Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
জুডিথ অপহরণ

মুক্তিপণের তত্ত্বই জোর পাচ্ছে তদন্তে

চার দিন কেটে গেলেও কাবুলে অপহৃত কলকাতার মেয়ে জুডিথ ডিসুজার কোনও খোঁজ মিলল না। তদন্তকারীদের তরফে যেটুকু সূত্র মিলেছে, তাতে টাকার জন্য অপহরণের সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে করা হচ্ছে।

জুডিথ ডিসুজার আনন্দ পালিত রোডের বাড়িতে সীতারাম ইয়েচুরি ও সুজন চক্রবর্তী। রবিবার সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।

জুডিথ ডিসুজার আনন্দ পালিত রোডের বাড়িতে সীতারাম ইয়েচুরি ও সুজন চক্রবর্তী। রবিবার সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৬ ০৯:১৭
Share: Save:

চার দিন কেটে গেলেও কাবুলে অপহৃত কলকাতার মেয়ে জুডিথ ডিসুজার কোনও খোঁজ মিলল না। তদন্তকারীদের তরফে যেটুকু সূত্র মিলেছে, তাতে টাকার জন্য অপহরণের সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও মুক্তিপণ চেয়ে রবিবার রাত পর্যন্ত ডিসুজা পরিবার, জুডিথের এনজিও বা ভারতীয় হাইকমিশনে কোনও ফোন বা বার্তা আসেনি। ফলে ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে।

এন্টালির মেয়ে জুডিথের অপহরণ নিয়ে প্রথম থেকেই দু’টি আশঙ্কা ছিল। এক, মুক্তিপণের জন্য অপহরণ। দুই, কাবুলে জুডিথ মহিলাদের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করছিলেন। ফলে তাঁর উপরে তালিবানের রাগ ছিল, সে কারণেই তাঁকে অপহরণ করা হয়েছে। দ্বিতীয়টি হলে জুডিথকে ফিরে পাওয়া যে কষ্টের, তা কাবুল সরকারের মতো ভারতীয় হাইকমিশনের অফিসারেরাও অনেকেই মেনে নিচ্ছেন।

কিন্তু বৃহস্পতিবার অপহরণের পর থেকে কাবুলের গোয়েন্দারা জুডিথের গাড়িচালককে জেরা করে এবং নানা ভাবে তদন্ত চালিয়ে যে সব তথ্য পান, তা থেকে মুক্তিপণের জন্য অপহরণের তত্ত্বটাই বেশি শক্তপোক্ত হচ্ছে। আর সেটাই স্বস্তির বলে মনে করছে দূতাবাস।

রবিবার কাবুল থেকে ফোনে ভারতীয় হাইকমিশনার মনপ্রীত ভোরা আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট করে এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়। প্রাথমিক ভাবে পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ থেকে মুক্তিপণের জন্যই অপহরণ বলে মনে হচ্ছে। কাবুল সরকার যে ভাবে তদন্ত করছে, তাতে আমরা খুশি।’’ কোনও সূত্রই কি পাওয়া যায়নি এখনও? মনপ্রীত বলেন, ‘‘কাবুলের পুলিশ হয়তো কিছু পেয়েছে। কিন্তু তা আমাদের জানায়নি। আমাদের সঙ্গে তদন্তকারী সংস্থা শুধু নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলছে।’’

জুডিথকে ফেরাতে সরকারি তৎপরতায় খুশি তাঁর পরিবার। রবিবার সকালেও বিদেশ মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব পর্যায়ের এক অফিসার জুডিথের দাদা জেরোমকে ফোন করে অনুসন্ধানের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি জানান। কাবুলে ভারতীয় দূতাবাসের আধিকারিকদের সঙ্গে হোয়াট্‌সঅ্যাপে কথা হয় জুডিথের দিদি অ্যাগনেসের।

জুডিথের দাদা জেরোম এ দিন বলেন, ‘‘আমরা বিদেশ মন্ত্রক, কাবুলে ভারতীয় দূতাবাস ও জুডিথ যাদের হয়ে কাজ করতে গিয়েছিলেন, সেই আগা খান ফাউন্ডেশনের সঙ্গে নাগাড়ে যোগাযোগ রেখে চলেছি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ বার বার বলা হয়েছে, জুডিথকে ফিরিয়ে আনার যাবতীয় প্রক্রিয়া জারি রয়েছে। তবে বিষয়টা স্পর্শকাতর। বিদেশ মন্ত্রক একটা নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে কাজ করে। এই পর্যায়ে সব কিছু খুলে বলা সম্ভব নয়।’’

এ দিন দুপুরে জুডিথের এন্টালির বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিজনদের সঙ্গে দেখা করেন রাজ্যসভার সিপিএম সাংসদ সীতারাম ইয়েচুরি। তিনি আবার বিদেশ মন্ত্রকের সংসদীয় উপদেষ্টা কমিটির সদস্য। সীতারামের সঙ্গে ছিলেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য এম এ বেবি, রাজ্যসভার সিপিএম সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী দেবেশ দাশ।

পরে ইয়েচুরি বলেন, ‘‘প্রধানত সংসদীয় কমিটির সদস্য হিসেবে ওই পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে, ওঁদের কথা শুনতে গিয়েছিলাম।’’ তাঁর কথায়, ‘‘জুডিথ অপহরণের পিছনে বিদেশ মন্ত্রক কয়েকটি সম্ভাবনার কথা বলছে। আইএস বা তালিবান এই ঘটনার পিছনে থাকতে পারে। তবে বিদেশ মন্ত্রককে প্রধানত দুশ্চিন্তায় রেখেছে কাবুলে বিভিন্ন অপহরণকারী-চক্রের বাড়বাড়ন্ত। মুক্তিপণের লোভে কাবুলে অপহরণ বাড়ছে বলে খবর। তবে এখনও পর্যন্ত কী হয়েছে, তা পরিষ্কার নয়।’’ জুডি়থকে ফেরানোর ব্যাপারে বিদেশ মন্ত্রকের আরও সক্রিয় হয়ে আফগান সরকারের উপর চাপ বাড়ানো উচিত বলে এ দিন মন্তব্য করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।

এ দিন সকালে জুডিথের কলেজ সেন্ট জেভিয়ার্সে তাঁর ঘনিষ্ঠ কয়েক জন ছাত্রী একটি বিশেষ প্রার্থনাসভার ডাক দিয়েছিলেন। জুডিথদের বাড়ির কাছই ফতিমা প্যারিশে সেই ‘স্পেশাল সার্ভিস’-এ যোগ দিয়েছিলেন জুডিথের দিদি অ্যাগনেস এবং মা।

গত কয়েক দিনে মেয়েকে নিয়ে উৎকণ্ঠা ও বাড়িতে নিয়মিত সংবাদমাধ্যমের জটলার ধাক্কায় ঝড় বয়ে গিয়েছে ডিসুজা পরিবারের উপরে। জেরোম এ দিন বলেন, ‘‘আমার মা-বাবা চুপচাপ ধরনের। গত ক’দিনে বাবার কান্নার ছবি পর্যন্ত ন্যাশনাল নিউজ চ্যানেলে উঠে এসেছে! বাবার সেটা ভাল লাগেনি। বাবা-মা দু’জনই থম মেরে গিয়েছেন।’’ টুইটারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে বোনকে উদ্ধার করার আর্জি গতকালই জানিয়েছিলেন জেরোম। এ দিন টুইটারে পরিবারের গত বড়দিনের সময়ে সবার এক সঙ্গে শেষ ছবিটি পোস্ট করে জেরোম লিখেছেন, ‘‘উই ওয়ান্ট টু বি টুগেদার অ্যাজ আ ফ্যামিলি এগেইন। প্লিজ হেল্প আস টু ডু সো।’’

তবে এই ঘটনার পরে সকলেই যে ভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাতে আপ্লুত জেরোম। জুডিথ ও জেরোম, দু’জনেই মুম্বইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সেস-এর পড়ুয়া। ওই প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন ডিরেক্টর পরশুরাম নিজেও কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে চিঠি লিখে এবং দূতাবাসে তাঁর ঘনিষ্ঠ অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করে জুডিথকে ফেরানোর ব্যাপারে সাহায্য চেয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Judith kabul abduction case ransom
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE