন দুজ়ারিক-ও। রাষ্ট্রপুঞ্জে ইরানের দূত মজিদ তখ্‌ত রাভাঞ্চি তবু এরই মধ্যে মার্কিন হামলাকে ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, আন্তর্জাতিক বিধিভঙ্গ’ বলে চলেছেন। গত বছর এপ্রিল, জুলাইয়ে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে গিয়েছিলেন জ়ারিফ। সেপ্টেম্বরেও যান। তত দিনে অবশ্য, ‘খামেনেইয়ের বেপরোয়া কর্মসূচি’ প্রচার ও রূপায়ণের অভিযোগে তাঁর উপর গুচ্ছ নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দিয়েছে আমেরিকা। এই পরিস্থিতিতে তাঁকে ভিসা দেওয়া নিয়ে আজ আমেরিকার কাছে আর্জি জানিয়েছে চিন।

ইরান-আমেরিকা টানাপড়েনের জেরে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আজ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তেনিয়ো গুতেরেসও। তাঁর কথায়, ‘‘ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এই শতাব্দীতে চরম আকার নিয়েছে। ক্রমাগত তা বেড়েই চলেছে। ভয়ঙ্কর সময়ের মধ্যে বাস করছি আমরা। টালমাটাল দুনিয়া— এরই মধ্যে নতুন বছর শুরু হয়ে গেল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Iran Iran Parliament USA US Troop
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE