কালো পোশাক, কালো পতাকা। হাতে কালাশনিকভ। তাদের কাছে শত্রুর চরম শাস্তি মানে শিরচ্ছেদ। আর তাদের নিশানা থেকে বাদ নেই ভারতও!
দু’মাস আগে এমন আশঙ্কার কথা প্রথম জানা গিয়েছিল এনআইএ-র এক চার্জশিটে। মঙ্গলবার এক মার্কিন দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনও দাবি করল, ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর জঙ্গিরা ভারতের বুকে বড়সড় হামলা চালাতে কোমর বাঁধছে। এমন হামলা, যাতে পুরোদস্তুর যুদ্ধ শুরু হবে, এবং যাতে মাথা গলাতে বাধ্য হবে আমেরিকাও। আইএসের ভাবনা অনুযায়ী, এতে আখেরে ‘আরম্যাগেডন’ বা পৃথিবী ধ্বংসের আগে শুভ-অশুভ শক্তির মধ্যে অন্তিম লড়াই বাধবে। দৈনিকটির মতে, সম্ভবত ‘ভারত অভিযানের’ লক্ষ্যেই আইএস পাক তালিবান ও আফগান তালিবানকে নিয়ে নতুন এক সন্ত্রাসবাদী বাহিনী গড়ার ডাক দিয়েছে। ভারতের সঙ্গে লড়াই বাধিয়ে কার্যত দুনিয়া জুড়ে অস্থিরতা তৈরি করাই আইএসের আসল ছক বলে দৈনিকটির অভিমত।
পাকিস্তানের জঙ্গি প্রভাবিত উপজাতি অঞ্চল থেকে পাওয়া ৩২ পৃষ্ঠার এক নথির ভিত্তিতে রচিত হয়েছে ইউএসএ টুডে-র ওই প্রতিবেদন। প্রতিবেদকের দাবি, আমেরিকান মিডিয়া ইনস্টিটিউটে (এএমআই) আসা উর্দুতে লিখিত নথিটি পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই করা হয়েছে। মোস্তাফা সামদানি নামে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক- অনুবাদককে দিয়ে সেটি ইংরেজিতে অনুবাদও করানো হয়।
এবং পাঠোদ্ধারের পরে পরিষ্কার, আইএস ভারতে তীব্র আঘাত হানার প্রস্তুতিতে বেশ খানিকটা এগিয়ে গিয়েছে। ‘‘ভারতের সঙ্গে আইএস যুদ্ধ শুরু করলে সেটা শেষমেশ তাদের সঙ্গে আমেরিকার এক বিধ্বংসী যুদ্ধের পথ খুলে দেবে।’’— মন্তব্য প্রতিবেদনের। দৈনিকটি জানাচ্ছে, ‘ইসলামিক স্টেট খিলাফতের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, পয়গম্বরের চোখে খিলাফত’ শীর্ষক ওই নথিতে বলা হয়েছে, ‘যদি আমেরিকা তার সব মিত্রদেশকে সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধ করে (নিঃসন্দেহে
সেটাই করবে) তা হলে দুনিয়ার মুসলমানেরা ঐক্যবদ্ধ হবে। ফলে শুরু হবে অন্তিম লড়াই।’
জানা গিয়েছে, আমেরিকার তিন জন অভিজ্ঞ গোয়েন্দা অফিসার নথিটি খুঁটিয়ে দেখে তার বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন। ওঁদের যুক্তি: এতে আইএসের নিজস্ব কিছু চিহ্ন নজরে এসেছে। উপরন্তু লেখার ধরন ও ধর্মীয় শব্দ ব্যবহারের কায়দা পুরোপুরি আইএস-ঘরানার। মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ-র প্রাক্তন অফিসার ব্রুস রিডেলের বক্তব্য: ভারত আক্রমণের মাধ্যমে আইএস নিজেদের সাংগঠনিক বিস্তার ঘটাতে তৎপর। তেমনটা হলে দক্ষিণ এশিয়ার স্থায়িত্ব বিপন্ন হবে। ব্রুসের কথায়, ‘‘দক্ষিণ এশিয়ার জেহাদিদের কাছে ভারত হল রক্ত ঝরানোর পবিত্র জায়গা।’’
প্রসঙ্গত, মার্কিন দৈনিকটি জানিয়েছে, এএমআই ওই নথি পেয়েছে এমন এক পাকিস্তানির হেফাজত থেকে, যার সঙ্গে পাক তালিবানের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। যদিও ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ ব্যক্তিটির পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
ফাঁস হওয়া নথির ভিত্তিতে ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন গোয়েন্দা এজেন্সি সিঁদুরে মেঘ দেখছে। তাদের ধারণা, বিবিধ গোষ্ঠীতে বিভক্ত পাক তালিবান ও আফগান তালিবানকে এক ছাতার তলায় আনতে আইএস উঠে-পড়ে লেগেছে। এমনকী, আল কায়দাকেও পাশে চাইছে। বস্তুত আইএস এখন খিলাফত বা ধর্মীয় সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র অধিপতি হিসেবে নিজেদের জাহির করছে। ‘যত ক্ষণ না তামাম দুনিয়া দখল করে প্রতিটি শত্রুর ধড়-মাথা আলাদা করা যাচ্ছে, তত ক্ষণ খিলাফত জারি থাকবে। এই সত্য মেনে নেওয়া উচিত। খুব তেতো হলেও এটা গিলতে হবে।’— বলা হয়েছে নথিতে।
মার্কিন প্রতিক্রিয়া কী?
হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের উপ-মুখপাত্র অ্যালিস্টার ব্যাসকে এএমআই-কে বলেছেন, ‘‘আমরা বিলক্ষণ জানি, আফগানিস্তানে আইএস মনোভাবাপন্ন জঙ্গিরা সক্রিয়। তবে নজরদারি চলছে। আমরা দেখব, দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি যেন বিঘ্নিত না হয়।’’
আইএস প্রভাবের ছোঁয়াচ অবশ্য ভারতেও লেগে গিয়েছে। মুম্বইয়ের কল্যাণ এলাকার চার যুবক যে ইরাক-সিরিয়ায় গিয়ে আইএসের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পুরোদস্তুর লড়াই করেছে, সেটা এ দেশের গোয়েন্দারা জানতে পেরেছিলেন। গত বছর তারা দেশে ফিরলে গ্রেফতার হয়। গত ২০ মে এনআইএ ওই মামলায় চার্জশিট দিয়ে দাবি করে, অন্য কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনের মদতে আইএস ভারতে হানাদারির ছক কষছে বলে ধৃতেরা জেরায় কবুল করেছে। অন্য দিকে কলকাতা বিমানবন্দর এলাকার বাসিন্দা মেহেদি মসরুর বিশ্বাসকে গত বছর বেঙ্গালুরু পুলিশ গ্রেফতার করেছিল— আইএসের হয়ে ‘প্রভাবশালী’ ট্যুইটার অ্যাকাউন্ট খোলার অভিযোগে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক গোড়ায় আইএসকে তেমন গুরুত্ব না-দিলেও পরে পশ্চিমবঙ্গ-সহ দশটি রাজ্যের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়, নতুন এই বিপদ ঠেকাতে একটি ‘সুসংহত জাতীয় কৌশল’ তৈরি হবে। দিল্লির কর্তাদের একাংশের এ-ও অনুমান, পাকিস্তান বা অন্য কোনও দেশ থেকে পরমাণু অস্ত্র কেনার লক্ষ্যে বিপুল অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করছে আইএস।
ভারত আক্রমণের ‘প্রস্তুতি’র সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক আছে কি না, গোয়েন্দারা এখন তা-ও খতিয়ে দেখছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy