Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

কনসুলেটেই খুন খাশোগি, মানল সৌদি

আঙ্কারা জানিয়েছে, নিজেদের তদন্ত-রিপোর্ট শীঘ্রই গোটা দুনিয়াকে জানাবে তারা। ফুঁসছে ওয়াশিংটনেরও একাংশ। সেনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম টুইট করেছেন, ‘‘সৌদির নয়া বিবৃতিতে আমি সন্দিহান বললে নেহাতই কম বলা হয়।’’

জামাল খাসোগি।

জামাল খাসোগি।

রিয়াধ
সংবাদ সংস্থা  শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৮ ০০:৩৩
Share: Save:

বচসা থেকে হাতাহাতি। তার জেরে খুন। সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে সৌদি কনসুলেটেই খুন করা হয়েছিল বলে অবশেষে মানল সে দেশের প্রশাসন। তাঁর ‘নিখোঁজ’ হওয়ার ১৮ দিন পরে আজ সৌদি বিদেশ মন্ত্রক টুইট করে জানায়ে, ১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে তারা। বহিষ্কার করা হয়েছে প্রশাসনের পাঁচ শীর্ষ কর্তাকে। যাঁদের মধ্যে দু’জন যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। তা হলে কি রাজ পরিবারের নির্দেশেই খুন করা হয়েছিল খাশোগিকে? প্রশাসন মুখ না খুললেও প্রশ্নটা ফের উঠেই গেল।

২ অক্টোবর খাশোগিকে শেষ বার দেখা গিয়েছিল তুর্কি শহর ইস্তানবুলের সৌদি কনসুলেটে ঢুকতে। তুরস্ক তখন থেকেই বলে আসছে, রাজ পরিবারের সমালোচক হওয়ার কারণেই খাশোগিকে খুন করেছে সৌদি সরকার। খাশোগি-রহস্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। সংবাদমাধ্যমের একাংশ আবার বলছে, চাপে রেখে সৌদিকে মুখ খুলতে বাধ্য করলেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এর্দোয়ানই। দু’টো সম্ভাবনার কথা বলছেন কূটনীতিকেরা। প্রথমত, পশ্চিম এশিয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বীকে এগোতে না দেওয়া। আর দ্বিতীয়ত, হোয়াইট হাউসের সুনজরে আসা। এ-ও শোনা যাচ্ছে যে, তুরস্ক কোনও ভাবে যদি এ যাত্রায় রাজ পরিবারকে বাঁচিয়ে দেয়, সেই ‘ক্ষতিপূরণ’ দিতেও তৈরি রিয়াধ।

কিন্তু খাশোগির দেহ কোথায়? তুরস্কের দাবি, খুনের পরে সাংবাদিকের দেহ টুকরো-টুকরো করে কেটে জঙ্গলে পুঁতে দিয়েছে ঘাতকেরা। গত কালই এক তুর্কি অফিসার সংবাদমাধ্যমকে জানান, সে দিন খাশোগি কনসুলেটে ঢোকার কিছু ক্ষণ পরে দু’টো গাড়ি সেখান থেকে বার হয়। একটি যায় বেলগ্রেডের বনভূমির দিকে, অন্যটি ইয়ালোভা শহরে।

ওই অঞ্চল দু’টিতে তল্লাশি হয়েছে কি না, তা স্পষ্ট করেনি সৌদি প্রশাসন। শুধু জানিয়েছে, সে দিন কনসুলেটে উপস্থিত সব কর্মচারীকেই জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে তারা। কিন্তু এত দিন পরে কেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। প্রশ্নের মুখে যুবরাজের ভূমিকাও। আজ রিয়াধ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, রাজা সলমন তদন্ত কমিশন গড়ার কথা বলেছেন। কূটনৈতিক শিবিরের একাংশ বলছেন, তদন্ত সঠিক পথে এগোলে বিপাকে পড়বেন সৌদি যুবরাজ। কারণ, খাশোগি-খুনে নাম জড়িয়েছে মহম্মদ বিন সলমনের মুখ্য পরামর্শদাতা সৌদ আল-কাহতানি এবং গোয়েন্দা বিভাগের সহকারী-প্রধান আহমেদ আল-আসিরির। বহিষ্ক়ৃত এই দুই কর্তাই যুবরাজের ঘনিষ্ঠ। গত বছর এই কাহতানিকেই বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘আমি রাজা এবং যুবরাজের আজ্ঞাবহ কর্মচারী মাত্র।’’ তা হলে কি খাশোগি-খুনেও তিনি রাজ পরিবারের নির্দেশ মেনেই এগিয়েছিলেন? তুরস্কের দাবি, খাশোগিকে ‘শিক্ষা দিতে’ যে ভাবেই হোক দেশে ফেরানোর ছক কষছিল রিয়াধ। সমালোচকদের ‘ব্ল্যাকলিস্ট’ করার দায়িত্বে থাকা কাহতানিকে এই কাজের ভারও দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি তুর্কি অফিসারদের।

তুরস্কের দাবি, সাংবাদিককে খুন করতেই সে দিন সৌদি আরব থেকে ১৫ জনের একটি দল আসে ইস্তানবুলে। কাজ সেরেই তারা পালায়। অন্তত ১২ জন সৌদি সেনার সদস্য বলেও দাবি করেছে আঙ্কারা।

আঙ্কারা জানিয়েছে, নিজেদের তদন্ত-রিপোর্ট শীঘ্রই গোটা দুনিয়াকে জানাবে তারা। ফুঁসছে ওয়াশিংটনেরও একাংশ। সেনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম টুইট করেছেন, ‘‘সৌদির নয়া বিবৃতিতে আমি সন্দিহান বললে নেহাতই কম বলা হয়। এখন ওরা কনসুলেটে মারামারির কথা বলছে। অথচ রাজা বা যুবরাজ এ সবের কিছুই জানতেন না, এটাও মেনে নিতে হবে?’’

রাজ পরিবারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর আর্জি জানিয়েছে প্যারিসের ‘রিপোটার্স উইদাউট বর্ডার’ সংগঠনও। তাদের কথায়, ‘‘এর পরেও সৌদি আরবকে ছেড়ে দেওয়ার অর্থ, ওদের হাতে খুনের লাইসেন্স তুলে দেওয়া।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jamal Khashoggi Murder Saudi Arabia Controversy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE